Advertisement
০২ মে ২০২৪
ED Summoned Post Master

পোস্টমাস্টারের বিপুল খয়রাতি ধর্মকর্মে! বাড়ি প্রাসাদের মতো, কী ভাবে এত সম্পত্তি, তদন্তে ইডি

২০১৮ সালে লক্ষ্মণ হেমব্রম নামে পাঁশকুড়া শহরের এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে রামচন্দ্রপুর পোস্ট অফিসে ৫ কোটি টাকা আর্থিক তছরুপের অভিযোগ সামনে আসে। কয়েক বছর আগে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।

পাঁশকুড়া শহরে লক্ষ্ণণ হেমব্রমের বাড়ি।

পাঁশকুড়া শহরে লক্ষ্ণণ হেমব্রমের বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৪
Share: Save:

বাড়িতে হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) তল্লাশি। পেয়েছেন ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের নোটিসও। প্রাক্তন পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ইডি-র এমন তৎপরতায় এলাকায় শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। স্থানীয়দের একাংশ পোস্ট মাস্টারের সম্পত্তি, পুজোয় দানধ্যানের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন করছেন।

২০১৮ সালে লক্ষ্মণ হেমব্রম নামে পাঁশকুড়া শহরের এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে রামচন্দ্রপুর পোস্ট অফিসে ৫ কোটি টাকা আর্থিক তছরুপের অভিযোগ সামনে আসে। কয়েক বছর আগে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। এই লক্ষ্মণের বাড়িতে মঙ্গলবার হঠাৎ হাজির হন ইডি-র কয়েকজন আধিকারিক। ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি বাড়িতে চলে তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ। রাতে আধিকারকেরা ফিরে যাওযার পরে বুধবার এলাকায় লক্ষ্মণকে নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। এলাকায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ময়নার রামচন্দ্রপুর পোস্ট অফিসে বদলির হয়ে যাওয়ার পর লক্ষ্মণের সম্পত্তির না কি বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছিল। আর এ নিয়ে মুখ খুলেছেন লক্ষ্মণের প্রতিবেশীরা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পাঁশকুড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নস্করদিঘি গ্রামে আদি বাড়ি লক্ষ্মণের। বাবা মা দু'জনেই দিনমজুরি করতেন। সংসার চালাতে প্রথম জীবনে টিউশন করতেন লক্ষ্মণ। তারপর ডাক বিভাগে চাকরি মেলে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, রামচন্দ্রপুর সাব পোস্ট অফিসে যোগদানের পর লক্ষ্মণ এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। কারণ, সে সময় থেকে লক্ষ্মণ বিভিন্ন ক্লাব, মন্দির প্রতিষ্ঠান, পুজো কমিটিকে প্রচুর আর্থিক সহায়তা দিতে শুরু করেন। যা এলাকাবাসীকে ভাবাত।

ময়নায় বদলি হয়ে যাওয়ার পর পাঁশকুড়া শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নারান্দায় দু'টি জায়গা কিনে দু'জায়গাতেই বিশাল আকারের বাড়ি বানান লক্ষ্মণ। গ্রামেও বাড়ি তৈরি করেছেন। যদিও সে বাড়ি সেচ দফতরের জায়গা বেআইনি ভাবে দখল করে তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মেচগ্রাম বাইপাসের ধারে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে লক্ষ্মণ একটি আড়াই বিঘা জায়গা কিনেন বলে দাবি স্থানীয়দের।একটি চার চাকার গাড়িও কিনেছিলেন লক্ষ্মণ। পরে সেটি বিক্রি করে দেন।পাঁশকুড়া ব্রাডলি বার্ট হাইস্কুলের মাঠে যে দুর্গাপুজো হয় সেটির অধিকাংশ টাকা লক্ষ্মণই খরচ করেন বলে দাবি স্থানীয়দের। লক্ষ্মণের স্ত্রী বীণা হেমব্রম পাঁশকুড়ার বালিডাংরি উপ ডাকঘরের কর্মী। সরকারি চাকরির উপার্জন থেকে এই বিপুল সম্পত্তি করা যায় কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন করছেন এলাকাবাসী।

শেখ জামিরুদ্দিন নামে লক্ষ্মণের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘লক্ষ্মণ হেমব্রমদের সঙ্গে পাড়া ছাড়িয়ে দূরের বিভিন্ন ক্লাব, প্রতিষ্ঠানের ভাল সম্পর্ক। বহু ক্লাব, প্রতিষ্ঠান লক্ষ্মণের টাকায় উপকৃত হয়েছে।’’ লক্ষ্মণের বাল্যবন্ধু নবীন সান্নিগ্রাহি বলেন, ‘‘লক্ষ্মণ আমাদের নস্করদিঘি গ্রামের একটি মন্দিরে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে শিব লিঙ্গ বসিয়ে দিয়েছিল। ২০১৮ সালের পর থেকে লক্ষ্মণ এলাকার সমস্ত পুজো কমিটির অনুষ্ঠানে মঞ্চ আলো করে বসে থাকত। সে সময় ওঁরা স্বামী স্ত্রী দু'জনেই চাকরি করত। তাই সন্দেহ হয়নি। এখন মনে হচ্ছে তছরুপের টাকাতেই হয়তো এই সব করেছে।’’ সম্প্রতি লক্ষ্মণের পুত্রবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, তাঁরা এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। কারণ, লক্ষ্মণের পরিবার পাড়ায় কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না।

সূত্রের খবর, সাধারণ একজন পোস্ট মাস্টারের সম্পত্তির বহর দেখে মঙ্গলবার বিস্ময় প্রকাশ করেন ইডির আধিকারিকরাও। প্রিন্টার এনে লক্ষ্মণের যাবতীয় সম্পত্তির নথিপত্র প্রিন্ট করে নিয়ে যায় ইডি। আগামিকাল, শুক্রবার সিজিও কমপ্লেক্সে লক্ষ্মণকে হাজিরা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ইডির আধিকারিকরা। নিজের সম্পত্তি প্রসঙ্গে অবশ্য লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘ইডির আধিকারিকরা আমার বাড়িতে এসে সম্পত্তির নথিপত্র দেখে দেখেছেন। বলেছেন কাগজপত্র সব ঠিকই রয়েছে। আমাকে ৮ তারিখ সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। যে আর্থিক অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তার কোনও সত্যতাও নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panskura Enforcement Directorate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE