প্রতীকী ছবি।
টানাটানির সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাই পঞ্চায়েত থেকে কিছু সাহায্য পাওয়ার আশায় পাড়ার এক ফরওয়ার্ড ব্লক নেতার হাতে-পায়ে ধরেছিলেন মদিনার মা। কিন্তু গম্ভীর গলায় নেতা বলেছিলেন, ‘‘তুমি তো খাস কংগ্রেসের খাস লোক। ওদের কাছেই যাও। আমার কাছে এসেছ কেন?’’
ইসলামপুরের মল্লিকপাড়ার মদিনার মা কথা দিয়েছিলেন, ‘‘কথাটা আপনি ঠিকই বলেছেন। এত দিন কংগ্রেসকেই ভোট দিয়েছি। তবে আপনাকে কথা দিচ্ছি, এ বার সিংহের বুকেই ছাপ মারব।’’
তা কথাটা রেখেছিলেন মদিনার মা। কিন্তু সেই কথা রাখতে গিয়ে তিনি যা কাণ্ড করেছিলেন, সে গল্প আজও লোকের মুখে মুখে ঘোরে। বুথ থেকে তিনটি ব্যালট আর সিল আঁচলে বেঁধে সটান হাজির হয়েছিল সেই নেতার বাড়িতে। তাঁর সামনেই সিংহ চিহ্নে সিল মেরে ফের ফিরে আসেন ভোটকেন্দ্রে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু ততক্ষণে হইচই পড়ে গিয়েছে বুথে। প্রিসাইডিং অফিসার পাগলের মতো ঘুরছেন ঘরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। নাগাড়ে কিছু একটা করার অনুরোধ জানাচ্ছেন স্থানীয় নেতা ও মোড়লদের। ইতিমধ্যে হাঁফাতে হাঁফাতে বুথে ঢুকলেন মদিনার মা। সকলে জানতে চাইলেন, ব্যালট সিল নিয়ে তিনি কোথায় গিয়েছিলেন। গোটা ঘটনা তিনি খুলে বলেন। কিন্তু এ ভাবে ভোট দেওয়া নিয়ে বিস্তর জলঘোলা শুরু হয়। বামেদের দাবি, সাধারণ ভোটার। একটা ভুল করে ফেলেছেন। তাই বলে ভোটটা জলে যাবে! কংগ্রেসও নাছোড়, বাইরে থেকে ভোট দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই ভোট বাতিল করতে হবে।
মদিনার মা ব্যালট পেপার ফেরত নিয়ে এলেও ডোমকলের জরিমন বিবি তিনটি ব্যালট আঁচলে কষে বেঁধে রওনা দিয়েছিলেন বাড়ির পথে। ভোটকর্মীদের শত অনুরোধেও তিনি ব্যালট হাতছাড়া করতে রাজি হননি। ডোমকলের এক কংগ্রেস নেতা বলছেন, ‘‘কী কাণ্ড, ভাবুন!’’ জরিমনের এক গোঁ, ‘‘এ তো আমার ভোট। আমি কাউকে দেব না। ভোট বাড়িতেই রেখে দেব।’’ শেষতক বহু বোঝানোর পরে বেজার মুখে আঁচলের গিঁট খুলে ব্যালট পেপার বের করে দেন জরিমন।
রানিনগর সীমান্তের লালকুপ এখনও মনে রেখেছে বাহার শেখের স্ত্রীর ব্যালট-কাণ্ডের কথা। গ্রামের বাসিন্দা জুলফিকার আলি বলেন, ‘‘সকলে বলছিল, ভোট দেওয়া হয়ে গেলে কাগজটা কিন্তু বাক্সে ফেলবে। কিন্তু চট দিয়ে ঘেরা ঘরে বাক্স খুঁজে না পেয়ে শেষে হ্যারিকেনের ভিতরে সে ব্যালট ঢুকিয়ে দেয়। ব্যালটে আগুন লেগে নিভে যায় হ্যারিকেন।’’
জলঙ্গির এক বাম নেতা বলছেন, ‘‘এখন মানুষ অনেক সচেতন। ইভিএম থেকে ভিভিপ্যাট কত সব আধুনিক যন্ত্রপাতি! কিন্তু ভোটের হাওয়ায় এখনও ভাসে ব্যালট নিয়ে সেই সব বাহারি কাণ্ড!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy