Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বরের পথে হেঁটেই বন্ধ শহরের অধিকাংশ মন্দির

কোভিড রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন তাঁরা।

এখনও বন্ধ ঠনঠনিয়া সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

এখনও বন্ধ ঠনঠনিয়া সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ২০:১৯
Share: Save:

রাজ্য বলেছিল, সোমবার থেকেই খোলা যাবে মন্দির, মসজিদ, গির্জা-সহ সমস্ত উপাসনাগৃহ। কেন্দ্রীয় নির্দেশনামায় বলা হয়েছিল, ৮ জুন থেকে খোলা যাবে। তবে, রাজ্য অনুমতি দিলেও কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ-সহ একাধিক বড় মন্দিরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন যে, ভক্ত-দর্শনার্থীদের জন্য ১ জুন থেকে দরজা খোলা হবে না। কোভিড রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন তাঁরা। সেই একই পথে এ বার হাঁটল শহরের তুলনামূলক ভাবে ছোট মন্দিরগুলোও।

এ দিন দুপুরে উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাইরের দরজা তালাবন্ধ। ভিতরে গর্ভগৃহের কোলাপসিবল গেটেও তালা ঝুলছে। মন্দির চত্বরে বসেছিলেন পুরোহিত। তিনি বললেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে নিত্য পুজো হয়েছে বিগ্রহের। কিন্তু ভক্তদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল মন্দির। এখনও সেই নিয়মই মানা হচ্ছে।’’ তিনি জানালেন, আপাতত ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে মন্দির। এর পর অছি পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে।

মধ্য কলকাতার বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ফিরিঙ্গি কালীবাড়িরও দরজাও বন্ধ। বাইরে থেকেই প্রণাম সারছেন ভক্তরা। মন্দিরের অন্যতম পুরোহিত অশোক ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘আমরা মূলত বেলুড় মঠকে অনুসরণ করি। রামকষ্ণ মিশন এবং বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত দেখে আমরা মন্দির খুলব সাধারণ মানুষের জন্য। তত দিন বন্ধ থাকবে মন্দির।” মধ্য এবং উত্তর কলকাতার অন্যান্য ছোট মন্দিরও বন্ধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কালীঘাট মন্দিরের এক সেবায়েত বলেন, ‘‘অনেক জায়গাতেই পুরোহিতরাও মন্দির খোলার বিপক্ষে। কারণ ভক্ত সমাগম শুরু হলে পুরোহিতদেরই সব চেয়ে বেশি ঝুঁকি।”

বউবাজারের ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: দিলীপ, সুব্রত, মুকুল, রাহুল: সব শিবিরকে ঠাঁই দিয়ে নতুন কমিটি বিজেপির​

তারাপীঠ এবং দক্ষিণেশ্বরে ‘স্যানিটাইজিং টানেল’ তৈরি করা হচ্ছে। সেই টানেল তৈরি হলে দর্শক এবং ভক্তদের স্যানিটাইজ করে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে মন্দিরের ভিতরে বেশ কিছু জায়গা জমায়েত এড়াতে আপাতত বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিনেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ। কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে কোচবিহারের বিখ্যাত মদনমোহন মন্দির। বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, ১৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে মঠ।

তবে এর মধ্যেই বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান এবং বাঁকুড়া জেলায় খুলে গেল সেখানকার কয়েকটি প্রসিদ্ধ মন্দির। বীরভূমের পাঁচটি সতীপীঠের মধ্যে বক্রেশ্বর ছাড়া বাকি চারটি— বোলপুরের কঙ্কালীতলা, লাভপুরের ফুল্লরা মন্দির, সাঁইথিয়ার নন্দিকেশ্বরী এবং নলহাটির নলাটেশ্বরী মন্দিরের দরজা সোমবার থেকেই ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার ব্যপারে সতর্ক মন্দির কর্তৃপক্ষ। বাঁকুড়াতেও খুলে দেওয়া হয়েছে একাধিক মন্দিরের দরজা। কলকাতাতেও সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে আদ্যাপীঠ। তবে বন্ধ আপাতত বন্ধ থাকছে নবদ্বীপ এবং মায়াপুরের মন্দিরগুলো।

প্রার্থনার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে নাখোদা মসজিদও। সেখানকার ইমাম মহম্মদ শফিক কাশমি এ দিন সামাজিক দূরত্ব বিধি মানার উপর জোর দেন। তিনি নাখোদা মসজিদের প্রশস্ত উপাসনা প্রাঙ্গন দেখিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ১০ জনের বেশি মানুষকে প্রার্থনার জন্য অনুমতি দিচ্ছি না। নমাজের আগে ভক্তদের হাত-পা ধোওয়ার জন্য যে জলের পুকুর রয়েছে মসজিদে, সেটাও বন্ধ রাখা হয়েছে সংক্রমণ এড়াতে। আমরা সবাইকে বলছি, বাড়ি থেকে ওজু সেরে আসতে।”

আরও পড়ুন: বর্ষা ঢুকল কেরলে, দিন কয়েকের মধ্যে ঢুকে পড়ছে এ রাজ্যেও​

নাখোদা মসজিদ। —নিজস্ব চিত্র।

মসজিদ খুললেও বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মহম্মদ ইয়াহিয়াও লিখিত বার্তায় ইমামদের মসজিদে তিন-চার জন মিলে জামাত চালু রাখার আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি আরও কিছু দিন বন্ধ থাকলে ক্ষতি নেই।” মালদহ মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ছোট মসজিদের ইমামরাও বাড়িতে নমাজ পড়তে উৎসাহিত করছেন।

কলকাতায় রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের আর্চ বিশপ টমাস ডি’সুজা গির্জা খোলার ব্যাপারে পর্যাপ্ত সুরক্ষা এবং সতর্কতার উপর জোর দিয়েছেন। ব্যান্ডেল গির্জা সোমবার খোলার কথা থাকলেও খোলেনি। এ দিন গির্জা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গির্জায় কিছু মেরামতির কাজ চলছে। আগামী ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে গির্জা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Mosques Temple COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE