Advertisement
E-Paper

একুশের মঞ্চ তাক করেই কামান কুণালের

একদা তৃণমূলের শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে অন্যতম কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। সেই সাংসদ কুণাল ঘোষই এ বার কটাক্ষে বিঁধলেন শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানকে। সারদা কেলেঙ্কারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বারবার তোপ দেগেছেন রাজ্যসভার ওই সদস্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০৩:২০
ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কুণাল ঘোষ। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কুণাল ঘোষ। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

একদা তৃণমূলের শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে অন্যতম কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। সেই সাংসদ কুণাল ঘোষই এ বার কটাক্ষে বিঁধলেন শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানকে।

সারদা কেলেঙ্কারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বারবার তোপ দেগেছেন রাজ্যসভার ওই সদস্য। সোমবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস মামলার তদন্তকারী অফিসার শৈবালকুমার ত্রিপাঠী এবং সিবিআইয়ের কৌঁসুলির উদ্দেশে কুণালের মন্তব্য, ‘‘কাল (মঙ্গলবার) ধর্মতলায় চলে যান। সারদার সব সুবিধাভোগীকে মঞ্চে পাবেন!’’ বিচারক রুদ্রপ্রসাদ রায়ের সামনেই এ কথা বলেন তিনি। তাঁর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের তরফে পাল্টা কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তাদের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘এক জন জেলবন্দি আসামি কী বললেন, তা নিয়ে আমরা কিছু মন্তব্য করব না।’’

তৃণমূলের শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানের সঙ্গে কুণালের ‘সম্পর্ক’ অবশ্য অনেকেই ভুলতে পারেননি। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে ব্রিগেডে শহিদ দিবস পালন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তখন কুণাল ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতার ঘনিষ্ঠতম বৃত্তের অন্যতম সদস্য। সে-দিন ব্রিগেডে অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। তিনিই ছিলেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক। এ দিন তাই কুণালের মন্তব্য শুনে অনেকে বলছেন, সারদা মামলায় না-ফাঁসলে কুণাল এ বারেও হয়তো ধর্মতলার ওই মঞ্চে থাকতেন। জেলবন্দি হিসেবে তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে ওই সমাবেশকে কটাক্ষ করতেন না। আবার জেলবন্দি বলে তাঁকেও বিদ্রুপে বিদ্ধ হতে হতো না।

কুণাল এ দিন শুধু কটাক্ষ করেই থেমে যাননি। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার দাবিতে জেলের মধ্যে অনশনও শুরু করেছেন তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া ওই সাংসদ। এ দিন বিকেলে কলকাতার নগর দায়রা আদালত থেকে জেলে যাওয়ার পথে তিনি বলেন, ‘‘রবিবার দুপুর ও রাতের খাবার খাইনি। এ দিন সকাল থেকে জলস্পর্শ করিনি।’’ অনশনের কথা এজলাসেও জানিয়েছেন কুণাল। বিচারকের কাছে তাঁর আর্জি, জেল-কর্তৃপক্ষ যাতে তাঁকে জোর খাওয়ানোর বা স্যালাইন দেওয়ার চেষ্টা না-করেন, সেই ব্যবস্থা করা হোক। জেল থেকে তাঁকে যেন সরকারি হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া না-হয়। কুণালের ইচ্ছে, তিনি অনশনরত অবস্থায় জেলের অন্য বন্দিদের মধ্যেই থাকবেন।

সারদা গোষ্ঠীর গ্রুপ মিডিয়া সিইও কুণালকে ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেফতার করেছিল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। সেই থেকে তিনি জেলেই আছেন। যদিও সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার, ব্যবসায়ী সৃঞ্জয় বসু, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত (নিতু) সরকার-সহ অনেকেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। জামিন না-পেলেও জেলের বদলে দীর্ঘদিন এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সারদা কাণ্ডে ধৃত, রাজ্যের পরিবহণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবাল। সেই সব কথা তুলে কুণাল এ দিন আদালতে বলেন, ‘‘কেউ হাসপাতালে থাকবেন। কেউ থাকবেন নিজের পছন্দের নার্সিংহোমে। আর আমাকেই শুধু দিনের পর দিন আটকে রাখা হবে!’’ তিনি যে-অনশন শুরু করেছেন, তার পিছনে এর প্রতিবাদও রয়েছে বলে জানান ওই সাংসদ।

তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হলেও কুণালের রাজ্যসভার সদস্য-পদ বহাল রয়েছে। তিনি যাতে সংসদের অধিবেশনে যোগ দেন, সেই জন্য রাজ্যসভার সচিবালয় থেকে সম্প্রতি চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রেসিডেন্সি জেলে (ওই জেলেই আছেন কুণাল)। বিচারক রুদ্রপ্রসাদ রায়ের এজলাসে কুণাল নিজেই নিজের হয়ে সওয়াল করার সময় সেই চিঠির প্রসঙ্গ তুলে ২০ ঘণ্টার অন্তর্বর্তী জামিনের আর্জি জানান। তাঁর বক্তব্য, আজ, মঙ্গলবার রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেখানে হাজির থাকার জন্য ভোর ৪টেয় তাঁকে জেল থেকে ছাড়া হোক। তিনি বিমানে দিল্লি যাবেন এবং ফিরে উত্তর কলকাতার বাড়িতে অসুস্থ মাকে দেখে রাত ১২টার মধ্যে জেলে ফিরে আসবেন। ‘‘প্রয়োজনে সিবিআই, কারা দফতর এবং রাজ্য পুলিশের প্রতিনিধিকেও সঙ্গে দেওয়া হোক,’’ আর্জিতে বলেন কুণাল।

ওই আবেদনের বিরোধিতা করে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি জানান, অভিযুক্তের আর্জি মানা হলে তদন্তের ক্ষতি হতে পারে। যদিও এতে তদন্তের ঠিক কী ধরনের ক্ষতি হবে, তার সবিস্তার ব্যাখ্যা দেয়নি সিবিআই।

কুণালের অন্তর্বর্তী জামিনের আর্জির বিষয়টি এ দিন ওঠে নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক শুভ্রা ঘোষের এজলাসেও। ওই সাংসদ যাতে রাজ্যসভার অধিবেশনে যেতে পারেন, সেই জন্য সেখানে সওয়াল করেন তাঁর দুই আইনজীবী অমিত ভট্টাচার্য ও অয়ন চক্রবর্তী। তাঁরা জানান, রাজ্যসভার অধিবেশনে কিছু বিল নিয়ে ভোটাভুটি রয়েছে। বিশেষ করে সেই জন্য কুণালকে উপস্থিত থাকতে বলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কুণাল যে-হেতু বিচারাধীন বন্দি হিসেবে জেলে রয়েছেন, তাই আদালত তাঁকে সংসদে যোগদানের অনুমতি দিতে পারে। সেখানেও এই আবেদনের বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের কৌঁসুলি। শেষ পর্যন্ত কুণালের আইনজীবীদের আর্জি খারিজ করে দেন বিচারক।

এ দিন কুণালের সঙ্গে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে। তিন জনকেই ৩ অগস্ট পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

kunal ghosh kunal ghosh 21st july saradha scam 21st july 21st july saradha scam kunal missile kunal fire kunal ghosh missile 21st july rally 21se july rally kunal on 21st july
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy