Advertisement
E-Paper

উলুবেড়িয়ার হাওয়ায় গন্ধ ‘অন্য ফুল’-এরও 

বাতাসে যেন অন্য হাওয়া। আর সেই হাওয়ায় রয়েছে উত্তেজনার গন্ধ। সেই আবহে উলুবেড়িয়া লোকসভার যুদ্ধে কে থাকবেন দুইয়ে আর কে তিন নম্বরে? সেটাই এখন দেখার। 

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০৪:১০

ব্যবধান সাড়ে চার লক্ষের কিছু বেশি। আপাতদৃষ্টিতে সেই ব্যবধান মিটিয়ে ফেলা দুরূহ!

তবু বাতাসে যেন অন্য হাওয়া। আর সেই হাওয়ায় রয়েছে উত্তেজনার গন্ধ। সেই আবহে উলুবেড়িয়া লোকসভার যুদ্ধে কে থাকবেন দুইয়ে আর কে তিন নম্বরে? সেটাই এখন দেখার।

১৯৮০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিপিএমের একচেটিয়া রাজত্ব। তার পর সিপিএম-কে সরিয়ে সুলতান আহমেদের উত্থান। পাঁচ বছর পরে ফের জয়। কিন্তু হঠাৎই তাঁর অকালমৃত্যু। কিন্তু তাতেও আঁচড় কাটতে পারেনি বিরোধীরা। বরং গত বছর উপ-নির্বাচনে সুলতানের স্ত্রী সাজদা আহমেদ রেকর্ড ভোটে জয়ী হন। বিরোধীদের কথায়, ‘‘সুলতান আহমেদের অকালমৃত্যুতেই ভোটের ব্যবধান বেড়েছিল। কিন্তু এ বার আর সেটা হবে না।’’ গেরুয়া শিবিরের দাবি, ‌‘‘হাওয়া কাড়বে পদ্ম- ফুল।’’ আবার কেউ কেউ চাপা স্বরে বলছেন ‘‘নতুন করে মাথা তুলতে পারে লাল পতাকাও!’’ কিন্তু হঠাৎ এই পরিবর্তন কেন?

সাধারণ মানুষের একাংশের অভিযোগ, ‘‘এর জন্য দায়ী পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের সন্ত্রাস। অনেকেই সেই সময়ে ভোট দিতে পারেননি। আর সেই ক্ষোভে অনেকেই শাসক দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।’’ সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে হারানো মাটি ফিরে পেতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন সিপিএম প্রার্থী মাকসুদা খাতুন। ২০১১-র পর উলুবেড়িয়া কেন্দ্রের কোথাও সিপিএমের কোনও চিহ্ন ছিল না বলেই রাজনৈতিক মহলের দাবি। কিন্তু এ বারে মাকসুদা খাতুন যে ভাবে রাস্তায় নেমে এবং গ্রামে গ্রামে ঘুরে চলেছেন, তাতে সিপিএম সমর্থকেরা নতুন করে সাহস ফিরে পেয়েছেন। অনেকেই লাল পতাকা হাতে আবার বেরোতে শুরু করেছেন। মিটিং-মিছিল করছেন। সেখানে ভিড়ও হচ্ছে। যা দেখে মাকসুদা ভোট বাড়ার বিষয়ে আশাবাদী।

যদিও সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম সিপিএমের ভোট-ব্যাঙ্ক বাড়ার কথা মানতে রাজি নয়। আমতা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এক দোকানে থাকা যুবক তো বলেই ফেললেন, ‘‘এখানে সিপিএম এই মুহূর্তে যতই চেষ্টা করুক, হারানো জমি ফেরত পাবে না।’’ বছর তিরিশের ওই যুবক এমএ পাশ করেছেন। কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় ফ্রিল্যান্স কিছু কাজকর্ম করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি আগের সিপিএম সাংসদকে কখনও চোখেই দেখিনি। আমার মতো বয়সের বেশিরভাগ মানুষই তাঁকে চেনেন না। ফলে সিপিএম এখন ভোট চাইতে গেলে কাকে দেখে ভোট দেবে?’’ বরং এই যুবকের দাবি, ‘‘এ বার তৃণমূল আর বিজেপির ফিফটি-ফিফটি চান্স।’’

সিপিএম যখন নতুন করে মাটি শক্ত করছে বলে সাধারণ মানুষের একাংশ দাবি করছেন, তখন বিজেপি যে হাত গুটিয়ে বসে নেই তার বাস্তব ছবি দেখা গেল এলাকা ঘুরেই। বোঝা গেল তারা নিজের কায়দায় বেশ কিছু অঞ্চলের ভোটারকে প্রভাবিত করে ফেলেছে। বাগনান থেকে শুরু করে শ্যামপুর, আমতা, উলুবেড়িয়া উত্তর-দক্ষিণের বেশ কিছু গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ল দু’পাশের ধানখেত কিংবা পাট খেত ফুঁড়ে বেরোনো রাস্তায় সারি সারি জোড়াফুলের মাঝে হঠাৎ-ই পদ্মফুলের পতাকার ঝাঁক। বিজেপির পতাকার এই সংখ্যা বৃদ্ধি শহুরে দৃষ্টিতে বেশ কটু ভাবেই ধরা পড়ল। সাধারণ গ্রামবাসী অবশ্য জানালেন, এই নতুন পতাকা আজকের নয়। গত পঞ্চায়েত ভোট থেকেই এর গুরুত্ব গ্রামবাসীদের মধ্যে বেড়েছে। বিজেপি সমর্থকদের দাবি, ‘‘জোড়াফুল যতই আশাবাদী হোক, তাদের ঘাড়ে ‘নতুন ফুল’ নিঃশ্বাস ফেলছে। ফলে সাজদার আর সাড়ে চার লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধান ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

যদিও শাসক দলের প্রার্থী সাজদা আহমেদ এই নতুন ফুল নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। বছরখানেক আগে স্বামী সুলতান আহমেদের অকাল মৃত্যুতে হঠাৎ করে তাঁকে প্রার্থী করা হয়। ঘরের ভিতর থেকে সোজা ভোটের ময়দানে। শুধু তাই নয়, সেই ভোটে এত বিরাট অঙ্কের ব্যবধানে আগে কেউ জেতেনি বললেই চলে। যদিও বিরোধী থেকে শুরু করে তাঁর দলের লোকেরাও মানেন যে, এতটা ব্যবধানে জয়ের কারণ ছিল সুলতান আহমেদের হঠাৎ মৃত্যু। সেই মৃত্যুর আবেগ ভোটে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু প্রার্থী হিসেবে তিনি কেমন? সাধারণ মানুষ এই এক বছরে তাঁকে খুব একটা না-দেখলেও সুলতানের স্ত্রী হিসেবেই তাঁর প্রতি মানুষের আবেগ এ বারের ভোটের প্রচারেও বেশ স্পষ্ট। কিন্তু এক জন মানুষের মৃত্যুর এক বছর পরেও কী করে এতটা আবেগ কাজ করতে পারে? এর জন্য অবশ্য সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে বিরোধীরাও সুলতানের জনসংযোগকেই এগিয়ে রাখছেন। সুলতান তাঁর নিজের কেন্দ্রের কোনও লোককে কখনও খালি হাতে ফেরাননি। যখনই কেউ কোনও দরকারে ডেকেছেন, তখনই তিনি হাজির হতেন। আর এটাই সাজদার তরফে একটা ‘প্লাস পয়েন্ট’ হয়েছে। যা এর আগে কোনও প্রার্থীর ক্ষেত্রেই কেউ দেখেননি। আর সাজদা কী বলছেন? তাঁর কথায়, ‘‘আমার ভোট কমবে না। বরং ২০১৮-র নির্বাচনের ব্যবধান যা ছিল তাই থাকবে।’’

TMC Lok Sabha Election 2019 BJP Uluberia CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy