Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Kumarganj Gang Rape and Murder

ফাঁকা বাড়িতে ক্ষুব্ধ নেতারা

ঠিক যে ভাবে দাড়িভিটের ঘটনার পরে নিহতের বাড়িতে পৌঁছেছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। কিন্তু এ বার বিজেপি প্রতিনিধিরা গিয়ে কাউকে পেলেন না বাড়িতে। 

মুখোমুখি: পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: অমিত মোহান্ত

মুখোমুখি: পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: অমিত মোহান্ত

নীহার বিশ্বাস
কুমারগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০৫
Share: Save:

ঠিক ছিল, শনিবার সকালে কুমারগঞ্জের নির্যাতিতার বাড়িতে যাবেন লকেট চট্টোপাধ্যায় ও বিজেপির প্রতিনিধিরা। ঠিক যে ভাবে দাড়িভিটের ঘটনার পরে নিহতের বাড়িতে পৌঁছেছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। কিন্তু এ বার বিজেপি প্রতিনিধিরা গিয়ে কাউকে পেলেন না বাড়িতে।

পড়শিরা জানালেন, মেয়েটির বাড়ির লোকেদের জেলাশাসকের দফতরে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। সেখানে তাঁদের ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকাও দেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর। এই ঘটনা দেখার পরে জেলার রাজনৈতিক মহল বলছে, লকেটকে টেক্কা দিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ।

বিজেপির অভিযোগ, শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার সুযোগ কাড়তেই তড়িঘড়ি সরিয়ে নেওয়া হয় গণধর্ষণের পরে খুন হওয়া তরুণীর বাবা-মাকে। শনিবার সকালে বিজেপি প্রতিনিধিদল পৌঁছনোর আগেই পুলিশ নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিজনদের নিয়ে বালুরঘাটে চলে যায়। ওই ঘটনার জেরে বিজেপির তরফে কুমারগঞ্জ থানায় নির্যাতিতার পরিবার

নিখোঁজ হয়েছেন, এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও পুলিশ ওই তরুণীর পরিবারকে নিয়ে আসার কথা স্বীকার করেনি।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কুমারগঞ্জের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে শনিবার সকালে দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার ও যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দেখা করতে যায়।

ওই পরিবারের প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি, বিজেপি নেতারা আসছেন শুনে শুক্রবার রাতেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে পরিজনদের জেলাশাসকের দফতরে নিয়ে গিয়ে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দেন। নির্যাতিতার পরিবার যাতে কোনও ভাবেই বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কথা না বলেন, তা নিয়েও সতর্ক করা হয়। অভিযোগ, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার ভোরেই পুলিশ গিয়ে ওই তরুণীর পরিজনদের বালুরঘাটে নিয়ে যায়। নির্যাতিতার বাড়িতে কাউকে না পেয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ তোলেন লকেট। স্থানীয় সূত্রে খবর, নির্যাতিতার কাকিমা লকেটকে জানান, সকালেই পুলিশের গাড়িতে তাঁদের কুমারগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার পরেই ওই মহিলাকে নিয়ে লকেটরা কুমারগঞ্জ থানায় যান। বিজেপি প্রতিনিধিদলের আসার খবরে গোটা থানা পুলিশে ঘিরে ফেলা হয়।

বিজেপির অভিযোগ, প্রতিনিধিদলকে থানায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। দলের নেতারা দাবি করেন, হয় তাঁদের নির্যাতিতার পরিবারের খোঁজ দিতে হবে।না হলে নিখোঁজ ডায়েরি করতে হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিজনদের খোঁজ তারা জানে না বলে দাবি করে পুলিশ। বিজেপির দাবি অনুযায়ী নিখোঁজ ডায়েরিও নিতে অস্বীকার করেন। ঘন্টাখানেক পুলিশের সঙ্গে এ নিয়ে বচসার পরে পুলিশ সাদা কাগজে নিখোঁজ ডায়েরি নেয়।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরে লকেট সদলবলে ফুলবাড়িতে গিয়ে পথসভা করেন। বাড়িতে গিয়েও নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা না করতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাতের অন্ধকারে পুলিশকে দিয়ে পরিজনদের তুলে নিয়ে লুকিয়ে রেখেছে। আমরা বিষয়টি সংসদে তুলব। রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এর জবাব মুখ্যমন্ত্রীকে দিতে হবে।’’ জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, ‘‘নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছে। তদন্ত হবে। ওই পরিবার জেলাশাসকের দফতরে গিয়েছিলেন।’’

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, নির্যাতিতার পরিবার জেলাশাসকের দফতরে পৌঁছনোর পরে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন জেলাশাসক নিখিল নির্মল, তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের ভাইস চেয়ারম্যান অর্পিতা ঘোষ। নির্যাতিতার পরিবারের হাতে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়।

অভিযোগ নিয়ে অর্পিতা বলেন, ‘‘বিজেপি ঘৃণ্য রাজনীতি করছে। জেলার মানুষ জানেন ওই পরিবার জেলাশাসকের অফিসে ছিলেন। তার পরেও এই অভিযোগ হাস্যকর। আমরা ওই পরিবারের পাশে রয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE