Advertisement
E-Paper

নির্যাতনের প্রতিবাদে শ্বশুরবাড়ির কাছেই বাবাকে নিয়ে আমরণ অনশনে বধূ

গত মার্চ মাসে মগরার বাসিন্দা তরুণকান্তি ঘোষের মেয়ে মণিদীপার সঙ্গে বিয়ে হয় বৈদ্যবাটির এনসিএম রোডের বাসিন্দা তন্ময় সাধুখাঁর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ১৬:৪৯
শ্বশুরবাড়ির এলাকায় বাবার সঙ্গে আমরণ অনশনে গৃহবধূ মণিদীপা ঘোষ সাধুখাঁ। —নিজস্ব চিত্র।

শ্বশুরবাড়ির এলাকায় বাবার সঙ্গে আমরণ অনশনে গৃহবধূ মণিদীপা ঘোষ সাধুখাঁ। —নিজস্ব চিত্র।

প্রেমিকাকে বিয়ে করতে চেয়ে কিছু দিন আগে ধূপগুড়িতে ধর্নায় বসেছিলেন এক প্রেমিক। শেষ পর্যন্ত ওই পাত্রীর সঙ্গেই তাঁর বিয়ে হয়। এ বার শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের প্রতিবাদে হুগলির বৈদ্যবাটিতে বাবাকে নিয়েই প্ল্যাকার্ড হাতে আমরণ অনশনে বসলেন সদ্য বিবাহিতা এক বধূ। শনিবার সকাল থেকে মণিদীপা ঘোষ সাধুখাঁ নামে ওই বধূ প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়েই তাঁর শ্বশুরবাড়ির কাছেই রাস্তার ধারে অনশনে বসেছেন।

গত মার্চ মাসে মগরার বাসিন্দা তরুণকান্তি ঘোষের মেয়ে মণিদীপার সঙ্গে বিয়ে হয় বৈদ্যবাটির এনসিএম রোডের বাসিন্দা তন্ময় সাধুখাঁর। পেশায় স্কুল শিক্ষক তন্ময়ের বাবা বাবলু সাধুখাঁ বৈদ্যবাটি-শেওড়াফুলি পুরসভার কর্মী। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই মণিদীপা নির্যাতনের অভিযোগ তুলতে শুরু করেন সাধুখাঁ পরিবারের বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, এ বিষয়ে একাধিক বার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জেলাশাসক পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায়। পুলিশের মধ্যস্থতায় মীমাংসার কথা জেলাশাসক বললেও মণিদীপার অভিযোগ, কোনও বারই তাতে অংশ নেয়নি সাধুখাঁ পরিবার।

মানসিক অত্যাচারের ফলে মণিদীপা বার বারই অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন বলে দাবি করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও উপায় না দেখে অনশনের রাস্তাকেই বেছে নিয়েছেন বলে এ দিন জানিয়েছেন ওই বধূ। তাঁর সঙ্গে অনশনে বসেছেন বাবা তরুণকান্তি ঘোষও। এ দিন তরুণবাবু বলেন, ‘‘বিয়ের পর থেকেই মেয়ের উপর অত্যাচার করে। ওঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কেন এ রকম করছেন? কোনও কারণই বলতে পারেননি ওঁরা। আমার মেয়েকে অন্য ঘরে রাখা হত। গরমের মধ্যে পাখা খুলে নিয়ে জামাই নিজে এসি ঘরে থাকত। মারধরও করা হয় মেয়েকে। এমনকি বারংবার বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে।’’ নির্যাতনের কারণ হিসাবে তরুণবাবুর দাবি, ‘‘আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চেয়েছিলেন ছেলের বাবা। আমি দিতে পারিনি। সে কারণেই রাগ হয়তো।”

আরও পড়ুন: শেষ পর্যন্ত সুরেন্দ্রের হাত ছাড়েননি শাহিদ

অনশনে বসার পাশাপাশি মণিদীপার তরফে একটি লিফলেটও বিলি করা হয়েছে। সেখানে ওই বধূ জানিয়েছেন, তন্ময়ের সঙ্গে তাঁর সামাজিক বিয়ে হলেও রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়নি। প্রথমে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে আবেদন করা হয়। কিন্তু তন্ময় আদালতে যাননি বলে অভিযোগ। এর পর হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে ফের আবেদন করা হয়। তার পরেও তন্ময় যাননি। অথচ আবেদনের ৬ মাসের মধ্যেই আদালতে যেতে হয় বলে মণিদীপার দাবি। একই সঙ্গে ওই লিফলেটে অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে তন্ময়ের পরিবারের বিরুদ্ধে।

বৈদ্যবাটির এনসিএম রোডের বাসিন্দা তন্ময় সাধুখাঁ।

এ ব্যাপারে তন্ময়ের বাবা বাবলু সাধুখাঁকে ফোন করা হলে তিনি সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেন। মিথ্যে অভিযোগ এনে তাঁদের ফাঁসানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন পুরসভার ওই কর্মী। তাঁর দাবি, মণিদীপার মানসিক কোনও সমস্যা আছে। সে কারণেই বার বার মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। বাবলুবাবুর কথায়, ‘‘কোনও দিনই আমরা ওঁকে বাড়ি থেকে বার করে দিইনি। মেয়ের বাবাই এসে বার বার এ বাড়ি থেকে তাঁর মেয়েকে নিয়ে গিয়েছেন।’’ আর মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘মিথ্যা অভিযোগের কী জবাব দেব বলুন তো! আমার বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। তার ফুটেজ চাইলে যে কেউ দেখতে পারেন। সেখানেই প্রমাণ মিলবে, তরুণবাবু কী ভাবে মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছেন।’’

একই সঙ্গে বাবলুবাবুর দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে এমন মিথ্যে অভিযোগ জানিয়ে বাবা-মেয়ের একের পর এক চিঠি দেওয়ার পর তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর দাবি, বিচারক বিষয়টি শোনার পর তন্ময়-মণিদীপা দু’জনকেই ওই বাড়িতে ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। গত ৩ অগস্ট ওই নির্দেশ পেয়েছেন বলেই বাবলুবাবুর দাবি।

আরও পড়ুন: জনসংযোগেও কড়া নজরদারি প্রশান্তের

অনশনে বসার আগে বা পরে পুলিশের সঙ্গে কি কথা হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তরুণবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ সবই জানে।’’ আর শেওড়াফুলি ফাঁড়ির এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা ওই বাবা-মেয়েকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাতে বলেছি। কিন্তু তাঁরা রাজি নন। তাঁদের দাবি, পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত করুক।’’ তিনি আরও জানান, বাবলুবাবুর দাবি অনুযায়ী আদালত কিছু নির্দেশ দিয়েছে। সেটা তাঁরা খতিয়ে দেখেই ব্যবস্থা নেবেন বলে ওই আধিকারিকের দাবি।

Domestic Violence Baidyabati Hunger Strike West Bengal Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy