চোলাই-চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে ধরে এনেছিল আবগারি দফতর। কিন্তু সেই দফতরে লোকলস্কর নিয়ে হামলা চালিয়ে ওই দু’জনকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার বর্ধমানের গুসকরায় ওই হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়ে জখম হন আবগারি দফতরের গুসকরার ওসি ধ্রুবজ্যোতি সরকার-সহ সাত কর্মী।
ঘটনায় দলের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় ‘অস্বস্তি’ লুকোননি গুসকরার তৃণমূল নেতা বুর্ধেন্দু রায়, নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়রা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, অন্যায় করেছে। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’
জেলা আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘শাসক দলের মদত ছাড়া, সরকারি দফতরে হামলা চালিয়ে অভিযুক্তদের ছিনতাই করার সাহস হতে পারে না জনতার।’’
শুক্রবার সকালে আবগারি দফতরের কাটোয়া, কালনা, আউশগ্রাম ও ভাতার থানার প্রায় ২৫ জন কর্মী ভাতারের বসতপুর গ্রামে হানা দেন। হাতেনাতে দু’জনকে ধরা হয়। বাজেয়াপ্ত হয় প্রায় ২০০ লিটার চোলাই, চোলাই তৈরির সরঞ্জাম ও চোলাইয়ের জ্যারিকেন আটকানো তিনটি মোটরবাইক। সেই সময় ওই গ্রামেরই কয়েকজন মহিলা বাধা দিলে আবগারি দফতরের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের বচসা হয়। তবে সব মিটিয়ে সকাল ৮টার মধ্যেই ধৃতদের নিয়ে গুসকরার অফিসে পৌঁছে যান আবগারি দফতরের কর্মীরা।
আবগারি দফতরের দাবি, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে না করতেই তিনটি ছোট মালবাহী গাড়িতে প্রায় ৫০-৬০ জন হাজির হয় তাদের গুসকরার অফিসে। নেতৃত্বে ছিলেন মাহাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কমলা মাজির ছেলে সুমন্ত মাজি। কমলাদেবীর স্বামী নিখিলেশ্বর মাজি ওই পঞ্চায়েতেরই উপপ্রধান।
শুরু হয় ‘তাণ্ডব’। চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর হয়, ধস্তাধস্তিও। হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়ে জখম হন দফতরের সাত কর্মী। গোলমালের মাঝেই ধৃতদের ছিনতাই করে জনতা। নিয়ে যায় আটক করা মোটরবাইক ও চোলাই তৈরির সরঞ্জাম। পুলিশ প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চলে আসায়
ঘটনাস্থল থেকেই ধরা পড়ে এক মহিলা-সহ ছ’জন। তবে প্রথম বারের ধৃতেরা বেপাত্তা।
কুনুর নদীর ধার ঘেঁষা বসতপুর, রামচন্দ্রপুরে দীর্ঘদিন ধরেই চোলাইয়ের কারবার চলছে। এ দিন রাজ্য স্তর থেকে নির্দেশের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। আবগারি দফতর সূত্রের অনুমান, অভিযানের কথা জেনেই শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে লোক জড়ো করা হয়। হামলার পরে ঘটনাস্থল থেকে ধৃতদের মধ্যে তপন ঘোষ এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলেই পরিচিত।
পুলিশের কাছে আবগারি দফতরের করা অভিযোগে নাম রয়েছে সুমন্তর। তাঁর সঙ্গে এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। কমলাদেবীর মোবাইলে ফোন করা হলে বার বার কেটে দেন তিনি। তবে কমলাদেবীর স্বামী নিখিলেশ্বর মাজি বলেন, ‘‘কারা হামলা করেছে জানা নেই। তবে আবগারি দফতরের কর্মীরাই অন্তঃসত্ত্বা মহিলার উপরে নির্যাতন করেছেন বলে খবর পেয়েছি।’’ জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘ওখানে চোলাই-চক্র চলছে। সব দিক গুছিয়ে ফের অভিযান চালানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy