Advertisement
E-Paper

রক্তাক্ত কেশপুরে চলল গুলি, স্লোগান উঠল ‘ভাগ ভারতী ভাগ’

সবে ঝেঁতলা গ্রামে ঢুকেছে ভারতীর গাড়ি, আচমকাই মুড়ি মুড়কির মতো বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়।

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ২১:০৮
মন্দির থেকে পাঁচিল টপকে কেশপুর থানার নিরাপদ আশ্রয়ে ভারতী ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

মন্দির থেকে পাঁচিল টপকে কেশপুর থানার নিরাপদ আশ্রয়ে ভারতী ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

দিনের শুরুতেই প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে। ঝরেছিল রক্তও। দিনের শেষেও সেই রক্তপাত বন্ধ হল না। শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত অবস্থাতেই নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে মেদিনীপুর সদর হাসপাতালে পৌঁছলেন ভারতী।

রবিবার সকাল ছ’টার মধ্যেই তিনি দাসপুরের অস্থায়ী ঠিকানা থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। শিবতলা বুথে পৌঁছতেই প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় ভারতীকে। সেখানকার মহিলা ভোটাররা তাঁকে আটকে দেন। এমনকি বিজেপি এজেন্টকে বুথছাড়া করেন মহিলারাই। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিছু হঠতে হয়েছিল ভারতীকে। সেখান থেকেই রক্ত ঝরা শুরু।

মহিলা ভোটার এবং স্থানীয় মহিলা তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে পায়ের নখ উপড়ে যায় ভারতীর। চরম হেনস্থার মুখে পড়ে এক সময় কেঁদেও ফেললেন তিনি। তবে তিনি এই প্রতিরোধের মুখে পড়েও থেমে যাননি, দিনভর কেশপুরের মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন।

আরও পড়ুন: ঝাড়গ্রামে বিজেপি কর্মী খুন, ইটবৃষ্টি, গুলিতে রণক্ষেত্র কেশপুর​

বুথে ছাপ্পাভোট পড়ার অভিযোগ পেয়ে পৌঁছে যান দোগাছিয়ায়। ভারতী ঢুকতেই সেখানকার গ্রামবাসীরা তাঁকে ‘সোনা চোর’ বলে চেঁচাতে থাকেন। ‘সোনা চোর ভারতী’-র পাশাপাশি ‘ভাগ ভারতী ভাগ’ স্লোগানও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু সে সব কানে না তুলে ভোটকেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যান ভারতী। তখনও বিপদের আঁচ টের পাওয়া যায়নি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই কালো মাথার ভিড়ে ভরে যায় দোগাছিয়া। প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েন ভারতী ঘোষ। বিভিন্ন দিক থেকে শুরু হয় ইটবৃষ্টিও। এক সময় ভারতীকে সিআইএসএফ-এর নিরাপত্তার ঘেরাটোপ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করে উত্তেজিত জনতা।

এই পরিস্থিতিতে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় গ্রামবাসীদের। শুরু হয় লাঠিচার্জ। সংবাদমাধ্যমের গাড়িও ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে, ভারতীর প্রাণ সংশয়ের পরিস্থিতিও তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তারক্ষীরা শূন্যে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালান বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসীরা। তৃণমূলের অভিযোগ, সিআইএসএফ-এর ছোড়া গুলিতেই এক গ্রামবাসী আহত হন।

সেখান থেকে কোনও রকমে নিরাপত্তারক্ষীরা ভারতীকে উদ্ধার করে বার করে আনেন। পরে ভারতী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “বার বার অভিযোগ জানিয়েও নির্বাচন কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি থাকলেও, ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারেন, সে জন্যই ভোটকেন্দ্রে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি।”

সিআইএসএফ গুলি চালায় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র।

এখানেই থেমে থাকেননি ভারতী। এর পরে তিনি কেশপুর বাজারের কাছে আর একটি বুথ কেন্দ্রে পৌঁছন। বুথকেন্দ্র ঘুরে ফেরার পথে আবার পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কেশপুর থানা তাঁর গাড়ি আটক করে। পুলিশের দাবি, তিনি অনুমতি না নিয়েই ওই গাড়িতে চড়ছেন। অন্য দিকে ভারতী দাবি করেন, তিনি অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু এখনও অনুমতি দেওয়া হয়েছে কি না জানানো হয়নি। এখানে পুলিশ ও ভারতীর মধ্যে শুরু হয় বাগযুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত তিনি স্থানীয় একটি কালীমন্দিরে ধর্নায় বসেন।

তিনি যখন কালীবাড়িতে, তখন ধীরে ধীরে জড়ো হচ্ছিল তৃণমূল বাহিনী। কালীমন্দিরকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ভাবে ছোড়া শুরু হয় ইট। ইটের ঘায়ে আহত হন ভারতী-সহ তাঁর সঙ্গী ও সাংবাদিকদের একাংশ। ঘণ্টাখানেক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ছিল কেশপুর শহরে। এর পর মন্দিরের পাঁচিল টপকে পাশের থানায় গিয়ে পৌঁছন ভারতী. অনেক ক্ষণ সেখানেই বসেছিলেন ভারতী। দুপুর তিনটে নাগাদ কেশপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী তাঁকে এসকর্ট করে শহরের বাইরে নিয়ে আসে। বিধ্বস্ত, রক্তাক্ত ভারতী তাতেও থমকে যাননি। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যেই তাঁর কাছে খবর চলে এসেছিল ঝেঁতলায় ভোট দিতে পারছেন না গ্রামবাসীদের একাংশ। ভারতীর কনভয় ছুটতে শুরু করে ঝেঁতলার দিকে।

সবে ঝেঁতলা গ্রামে ঢুকেছে ভারতীর গাড়ি, আচমকাই মুড়ি মুড়কির মতো বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়। কয়েকশো যুবক ভারতীর গাড়ি ঘিরে ধরেন। পিছনে থাকা সংবাদমাধ্যমের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। ওই এলাকায় সংবাদমাধ্যমের হাত থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন উন্মত্ত যুবকরা। পরে সেখান থেকে সংবাদমাধ্যম ছাড়া পেলেও, আটকে দেওয়া হয় ভারতীকে। খবর পেয়ে দ্রুত কেশপুর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। সেখান থেকে বহু চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ভারতীকে নিরাপদে কেশপুর-মেদিনীপুর সড়কে নিয়ে আসা হয়।

আরও পড়ুন: বিজেপিকে ভোট দিতে বলার পাশাপাশি গুলিও চালাল কেন্দ্রীয় বাহিনী, অভিযোগ মমতার​

ভারতীর কনভয় সবে মেদিনীপুর শহরের দিকে এগোতে শুরু করেছে। এমন সময় কেশপুর থানার পুলিশ ভারতীর কনভয় আটকায়। রাস্তায় দাঁড়িয়েই তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, দোগাছিয়ায় কার নির্দেশে গুলি চলেছিল? গাড়িতে থাকা সিআইএসএফ-এর ডেপুটি কমান্ডান্ট পবণকুমারকে বলা হয় থানায় গিয়ে বয়ান দিতে। কিন্তু ভারতীর নিরাপত্তারক্ষীরা তা করতে অস্বীকার করলে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়।

সেখান থেকে ভারতীর গাড়িকে ছেড়ে দেওয়া হলেও, ফের মেদিনীপুর শহরে আটকানো হয়। আবার শুরু হয় নিরাপত্তারক্ষী-পুলিশের মধ্যে বচসা। তখন ভোট প্রায় শেষ লগ্নে। এই বচসার মধ্যেই ভারতী আহত সিআইএসএফ-এর জওয়ানদের নিয়ে পৌঁছে যান মেদিনীপুর সদর হাসপাতালে। এক জওয়ানকে ভর্তিও করতে হয়। চিকিত্সকরা ভারতীকেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি ভর্তি না হয়ে বাকি রক্ষীদের নিয়ে দাসপুরের দিকে রওনা হয়ে যান।

ভারতী সারা দিন ধরে যখন প্রতিরোধের মুখে পড়লেন ঘাটালে, তখন তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা দেব হাসিমুখেই নিজের লোকসভা কেন্দ্র চষে বেড়ালেন।

Lok Sabha Election 2019 Bharati Ghosh BJP Trinamool TMC Dev Ghatal West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy