Advertisement
E-Paper

পুরুষালি মেয়েটিকে মহিলা শৌচাগার থেকে বার করে দিয়েছিলেন সহকর্মীরা!

সম্প্রতি শহরের এলজিবিটি কমিউনিটির মানুষেরা ভিড় জমিয়েছিলেন শহরের এক কাফেতে। ৩৭৭ ধারা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক রায় ঘিরে স্বভাবতই খুশি তাঁরা।

চৈতালি বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৩৩
আনন্দ: ৩৭৭ ধারা নিয়ে রায়ের পরে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের জমায়েত। দক্ষিণ কলকাতার একটি কাফেতে। নিজস্ব চিত্র

আনন্দ: ৩৭৭ ধারা নিয়ে রায়ের পরে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের জমায়েত। দক্ষিণ কলকাতার একটি কাফেতে। নিজস্ব চিত্র

গোটা একটা দিন প্রস্রাব চেপে ছিলেন কর্মক্ষেত্রে। বলা ভাল, বাধ্য হয়েছিলেন। রূপান্তরকামী পরিচয় প্রকাশের পর পরই তাঁর ব্যাঙ্কের চাকরিটি চলে যায়।

খাস কলকাতার বুকে এমনই সামাজিক অবদমনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বছর আঠাশের মেয়েটিকে। কারণ, তিনি শরীরে মেয়ে হলেও মানসিক ভাবে নিজেকে পুরুষ ভাবতেন। রূপান্তরকামী ওই পুরুষের তখন সদ্য হরমোন থেরাপি শুরু হয়েছে। ফলে বেসরকারি ওই ব্যাঙ্ককর্মী তখনও পরিচয় গোপন করে, খাতায়কলমে ‘দীপালি’ নামেই নথিভুক্ত। অথচ সহকর্মীদের তীক্ষ্ণ নজরে ধরা পড়েছিল ঠোঁটের উপরে, গালে হালকা দাঁড়ি-গোঁফের রেখা। তাই প্রথম দিন কাজে যোগ দেওয়া পুরুষালি মেয়েটিকে মহিলা শৌচাগার থেকে বার করে দিয়েছিলেন মহিলা সহকর্মীরা। আর তার পরে পুরুষদের শৌচাগারে যেতে গিয়ে আরও এক দফা অপদস্থ হয়ে বেরিয়ে আসা। বাধ্য হয়ে গোটা দিন কর্মক্ষেত্রে প্রস্রাব চেপে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন রূপান্তরকামী মানুষটি।

সম্প্রতি শহরের এলজিবিটি কমিউনিটির মানুষেরা ভিড় জমিয়েছিলেন শহরের এক কাফেতে। ৩৭৭ ধারা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক রায় ঘিরে স্বভাবতই খুশি তাঁরা। ব্যস্ত শহরের বুকে তাঁদের সেই আনন্দ উদ্‌যাপনে বরাদ্দ ছিল একটি সন্ধে। সেখানেই শোনা গেল, সমকামী মানুষদের রোজনামচা।

ভাল ভাবে বেঁচে থাকাটা যে শুধু যৌনতার আইনি লড়াই জিতেই শেষ হয়ে যায় না, সে প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে উঠে এল ওঁদের কথায়। যেমন, অসমের রূপান্তরকামী পুরুষ দীপন চক্রবর্তী। মানুষটির শরীর-মনের সংঘাত চলেছে প্রতিনিয়ত। সেই সংঘাতের জের আরও তীব্র হয় যখন আর একটি মেয়েকে ভালবেসে বিয়ের সিদ্ধান্তের কথা বাড়িতে জানান। পরিবার মেনে নিতে পারেনি সম্পর্কটা। তিনি এখন বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় এসে সংসার করছেন স্ত্রীয়ের সঙ্গে। সমকামিতার আইনি স্বীকৃতি তাঁকে কি এ বার পরিবারের কাছে ফেরাতে পারবে?

দীপন স্পষ্ট বললেন, ‘‘ওঁদের এতে কিছু আসে যায় না। আমার মা বলেই দিয়েছেন— ‘মেয়ের সঙ্গে থাকলে তোমায় সন্তান বলে পরিচয় দিতে পারব না, সমাজে মুখ দেখাতে পারব না।’ অতএব, আমি সেক্স চেঞ্জের অপারেশন করি কিংবা সমকামিতা আইনি স্বীকৃতি পাক— এ সব নয়। মায়ের কাছে সমাজই শেষ কথা।’’

সমকামিতার অধিকারের লড়াইয়ে প্রথম জয় ছিনিয়ে আনার পরেও তাই শঙ্কা কাটছে না। কাফের ‘ওপেন মাইক সেশন’-এ উঠে এল এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর সামাজিক হেনস্থা, অর্থনৈতিক সমস্যা, প্রশাসনিক বৈষম্য তথা পারিবারিক অবহেলার টুকরো টুকরো ছবি।

কাফের এক কর্মকর্তা রায়না রায়ও বলছেন, ‘‘এই আইন করে শুধুমাত্র সমকামীদের যৌনতা থেকে ‘অপরাধ’ শব্দটি বাদ গেল। কিন্তু তাঁদের সামাজিক অবস্থান বদলাল কি?’’ আলো-আঁধারি কাফের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যেও ঘুরে বেড়ালো এই জরুরি প্রশ্নটিই।

LGBT Celebration Supreme Court Article 377
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy