Advertisement
E-Paper

কুণালকে হাসপাতালে রাখার দাওয়াই শুনতে নারাজ নবান্ন

সেলের ঠান্ডা মেঝেয় কম্বল পেতে শুতে হচ্ছে। সর্বক্ষণ নজরদারির জন্য সিসিটিভি। অথচ সারদার ‘সহযাত্রী’দের অনেকে রয়েছেন হাসপাতালের শয্যায়, কেউ বড় সেলে সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে। তাঁরা অনেক সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছেন। এমনকী বাড়ি থেকে খাদ্য-পানীয় আনাতে বাধা নেই বলেও অভিযোগ। এক যাত্রায় এমন পৃথক ফলে মানসিক ভাবেই ভেঙে পড়েছেন সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত সাংসদ কুণাল ঘোষ।

অত্রি মিত্র ও পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৯

সেলের ঠান্ডা মেঝেয় কম্বল পেতে শুতে হচ্ছে। সর্বক্ষণ নজরদারির জন্য সিসিটিভি। অথচ সারদার ‘সহযাত্রী’দের অনেকে রয়েছেন হাসপাতালের শয্যায়, কেউ বড় সেলে সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে। তাঁরা অনেক সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছেন। এমনকী বাড়ি থেকে খাদ্য-পানীয় আনাতে বাধা নেই বলেও অভিযোগ।

এক যাত্রায় এমন পৃথক ফলে মানসিক ভাবেই ভেঙে পড়েছেন সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত সাংসদ কুণাল ঘোষ। ডাক্তাররা বলছেন, তাঁকে আরও তিন মাস হাসপাতালে রেখে দেওয়া হোক। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন তাতে নারাজ। মাঝখান থেকে বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের কারা-কর্তারা।

এর আগে অনেক বার কুণাল নিজেই অভিযোগ করেছিলেন, ধৃত প্রভাবশালীরা অনেক বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। যা তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না। যেমন মদন মিত্রকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় এসইউভি গাড়ি দেওয়া হয়েছে, কুণালকে চড়ানো হয়েছে পুলিশ ভ্যানে। এখন মনোবিদরাও কুণালকে পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, দিনভর ক্যামেরার নজরদারিতে একা একটা সেলের মেঝেতে শুয়ে শুয়ে তাঁর মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে শরীরেও। এখন তাই কুণালকে কারাগারের ‘সেল’ থেকে সরিয়ে জেলের হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তাতে ভাল ফলও পাওয়া গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক-মনোবিদরা। এই কারণে তাঁকে আরও তিন মাস হাসপাতালেই রাখা উচিত বলে রিপোর্ট দিয়েছেন তাঁরা।

রিপোর্ট হাতে পেয়ে বিপাকে পড়েছেন কারাকর্তারা। কারণ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা চান হাসপাতালে নয়, কারাগারের ‘সেল’-এ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার নজরদারির মধ্যে কুণালকে রাখা হোক। এখন এক দিকে চিকিৎসক এবং মনোবিদদের রিপোর্ট, অন্য দিকে প্রশাসনের কর্তাদের ভিন্নমত শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা জেলকর্তাদের। শেষ পর্যন্ত কুণালকে কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে রীতিমতো ফাঁপরে পড়েছেন তাঁরা।

এ রকম ক্ষেত্রে রেওয়াজটা কী? কারাকর্তারা জানাচ্ছেন, বিচারাধীন সব বন্দি শারীরিক ও মানসিক ভাবে যাতে সুস্থ থাকেন সেটা দেখাই তাঁদের কাজ। আর এই কাজে চিকিৎসকদের রিপোর্টকেই সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এবং সেটাই নিয়ম বলেই জানাচ্ছেন আইনজ্ঞরা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে কারাকর্তাদের অভিযোগ। নাম প্রকাশ না-করে রাজ্য কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, “নির্দেশটা আসলে আসছে খাস নবান্ন-র সর্বোচ্চ মহল থেকে। এক জন বন্দি সেলে থাকবে না হাসপাতালে, তা নিয়ে শীর্ষ স্তর মাথা ঘামাচ্ছে, এমন আগে দেখিনি!”

কিন্তু কুণাল তো এখন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে কোথায় কী ভাবে রাখা হবে, তা নিয়ে রাজ্য সরকার কথা বলছেই বা কেন? প্রশাসনের একাংশ অবশ্য দাবি করছেন, এই পরিস্থিতির জন্য কুণাল নিজেই খানিকটা দায়ী। ঘুমের ওষুধ খেয়ে তিনি যা কাণ্ড বাধিয়েছিলেন, তাতে জেলের মধ্যেকার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের দিকেই আঙুল উঠেছিল। ঘটনাচক্রে যে দশ ফুট বাই দশ ফুট সেলে কুণাল থাকতেন, অন্য বন্দিদের ক্ষেত্রে ওই সেলের মধ্যেই একটি দেওয়াল তুলে শৌচাগারের ব্যবস্থা আছে। কারাকর্তারা জানাচ্ছেন, ঘুমের ওষুধ পর্বের পরে কুণালের জন্য সে ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। দেওয়ালটি ভেঙে শৌচাগারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কুণাল প্রতি মুহূর্তে কী করছেন, তা দেখার জন্য লাগানো হয়েছে তিন-তিনটি ক্যামেরা। এক কারাকর্তার কথায়, “এই অবস্থায় কোনও মানুষ মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারেন না।”

কী বলছেন চিকিৎসক ও মনোবিদরা?

মাসখানেকেরও বেশি সময় প্রেসিডেন্সি জেল হাসপাতালে রয়েছেন কুণাল। গত সপ্তাহে কুণালকে দেখে এসএসকেএম-এর মেডিক্যাল বোর্ডে থাকা মনোবিদ শিখা মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁকে আরও তিন মাস হাসপাতালেই রাখা উচিত। শিখাদেবী বলেন, “হাসপাতালে অন্য রোগীদের সঙ্গে থাকার সুবাদে কুণাল এখন অনেকটা ভাল আছেন। তাই আগামী তিন মাস তাঁকে হাসপাতালেই রাখা উচিত। সেলের মেঝেতে শুয়ে উনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।”

আইনজ্ঞদেরও মত হলো, কুণাল বিচারাধীন বন্দি। এ অবস্থায় সাধারণ জীবনের সুযোগ থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা মানে মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রবীণ আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের কথায়, “ফাঁসির আদেশ হওয়ার আগে পর্যন্ত খুনি আসামিকেও একা রাখার নিয়ম নেই। নজরদারির নামে কুণালকে যে ভাবে রাখা হয়েছিল, তা প্রতিহিংসামূলক আচরণ ছাড়া কিছু নয়।”

কেন? রাজনৈতিক সূত্রের মতে, আদালতে ভিতরে এবং বাইরে কুণাল বারবার মুখ্যমন্ত্রীকে সারদা মিডিয়ার ‘সব চেয়ে বেশি সুবিধাভোগী’ বলে অভিযোগ তুলেছেন। এক কারাকর্তার বক্তব্য, “কেন কুণালের জন্য অন্য ব্যবস্থা তা তো বুঝতেই পারছেন। তবে আর প্রশ্ন করছেন কেন?” পরোক্ষ ভাবে কথাটা মানছেন তৃণমূলের একাংশও। কেউ কেউ অবশ্য ফুট কাটছেন, “আদালতে মুখ খোলার সময় কিন্তু কুণালকে দেখে মানসিক ভাবে অসুস্থ বলে মনে হয় না!”

kunal ghosh ill atri mitra parijat bandyopadhyay saradha scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy