উভয় সঙ্কট আর কাকে বলে!
কয়েক মাস আগেও দলের রাজ্য নেতৃত্বের বিরাগের চোটে রাজ্য কমিটিতেও তাঁর জায়গা হয়নি। রাজ্য সম্মেলন থেকেই ওয়াকআউট করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত দলের সাধারণ সম্পাদকের হস্তক্ষেপে রাজ্যে পঞ্চায়েত ও পুরভোটে প্রচারের মুখ করা হয়েছিল তাঁকেই। তার পর? যাকে বলে, বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখিয়েছেন ভি এস অচ্যুতানন্দন! কেরলে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও পুরসভার ভোটে বিপুল সাফল্য পেয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ। তা হলে কি বিধানসভা ভোটেও ৯২ বছরের ভি এস ফের অপরিহার্য হয়ে উঠলেন? দলের সাংগঠনিক প্লেনামের আগে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বকে!
কলকাতায় আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্লেনামের এ বার মূল বিষয়বস্তুই হচ্ছে আরও তারুণ্যের সঞ্চার ঘটিয়ে সংগঠনকে চাঙ্গা করা। দলে ‘বৃদ্ধতন্ত্রে’র অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে পুরনো মুখেদের পর্যায়ক্রমে অবসর দিতে প্লেনামে প্রস্তাব পেশ করার জন্য মাথা খাটাচ্ছেন স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। চিনের দেও জিয়াং পিং, জিয়াং জেমিন বা জিনতাওরা যদি ক্ষমতার শীর্ষে থাকতে থাকতে সরে দাঁড়াতে পারেন, এখানে কীসের অসুবিধা— এই যুক্তি থেকেই তৈরি হচ্ছে সেই প্রস্তাব। ঠিক সেই সময়েই ভি এসের ভেল্কি দলকে ফের ভাবনার মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে! বুড়ো মানেই কি বিদায়যোগ্য? নাকি এমন সরলীকরণের ভাবনা থেকে সরে এসে ‘ব্যতিক্রম’ হিসাবে মর্যাদা দিয়ে রাখতে হবে কেরলের বিরোধী দলনেতাকে?
এক দিনের কলকাতা সফরে এসে আনন্দবাজারের প্রশ্ন শুনে খোদ ইয়েচুরি হেসে বলছেন, ‘‘এক কথায় এর উত্তর হয় না! দেখা যাক!’’ কেরলের রাজ্য নেতৃত্বের মনোভাব বুঝতে দক্ষিণী ওই রাজ্যে আগামী মাসে পাড়ি দেবেন সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরামর্শ উপেক্ষা করে রাজ্য সিপিএম ভি এস-কে অহেতুক উপেক্ষা করার রেওয়াজ চালিয়ে যাওয়ায় মাসদুয়েক আগে তিরুঅনন্তপুরমে রাজ্য কমিটির বৈঠকে যাওয়ার কথা থাকলেও সরে দাঁড়িয়েছিলেন ক্ষুব্ধ ইয়েচুরি। তবে এ বার তিনি ঠিক করেছেন, আগামী ৭-৮ ডিসেম্বর প্লেনামের আগে কেরল রাজ্য কমিটির বর্ধিত বৈঠকে তিনি যাবেন। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘কেরলে গিয়ে ওঁদের কথা আগে শুনি। তার পরে বিধানসভা ভোটের কথা ভেবে কৌশল ঠিক করা যাবে।’’
নবতিপর ভি এস-কে সামনে রেখেই এ বার স্থানীয় প্রশাসনের ভোটে বড় সাফল্য ঘরে তুলেছে বামেরা। রাজ্যে ৫৫১টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৮৭টি ব্লক পঞ্চায়েত এবং ১৪টি জেলার মধ্যে ৭টির জেলা পরিষদ জিতেছে তারা। পঞ্চায়েতের সব স্তর মিলে মোট আসনের ৫৮%-ই বামেদের হাতে। ৮৫টি পুরসভার মধ্যে বামেরা জয়ী হয়েছে ৪২টিতে। পুর-নিগমের মধ্যে ত্রিশূর, কোঝিকোড় ও কোল্লম সরাসরি জিতেছে এলডিএফ। কান্নুর ও তিরুঅনন্তপুরম ত্রিশঙ্কু। একমাত্র কোচি সরাসরি জিততে পেরেছে রাজ্যের শাসক ফ্রন্ট ইউডিএফ। তিরুঅনন্তপুরম পুর-নিগমে দ্বিতীয় স্থানে এসে, একটি পুরসভা জিতে এবং পঞ্চায়েতে কিছু আসন জয়ী হয়ে বিজেপি (তারা এ বার সরাসরি জোট গড়েছিল একটি ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে) উঠে এসেছে ঠিকই। কিন্তু তার জন্য কংগ্রেস নেতত্বধীন ইউডিএফ-কে টপকে যেতে বামেদের অসুবিধা হয়নি। বিধানসভা ভোটের আগে এই ফল যে তাঁদের কাছে নতুন সঞ্জীবনী সুধার মতো, তা বুঝেই ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘কেরলের মানুষকে সেলাম! তাঁরাই রাস্তা দেখালেন। প্রথমে দিল্লি এবং এখন কেরল ও বিহার— মানুষ নিজেরাই নিজেদের জন্য আচ্ছে দিন নিয়ে আসছেন!’’
কী বলছেন ভি এস? প্রাথমিক ভাবে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ইউডিএফের দুর্নীতি এবং বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারের সাম্প্রদায়িক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন মানুষ। কেরলের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিধানসভা ভোটে তাঁরা কী চান!’’ কিন্তু তিনি কী চান? খোলসা করেননি বিরোধী দলনেতা। তবে দলের একটি সূত্রের বক্তব্য, বয়সের কারণেই সম্ভবত পরের বছর আর প্রার্থী হওয়া হবে না ভি এসের। কিন্তু ময়দান থেকে তাঁকে সরিয়ে রাখা যাবে না! হয়তো উপদেষ্টা, হয়তো মুখ্য প্রচারক হিসাবে এই বয়সেও দৌড়তে হবে তাঁকে। রাজ্য নেতৃত্বকে পাশে নিয়ে যা ঠিক করতে হবে ইয়েচুরিকেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy