Advertisement
E-Paper

একা কুণালে কী হবে, শিশু-ক্যানসার ঘরে ঘরে

ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় অনেক সময়ই কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা সংগঠনের তরফে সাহায্য মেলে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এমন সাহায্যে কত জন শিশুর চিকিৎসার ভার বহন করা সম্ভব?

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৭
লিউকেমিয়া আক্রান্ত মধুরিমা দত্ত। পিসির সঙ্গে। ছবি: সৌভিক দে

লিউকেমিয়া আক্রান্ত মধুরিমা দত্ত। পিসির সঙ্গে। ছবি: সৌভিক দে

ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় অনেক সময়ই কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা সংগঠনের তরফে সাহায্য মেলে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এমন সাহায্যে কত জন শিশুর চিকিৎসার ভার বহন করা সম্ভব?

চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের অধিকর্তা জয়দীপ বিশ্বাস জানান, ভারতে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। অথচ তাঁদের হাসপাতালে শিশু বিভাগে মাত্র ১১-১২টি শয্যা রয়েছে। চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল সূত্রের দাবি, ২০১৩ সালে এখানে ১.৯ শতাংশ ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা হয়েছিল। এ বছর সেটা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ শতাংশে। রাজারহাটে নতুন একটি বাড়ি তৈরি হচ্ছে, যেখানে আরও বড় জায়গা নিয়ে শিশু বিভাগ থাকবে। কিন্তু সেটাও যে পর্যাপ্ত নয়, মানছেন জয়দীপবাবু।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শিশুদের মধ্যে লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা — এই দু’ধরনের ক্যানসারের প্রবণতা বেশি। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কম খরচে সরকারি চিকিৎসার সুবিধা কত জনই বা পাচ্ছেন! বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। দু’টির মধ্যে খরচের ফারাক প্রচুর।’’ গৌতমবাবুর মতে, খরচ মধ্যবিত্তদের নাগালে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা ভাবা উচিত সরকারে ।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সৈকত গুপ্তও বললেন, ‘‘শুধু ক্যানসার চিকিৎসার জন্যই এসএসকেএম, এনআরএস-এর মতো হাসপাতাল শহরে হওয়া উচিত।’’ তাঁর কথায় ‘‘যে শিশুর ক্যানসার ধরা পড়ছে তার বাবা-মায়েরও বয়স বেশি নয়। ফলে চিকিৎসার আগে পর্যাপ্ত টাকা জমানোর সুযোগও তাঁরা পান না।’’

এমনই একটি পরিবারের ১৩ বছরের কিশোরী মধুরিমা দত্তর লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার হয়েছে। বিরাটীর এক চিলতে ঘরের সংসারে সে-ই বড় মেয়ে। দোকানে-দোকানে ঘুরে জামাকাপড় সরবরাহ করেন তার বাবা রঞ্জিতবাবু। বাড়িতে পাঁচ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে। ক্যানসার ধরা পড়ার পরে মধুরিমার স্কুল বন্ধ। শুরু হয়েছে কেমোথেরাপি। শেষ আট মাসে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। রাজারহাটের হাসপাতাল হিসেব দিয়েছে, আগামী দিনে শুধু কেমোর জন্য আরও ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা লাগবে।

কোথায় পাবেন? মেয়েকে বাঁচাতে শেষমেশ সাহায্য চেয়ে শনিবারের আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপন দেন রঞ্জিতবাবু। জেলে বসে সেই বিজ্ঞাপন দেখে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ নিজের বেতন থেকে ২ লক্ষ টাকা পাঠান মধুরিমার কাছে। শনিবার কুণালের স্ত্রী শর্মিতা ফোন করে এ কথা জানানোর পর চমকে ওঠেন মধুরিমার মা মহুয়া। টাকা দরকার! কিন্তু সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত কুণাল! এত বিপদের মধ্যে জেলবন্দি ব্যক্তির টাকা নিলে অন্য কিছু হবে না তো! দত্ত-দম্পতি স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বিধান বিশ্বাসের শরণাপন্ন হন। তিনি অভয় দেন।

কুণালের মা-ও ক্যানসার রোগী, জানিয়ে শর্মিতা বলেন, ‘‘ছোট্ট মেয়েটির খবর দেখে কুণাল তাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয়।’’

মধুরিমা অনেকটা সুস্থ হয়ে যাবে বলে চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিয়েছেন রঞ্জিতবাবুকে। এ জন্য ওর শরীরে অস্থি-মজ্জা প্রতিস্থাপন করাতে হবে। পাঁচ বছরের ভাই রাজের সঙ্গে তার অস্থি-মজ্জা মিলেও গিয়েছে। কিন্তু আরও ১৫ থেকে ১৭ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। বাড়ি থেকে বেরনোর মুখে প্রতিবেদকের কাছে ছলছল চোখে মহুয়ার আবেদন, ‘‘দাদা, একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন!’’

সমস্যা সমাধানে এখনই আলাদা হাসপাতালের পরিকল্পনা নেই রাজ্যের। সরকারের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ক্যানসার চিকিৎসার আলাদা ইউনিট রয়েছে। সেখানে যতটা সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে।

Leukemia lymphoma
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy