Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অসহিষ্ণুতার তিরে বামেরা বিঁধল মোদীভাই-দিদিভাইকে

প্রতি বছরই এই দিনটায় সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা নিয়ে পথে নামে বামেরা। কিন্তু এ বার তাদের হাতে ছিল বাড়তি হাতিয়ার! সম্প্রীতি দিবসে অসহিষ্ণুতার অভিযোগে বামেরা এক যোগে বিদ্ধ করল বিজেপি এবং তৃণমূলকে। সেই সঙ্গেই ময়দানে নেমে প্রশ্ন তুলল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন বৈঠক নিয়ে।

রবিবারের মিছিলে সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব এবং অনাদি সাউ। কাশীপুরে সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

রবিবারের মিছিলে সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব এবং অনাদি সাউ। কাশীপুরে সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

প্রতি বছরই এই দিনটায় সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা নিয়ে পথে নামে বামেরা। কিন্তু এ বার তাদের হাতে ছিল বাড়তি হাতিয়ার! সম্প্রীতি দিবসে অসহিষ্ণুতার অভিযোগে বামেরা এক যোগে বিদ্ধ করল বিজেপি এবং তৃণমূলকে। সেই সঙ্গেই ময়দানে নেমে প্রশ্ন তুলল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন বৈঠক নিয়ে।

কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে রবিবার সকাল থেকেই পথে নেমেছিল বিভিন্ন বাম দল। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বার্ষিকী পালন করতে বাম দলগুলির মূল দু’টি মিছিল ছিল উত্তরে কলেজ স্কোয়ার থেকে নারকেলডাঙা এবং দক্ষিণে হাজরা মোড় থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত। প্রথম মিছিলে বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম এবং দ্বিতীয়টিতে সূর্যকান্ত মিশ্র, মদন ঘোষ, রবীন দেব, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোজ ভট্টাচার্যেরা যোগ দিয়েছিলেন। ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার ৯০ বছর উপলক্ষে এ দিনই শহিদ মিনার ময়দানে আলাদা করে সমাবেশ করেছিল বাম শরিক সিপিআই। মিছিলে বিমানবাবু, সূর্যবাবু বা সিপিআইয়ের সমাবেশে এস সুধাকর রে়ড্ডি, গুরুদাস দাশগুপ্ত, প্রবোধ পণ্ডাদের বক্তব্যের মূল নির্যাস একই— দেশ জুড়ে বিজেপি যেমন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ তৈরি করেছে, তেমনই রাজ্যে তৃণমূলের সরকারের রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার ফাঁস চেপে বসেছে। মোদীভাই এবং দিদিভাই, দুই শক্তিকেই পরাস্ত করতে বাম কর্মী-সমর্থকদের আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনোর আহ্বান জানিয়েছেন বাম নেতারা।


শহিদ মিনারের সভায় এস সুধাকর রে়ড্ডি, গুরুদাস দাশগুপ্ত। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

বস্তুত, তৃণমূল এবং বিজেপি— এই দুই শক্তি যে আসলে একই মুদ্রার দুই পিঠ, সেই প্রচারও এ দিন জোর গলায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন বাম নেতৃত্ব। সিপিআইয়ের সমাবেশের অদূরে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে এ দিন একই সময়ে তৃণমূলের ‘সংহতি দিবসে’র সভা ছিল। সেই সমাবেশে অবশ্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শাসক দলের দুই মুখ্য চরিত্রই ছিলেন না। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী আসবেন বলে প্রচারও তাঁরা করেননি। যদিও প্রশাসনিক প্রস্তুতি ছিল মুখ্যমন্ত্রী আসবেন ধরে নিয়েই। তৃণমূলের একাংশেও জল্পনা ছিল, ‘সংহতি দিবসে’র মঞ্চ থেকে ফের সাম্প্রদায়িকতা এবং সারদা-কাণ্ড নিয়ে বিজেপি-কে তোপ দাগবেন মমতা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাঁর অনুপস্থিতি ঘিরে প্রশ্ন তুলতে ছাড়েনি বামেরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু যেমন টুইটে প্রশ্ন করেছেন, ‘‘তাঁর দলের সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী নেই কেন? এটা তো আসলে দিল্লির মিটিং এবং ‘সেটিং’-এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা!’’

বামেদের মিছিলে এ বার অবশ্য সিপিআই নেতৃত্ব যোগ দিতে পারেননি। কলকাতায় ২০০২ সালের ডিসেম্বরে ব্রিগেড সমাবেশের ১৩ বছর পরে এ দিন আবার তাঁরা একক ভাবে বড় সমাবেশ করেছেন। সূর্যবাবুর সুরেই সেখানে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধবাবু বলেছেন, ‘‘সারদায় বিপদে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে ম্যানেজ করতেই পারেন! কিন্তু বাংলার মানুষ জেনে গিয়েছেন, আপনি এক জন প্রতারক!’’ দলের সাধারণ সম্পাদক রে়ড্ডি দেশে সাম্প্রদায়িক এবং রাজ্যে ‘গুন্ডাগিরির সরকার’কে পরিবর্তনের জন্য সচেষ্ট হতে ডাক দিয়েছেন। প্রবোধবাবু অবশ্য বলেছেন মানুষের কাছে পুরনো ভুল-ত্রুটি শুধরে বামফ্রন্টই পারে রাজ্যে ফের বিকল্প হতে। তার জন্য কংগ্রেসকে সঙ্গে নেওয়ার দরকার নেই। যদিও একই মঞ্চ থেকে সিপিআইয়ের সহকারী সাধারণ সম্পাদক গুরুদাসবাবুর বক্তব্য, ‘‘গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে কোনও বাছবিচার, ছুৎমার্গ রাখলে চলবে না! শুধু বামপন্থীরা নয়, সবাই মিলে লড়তে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট হতে হবে।’’

সিপিআইয়ের এখন এ রাজ্য থেকে কোনও সাংসদ নেই, বিধায়ক বলতে সাকূল্যে দু’জন। সীমিত শক্তি নিয়েও এ দিনের সমাবেশে শহরে লোক এসেছিল যথেষ্ট। যদিও ময়দানে না ঢুকে তাঁদের অনেককে ধর্মতলা চত্বরে দেখা গিয়েছে! সিপিআইয়ের রাজ্য নেতা মঞ্জুকুমার মজুমদার, দেবাশিস দত্তেরা বলছেন, লোক আনার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা তাঁরা করতে পারেননি। নিজেদের গরজে যে লোক শহরে এসেছিলেন, তা-ই দলের পক্ষে উৎসাহব্যঞ্জক।

উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায় বাম মিছিলেও ভিড় হয়েছিল ভাল। তার আগে সকালে চি়ড়িয়া মোড় থেকে একটি পদযাত্রাতেও অংশ নিয়েছিলেন সূর্যবাবু। গঙ্গার অন্য পারে বালিখাল থেকে শিবপুর পর্যন্ত পদযাত্রাতেও সাড়া মিলেছে এ দিন। আর এ সব কর্মসূচি থেকেই রসদ নিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে বামেরা তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে আরও তেড়েফুঁড়ে নামতে চাইছে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবুও মন্তব্য করেছেন, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী কেন বারবার দিল্লি যাচ্ছেন! আসলে সারদার বিষয় আছে!’’ বিজেপি অবশ্য বিরোধীরা যখন বাবরি ধ্বংসের ঘটনাকে মনে রেখেই ‘শৌর্য দিবস’ পালন করেছে। বজরং দলও মিছিল করেছে কলকাতা-সহ সর্বত্র আইএস এবং আইএসআইয়ের প্রভাব বৃদ্ধির প্রতিবাদে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE