Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঘুমের ১৫টি বড়ি খেয়ে নেন একসঙ্গে

প্রেসিডেন্সি জেলে কুণাল ঘোষের সেলে ১৫টি ঘুমের ট্যাবলেটের একটি খালি পাতা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। আত্মহত্যার চেষ্টায় তিনি ০.৫ মিলিগ্রামের ওই ১৫টি অ্যালপ্রাজোলাম ট্যাবলেটই একসঙ্গে খেয়েছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, কুণাল জেলের বাইরে থেকে ওই ওষুধ জোগাড় করেছিলেন। পুলিশ জানায়, ১০ নভেম্বর আদালতে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেওয়ার আগেই তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ওই ট্যাবলেটের একটি গোটা পাতা জেলের বাইরে কারও কাছ থেকে পেয়ে যান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৫
Share: Save:

প্রেসিডেন্সি জেলে কুণাল ঘোষের সেলে ১৫টি ঘুমের ট্যাবলেটের একটি খালি পাতা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। আত্মহত্যার চেষ্টায় তিনি ০.৫ মিলিগ্রামের ওই ১৫টি অ্যালপ্রাজোলাম ট্যাবলেটই একসঙ্গে খেয়েছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, কুণাল জেলের বাইরে থেকে ওই ওষুধ জোগাড় করেছিলেন।

পুলিশ জানায়, ১০ নভেম্বর আদালতে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেওয়ার আগেই তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ওই ট্যাবলেটের একটি গোটা পাতা জেলের বাইরে কারও কাছ থেকে পেয়ে যান। প্রশ্নের মুখে কুণাল তা স্বীকারও করেছেন বলে পুলিশের দাবি। তা ছাড়া কুণালের সেলে পাওয়া ঘুমের ১৫টি বড়ির খালি স্ট্রিপের ব্যাচ নম্বরের সঙ্গে জেলের ওষুধ-খাতায় উল্লিখিত ওষুধের ব্যাচ নম্বরও মেলেনি। কাজেই ওই ওষুধ যে জেলের বাইরে থেকেই এসেছিল, সেই বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত।

ওই পরিমাণ ঘুমের ওষুধ একসঙ্গে খেলে মৃত্যুর আশঙ্কা কতটা?

মেডিসিনের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, ওই শ্রেণির ১৫টি বড়ি খেলে সাধারণ ভাবে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে না। কারণ, সে-ক্ষেত্রে মোট ৭.৫ মিলিগ্রাম অ্যালপ্রাজোলাম শরীরে ঢোকার কথা। “দিনে ১০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত অ্যালপ্রাজোলামও কিছু কিছু রোগীকে দেওয়া যেতে পারে,” বললেন ওই চিকিৎসক। এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় মামলা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের জেল। কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টা থেকে রাত দেড়টার মধ্যে কুণাল ঘুমের বড়ি খান। তাঁর সেলের সামনে নিযুক্ত দুই কারারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, রাত ১০টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত কুণাল পত্রপত্রিকা পড়েন। সেলেই নৈশাহার সারেন ১০টার আগে। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “পৌনে ১২টার পরে কুণাল রক্ষীদের বলেন, ‘এ বার আমি ঘুমোব। আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।’ তার পরেই কুণাল বড়ি খান বলে মনে হচ্ছে।” কারারক্ষীদের নজরদারিতে গাফিলতি ছিল, নাকি কুণাল কৌশলে তাঁদের চোখকে ফাঁকি দিয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ জেনেছে, রাত দেড়টা নাগাদ জেলের চিফ ডিসিপ্লিনারি অফিসার নজরদারি চালাচ্ছিলেন। আত্মহত্যার হুমকি ছিল বলেই কুণালকে সেলের বাইরে থেকে খুঁটিয়ে দেখছিলেন ওই কারাকর্তা। তাঁর মনে হয়েছিল, কুণাল অস্বাভাবিক রকম নিঃসাড়ে ঘুমোচ্ছেন। তার পরে চিকিৎসক এলে কুণাল জানান, তিনি বেশ কয়েকটি ঘুমের বড়ি খেয়েছেন।

লালবাজার সূত্রের খবর, কুণালের ঘুমের বড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রে জেল-কর্তৃপক্ষের যে তেমন ভূমিকা নেই, সেটা প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। কুণালকে জেরা করে পাওয়া তথ্য ইঙ্গিত করছে সে-দিকেই। কিন্তু বড়ি লুকিয়ে রাখা এবং কুণালের ওষুধ সেবনের প্রশ্নে জেল-কর্তৃপক্ষ তাঁদের গাফিলতির দায় এড়াতে পারেন না বলে তদন্তকারীদের অভিমত। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তিন জনের তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। লালবাজার প্রাথমিক রিপোর্ট দেবে স্বরাষ্ট্রসচিকেই।

কী ভাবে ওষুধ পেলেন কুণাল?

পুলিশকে তা জানাতে অস্বীকার করেছেন ওই সাংসদ। পুলিশের ধারণা, জেল থেকে কুণালকে বারবার আদালতে, কখনও বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তেমনই কোনও জায়গায় কুণালের কোনও ‘শুভানুধ্যায়ী’ তাঁর কাছে ওষুধ পৌঁছে দেন। তদন্তকারীদের বক্তব্য, সাংসদ বলে কুণালকে এত দিন ‘স্ট্রিপ সার্চ’ বা বিবস্ত্র করে তল্লাশি থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। তাই ওষুধ নিয়ে জেলে ঢুকতে পেরেছিলেন কুণাল। জেলে ট্যাবলেট লুকিয়ে রাখাটা কোনও সমস্যাই নয় বলে মনে করছে পুলিশ।

কিন্তু কুণাল যে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার পরে সেলের মধ্যেই ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন, সেই ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হচ্ছে কী করে?

তদন্তকারীদের বক্তব্য, কুণাল রাত ১০টা থেকে টানা পৌনে ১২টা পর্যন্ত পত্রপত্রিকা পড়েছেন। তার আগে ০.৫ মিলিগ্রাম ‘পাওয়ার’-এর ১৫টি অ্যালপ্রাজোলাম ট্যাবলেট খেলে তাঁর পক্ষে পত্রিকা পড়া সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের মতে, কোনও পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ ভরা পেটেও অত ঘুমের ওষুধ খেলে এক ঘণ্টার মধ্যেই শরীরে প্রভাব পড়তে শুরু করবে। কিন্তু রক্ষীদের দাবি, কুণাল ঘুমিয়ে পড়ছেন বলে জানানোর পরেও তাঁরা তাঁকে চোখে চোখে রেখেছিলেন। তা হলে কুণাল ওষুধ খেলেন কখন?

পুলিশের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে দু’টো সম্ভাবনা রয়েছে। ১) কারারক্ষীরা ঠিক বলছেন না এবং তাঁদের গাফিলতির সুযোগ নিয়েই কুণাল ওই কাণ্ড করেছেন। ২) কারারক্ষীদের চোখে ফাঁকি দিয়ে কুণাল ঘুমের বড়ি খেয়েছেন। দ্বিতীয়টা কী ভাবে সম্ভব?

তদন্তকারীরা জানান, কুণালের সেলে শৌচকর্মের জন্য একটি ঘেরাটোপ রয়েছে। সেখানে বন্দি হাঁটু গেড়ে বসলে তিনি কী করছেন, সেটা কারারক্ষীদের পক্ষে বাইরে থেকে দেখা সম্ভব নয়। এক পুলিশ অফিসার বলেন, “এটা হতেই পারে যে, কুণাল শৌচকর্মের নামে ওই ঘেরাটোপে উবু হয়ে বসে পড়েন এবং অন্তর্বাস থেকে ওষুধ বার করে মুখে দেন!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE