Advertisement
E-Paper

অনুজদের ‘লাল-গড়ে’ ক্ষোভের বনে পদ্ম

জলকাদায় মাখামাখি মোরাম রাস্তা ধরে খানিক এগিয়ে মাটির দাওয়ায় দেখা পঞ্চানন মাহাতোর সঙ্গে৷ বৃদ্ধের গলাতেও আক্ষেপ, ‘‘দু টাকার চাল, বার্ধক্য ভাতা সব অনিয়মিত।’’

দেবাঞ্জনা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০১:৪৭
অনুজ পাণ্ডের ভাঙা বাড়ি। লালগড়ের ধরমপুরে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

অনুজ পাণ্ডের ভাঙা বাড়ি। লালগড়ের ধরমপুরে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

‘‘আমাদের কোনও শ্রী-ই নেই!’’

পড়ন্ত বিকেলে মুখ কালো করে বললেন ধীরেন মাহাতো। তাঁর স্ত্রী পুষ্প জুড়লেন, ‘‘গেল বচ্ছর মেয়েটার বিয়ে দিলাম। রূপশ্রী পাইনি। একশো দিনের কাজের টাকাও বহুদিন পাই না।’’

জলকাদায় মাখামাখি মোরাম রাস্তা ধরে খানিক এগিয়ে মাটির দাওয়ায় দেখা পঞ্চানন মাহাতোর সঙ্গে৷ বৃদ্ধের গলাতেও আক্ষেপ, ‘‘দু টাকার চাল, বার্ধক্য ভাতা সব অনিয়মিত।’’ ধীরেন, পঞ্চাননদের সাকিন ধরমপুর, লালগড়।

পাক্কা দশ বছর আগের জুন মাস। রাতারাতি শিরোনামে উঠে এসেছিল অধুনা ঝাড়গ্রাম জেলার এই তল্লাট। লালগড় সিপিএমের দাপুটে নেতা অনুজ পাণ্ডের বাড়ি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল মাওবাদীরা। বাড়ির সামনে কাঁধে একে ৪৭ ঝুলিয়ে তখন দাঁড়িয়ে মাওবাদী নেতা বিকাশ। কিছুটা দূরে সিপিএমের ধরমপুর কার্যালয়েও ভাঙচুর চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল আগুন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অনুজ ও তাঁর তুতো ভাই, আরেক সিপিএম নেতা ডালিম এখন নেতাই গণহত্যা মামলায় জেলে। সিপিএম অফিসটা খুলেছে, লাল নিশান উড়ছে, তবে ভোট মরসুমেও তা নিঝুম।

নিঝুম, একাকী দাঁড়িয়ে অনুজের ভাঙা বাড়িটাও। গোটা পাড়ায় এখনও প্রায় সবই মাটির বাড়ি এবং বেশ শ্রীহীন। পঞ্চায়েত থেকে জেলা থেকে রাজ্যপাট, ক্ষমতার পালাবদলেও তাঁদের অবস্থা ফেরেনি বলে ক্ষোভ ধরমপুরের। ভোটের লালগড়ে এ পাড়ায় তাই উড়ছে পদ্ম-পতাকা।

গোটা পাড়াটাই বিজেপিতে ঝুঁকেছে, জানালেন অনুজ-ডালিমদের আরেক তুতো দাদা বিমল পাণ্ডে। পরিবর্তনের সময় এলাকায় তৃণমূলের মুখ ছিলেন বিমল। সেই মানুষটা এখন বলছেন, ‘‘অনেক আশা করে লোকে তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছিল। কিন্তু পঞ্চায়েতে দুর্নীতি, নেতাদের চুরি এদের আমলের সীমা ছাড়িয়েছে। আমরা তাই এখন বিজেপিতে আস্থা রাখছি।’’ ধরমপুর পঞ্চায়েত অবশ্য তৃণমূলেরই দখলে৷ তবে গত বছর ভোটে একটি বুথে পদ্ম ফুটেছে।

জঙ্গলমহলের উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দ টাকা যে নিচুতলার একাংশে পৌঁছয়নি, শাসকদলের একশ্রেণির নেতার দুর্নীতি যে সে ক্ষেত্রে বাধা হয়েছে, নির্বাচনী জনসভায় তা কবুল করেছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একসময় ছত্রধর মাহাতোর ছায়াসঙ্গী শ্যামল মাহাতো এখন তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি। তাঁরও স্বীকারোক্তি, ‘‘সব কাজ হয়েছে, এটা বলা ঠিক হবে না।’’

কয়েক পা এগোলেই ধরমপুর পঞ্চায়েত অফিস। পঞ্চায়েত প্রধান রেখারানি সরেন দাবি করলেন, ‘‘প্রকল্পের সুবিধা না পাওয়ার কথা ঠিক নয়। আর রাস্তা সংস্কারের প্রস্তাব জমা পড়েছে। টাকা এলেই কাজ হবে।’’

এই হচ্ছে-হবের ফাঁক গলেই মাথা তুলছে পদ্ম। পুরনো গড়ে সিপিএমের অবস্থা সঙ্গীন। গত পঞ্চায়েতে ধরমপুরে প্রার্থীটুকুও দিতে পারেনি দল। জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে মানছেন, ‘‘মানুষের আশ্রয় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু খামতি ছিল। তবে লোকসভায় চাকা ঘুরবে।’’

বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় সৎপথীর দাবি, চাকা তাঁদের দিকেই ঘুরবে। সুখময় বলছেন, ‘‘সুদিন আনতে আমরাই যে বিকল্প মানুষ সেটা বুঝেছে। কারণ তারা দেখেছে, শাসক হিসেবে সিপিএমের থেকেও তৃণমূল কতটা ভয়ঙ্কর।’’

শাসকের দাপট আর দম্ভের পরিণতি জানান দেওয়া অনুজের ভাঙা বাড়ির মলিন দেওয়ালে বামেদের ভোটের লিখন। আর পঞ্চায়েত অফিসের আশপাশে উজ্জ্বল ঘাসফুলের দেওয়াল।

লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Lok Sabha Election 2019 Jhargram CPM BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy