Advertisement
E-Paper

তৃপ্তি, ভুল এবং যজ্ঞ

বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী কৃষ্ণ জোয়ারদার আর্য  আবার সকাল সকাল পথে নামলেও তাঁর আধেক সময় পুজো-আচ্চাতেই খরচ হয়ে গিয়েছে।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০১:২৪
বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণ জোয়ারদার আর্য। —নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণ জোয়ারদার আর্য। —নিজস্ব চিত্র।

কাকতালীয়ই বটে!

রবিবাসরীয় ভোট প্রচারের আধেক সময় একদা ‘গুরু-শিষ্য’, দু’জনকেই ‘গৃহবন্দি’ থাকতে হল। এক জন বহরমপুর লোকসভার কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। তিনি পূর্বসূচি মেনেই এ দিন সকাল থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত দলের জেলা কার্যালয়ে বসে ভোটের কাজে ব্যস্ত থেকেছেন।

অন্য জন অধীরের প্রাক্তন শিষ্য, তথা তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিডের এ দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কান্দি থানা এলাকায় ‘রো়ড শো’ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসনের কাছ থেকে সেই কর্মসূচির আগাম অনুমতি নিতে ভুলে যাওয়ায় দুপুর পর্যন্ত ঘরেই থাকতে হল তাঁকেও।

বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী কৃষ্ণ জোয়ারদার আর্য আবার সকাল সকাল পথে নামলেও তাঁর আধেক সময় পুজো-আচ্চাতেই খরচ হয়ে গিয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সকাল দশটা নাগাদ নীল-ছাই রঙের গাড়িটা থামল বহরমপুরে কংগ্রেসের জেলা কার্যালয়ের সামনে। পরনে কালো ট্রাউজার, ফুল স্লিভ শার্ট। পায়ে চকলেট রঙের জুতো। বহরমপুরের ‘বড়দা’, অধীর চৌধুরী হাসিমুখে গাড়ি থেকে নামলেন। এ দিন তাঁর ঠোঁটে হাসি লেগে থাকারই কথা ছিল। রবিবারের ভরা ভোটবাজারে তৃণমূল ছেড়ে বেশ কয়েক জন কর্মী কংগ্রেসে যোগ দেন। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন অধীর চৌধুরী।

মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস ঘোষণা করেন, ‘‘তৃণমূল থেকে এ দিন এলেন সাড়ে তিনশো জন কর্মী। তাঁরা সবাই কিন্তু অধীরদার নির্বাচনী এলাকা নওদা ও কান্দি বিধানসভার।’’

অধীর বলছেন, ‘‘ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, তৃণমূলের রক্তক্ষরণ বাড়ছে। মোহভঙ্গের ফলে প্রায় প্রতিদিনই তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে আসছেন লোকজন। ঘর

ওয়াপসি চলছে।’’

ডেভিড তখন সবুজ টি-শার্ট আর পাজামা পরে কান্দির বাড়ির একতলার ঘরে বসে। হাতে পৌনে এক গ্লাস লাল চা। সামনে ভরতপুর ও কান্দির দলীয় কর্মীরা। টেবিলে দৈনিক সংবাদপত্র। খবরের কাগজের শিরোনামে চোখ রেখে, লাল চায়ে চুমুক দিয়ে কর্মীদের সঙ্গে ভোটের কথা তোলেন তিনি। তার পরেই এলেন কান্দি পুরসভার কয়েক জন কাউন্সিলর ও পুরকর্মী। ডেভিড কেবল প্রাক্তন বিধায়ক ও লোকসভার প্রার্থীই নন, তিনি পুরপ্রধানও। কাউন্সিলর ও পুরকর্মীদের কাছ থেকে নাগরিক পরিষেবার বিষয়ে খোঁজ খবর নিলেন।

কচিকাঁচারাও তাদের ‘কাকু’র কাছে ব্যাট-বল, ফুটবল চাইল। ডেভিডও হাসিমুখে তাদের আবদার মেটালেন। ভরতপুরের এক নেতাকে ডেভিড বলেন, “খেলাধুলোর জন্য যেটা চাইবে দেখবেন। ক্যারাম বা তাসে কিন্তু আমি নেই।”

তাঁর পাখির চোখ অবশ্য লোকসভা ভোট। শরীরী ভাষা জানিয়ে দেয়, প্রাক্তন গুরুর বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইটা সহজ নয়। কর্মীদের তিনি সরাসরি বলেন, “আমি কিন্তু এলাকায় থাকছি। দলবিরোধী কোনও কাজ মেনে নেব না।’’

বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণ জোয়ারদার আর্য সাধু মানুষ। অন্য রবিবারের মতো এ দিনও তিনি স্নানের পরে প্রার্থনা করেন। তার পরে চা খেয়ে প্রচারে বের হন। সন্ন্যাসীর সাদা পোশাকে আপাদমস্তক আবৃত কৃষ্ণ পৌঁছন দলের জেলা কার্যালয়ে। সেখানে ২-৩ জন দলীয় কর্মী গড় রক্ষা করছেন। খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে কৃষ্ণ চললেন ইন্দ্রপ্রস্থে। সঙ্গে যজ্ঞের উপকরণ। বহরমপুর শহরের ইন্দ্রপ্রস্থে পঞ্চবটেশ্বর মন্দিরে যজ্ঞে বসে গেলেন প্রার্থী। ঘণ্টাখানেক ধরে উচ্চস্বরে মন্ত্র উচ্চারণ করেন।

ভিড় থেকে ছিটকে আসে, ‘‘এই মহারাজ কোথা থেকে এসেছেন গো?’’ দলীয় কর্মী বাপি দত্তের জবাব, ‘‘উনি এখানকার বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণ জোয়ারদার আর্য।’’ সাধু এ বার পায়ে হেঁটে ভোট প্রচারে বের হন। এক বালিকার অবাক হয়ে মায়ের কাছে জানতে চায়, ‘‘সাধুবাবাও ভোটের প্রার্থী কেন?’’ দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ সাদা শার্ট আর ঘিয়ে রঙের ট্রাউজার পরে রেজিনগরের দিকে রওনা দেন ডেভিড। প্রায় একই সময়ে তাঁর প্রাক্তন গুরু অধীর চৌধুরীও দলীয় কার্যালয়ে ডাল-ভাত খেয়ে নিজের দলের সাংসদ ‘ডালুবাবু’র প্রচারের জন্য ধুলিয়ানের দিকে রওনা দেন।

(সহ প্রতিবেদন: কৌশিক সাহা ও প্রাণময় ব্রহ্মচারী)

Adhir Chaudhury Krishna Jowardar Apurba Sarkar Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy