Advertisement
১৮ মে ২০২৪

নামমাহাত্ম্যেই বাম প্রার্থী আর এক কপিলকৃষ্ণ

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রার্থী ঘোষণার পরে একবার টিভির সামনে গিয়ে বসতে হয়েছিল তাঁকে। মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের পাশে বসে তাঁকে বোঝাতে হয়েছিল, নাম একই হলেও তিনি তৃণমূলের প্রার্থী নন।

কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর।

কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর।

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রার্থী ঘোষণার পরে একবার টিভির সামনে গিয়ে বসতে হয়েছিল তাঁকে। মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের পাশে বসে তাঁকে বোঝাতে হয়েছিল, নাম একই হলেও তিনি তৃণমূলের প্রার্থী নন।

বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের দ্বিতীয় দফার প্রার্থী তালিকায় সেই একই নাম শুনে হতভম্ব হয়েছেন অনেকেই। প্রথমেই সকলের মনে হয়েছে, তা হলে কি কোথাও ভুল হচ্ছে! কারণ, মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান তো প্রয়াত হয়েছেন বছর দেড়েক আগেই!

এ বার অবশ্য কপিলকৃষ্ণবাবুকে বোঝাতে হচ্ছে, ভুল করে প্রয়াত তৃণমূল সাংসদের নাম বাম তালিকায় ঢুকে পড়েনি। তিনিই এ বার গাইঘাটা বিধানসভা আসনের প্রার্থী।

যা শুনে গাইঘাটার তৃণমূল প্রার্থী পুলিনবিহারী রায়ের মন্তব্য, ‘‘প্রয়াত সাংসদের নামে একজনকে দাঁড় করিয়ে সিপিআই মতুয়া ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওঁর সঙ্গে ঠাকুর পরিবারের কোনও আত্মীয়তা নেই। ফলে ভোটে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।’’

মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান হিসাবে প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ যেমন মতুয়া-সমাজের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম, ঠিক তেমনই বামপ্রার্থী কপিলকৃষ্ণও নিজের নামের গুণেই মতুয়া সমাজে অতি পরিচিত। কারণ, কপিলকৃষ্ণবাবু মতুয়া ধর্মের প্রাণপুরুষ হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের উপরে বহু বইয়ের লেখক। মতুয়া সমাজের উপরেও তিনি বই লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে রয়েছে, ‘মতুয়া আন্দোলন ও বাংলার অনুন্নত সমাজ’, ‘শ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও মতুয়া আন্দোলন’। মতুয়া সমাজ ছাড়াও এলাকার শিক্ষিত মহলেও তাঁর যথেষ্ট কদর রয়েছে। মতুয়া ধর্ম ও আন্দোলন নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি বহু গল্প, উপন্যাস লিখেছেন। ‘উজানতলির উপকথা’ উপন্যাসটির জন্য ২০০২ সালে ত্রিপুরা সরকার তাঁকে ‘অদ্বৈত মল্লবর্মণ পুরস্কার’ দিয়েছে।

মতুয়া সমাজে তাঁর এই পরিচিতির জন্যই ২০১৪ সালে ভুল হয়েছিল এলাকার মানুষের। সে বার লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী তালিকায় কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের নাম দেখে দলে দলে মতুয়া-ভক্ত তাঁর কাছে এসে হাজির হয়েছিলেন। ফোন করেও অনেকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমের অনেকেও হাজির হয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে। অনেক কাগজে তাঁর ছবিও প্রকাশিত হয়। বিভ্রান্তি কাটাতে শেষ পর্যন্ত দুই কপিলকৃষ্ণকে বসতে হয়েছিল একটি টিভি চ্যানেলে।

সিপিআই দলের প্রার্থী কপিলকৃষ্ণবাবুর জন্ম ও পার বাংলার গোপালগঞ্জের সাতপাড় গ্রামে। পাঁচ মাস বয়সে মা প্রমীলাদেবীর কোলে চেপে এ দেশে এসেছিলেন। বাবা বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন স্কুল শিক্ষক ও ফুটবলার। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনিই বড়। গোবরডাঙা হিন্দু কলেজের স্নাতক কপিলকৃষ্ণবাবু বাংলা সাহিত্যে এমএ পাশ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে।

এত দিন সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলেও হঠাৎ ভোটের ময়দানে কেন?

বামনগাছির বাড়িতে বসে কপিলবাবু এ দিন বলেন, ‘‘মতুয়া-সমাজ এখন সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। তাঁরা এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন। সে কারণেই সকলে আমাকে ভোটে দাঁড়াতে বলেছেন। সিপিআইয়ের পক্ষ থেকেও আমাকে বলা হয়, স্থানীয় বাসিন্দা ও মতুয়ারা আমাকেই প্রার্থী হিসাবে চাইছেন। তাঁদের অনুপ্রেরণাতেই আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি।’’ কপিলকৃষ্ণবাবুর আশা, মতুয়া ভোট তাঁর দিকেই থাকবে।

প্রয়াত সাংসদের নামের সঙ্গে তাঁর নামের মিলের জন্য কি কপিলকৃষ্ণ বাড়তি সুবিধা পাবেন?

এ ব্যাপারে সিপিআইয়ের বনগাঁ জোনাল পরিষদের সম্পাদক রণজিৎ কর্মকার বলেন, ‘‘প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের সঙ্গে নামের মিল থাকায় উনি কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাবেন বলেই মনে হয়।’’ তবে এলাকার তৃণমূল সাংসদ ও প্রয়াত কপিলকৃষ্ণবাবুর স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুরের বক্তব্য, ‘‘আমার স্বামীর সঙ্গে নামের মিলের কারণে প্রার্থী কোনও সুবিধা পাবেন বলে মনে হয় না। কারণ, আমার স্বামী যে মারা গিয়েছেন, তা সব মতুয়া-ভক্তই জানেন।’’ তবে কপিলকৃষ্ণবাবু যে নিজনামেই যথেষ্ট পরিচিত, তা মেনে নিয়েছেন মমতাদেবীও।

তিনি বলেন, ‘‘উনি একজন মতুয়া-ভক্ত। আমাদের ঠাকুরের উপরে অনেক বইপত্রও লিখেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE