অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
দেশের মধ্যে কোথায় কী পরিমাণ সম্পত্তি আছে, ভোটে লড়তে গেলে এত দিন তার খুঁটিনাটি জানাতে হত নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু এ বার থেকে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও ভোটপ্রার্থীর কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচন থেকেই নয়া এই নিয়ম কার্যকরী হতে চলেছে। একই সঙ্গে প্রার্থীকে জমা দিতে হবে বিগত পাঁচ বছরের আয়করের রিটার্ন।
রাজনীতির ময়দান হোক বা নির্বাচনী আঙিনা— বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে বারে বারেই আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তির অভিযোগ ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলি এমন অভিযোগে একে অপরের বিরুদ্ধে আঙুলও তোলে সর্বদা। বিজেপি হোক বা কংগ্রেস, এসপি থেকে বিএসপি, তৃণমূল হোক বা আরজেডি— বাদ যায় না কেউই। সম্প্রতি যেমন এ রাজ্যেই সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী আয়কর দফতরে তৃণমূল নেতাদের নাম উল্লেখ করে তাঁদের সম্পত্তির খতিয়ান তুলে ধরেছিলেন। সেখানে এমন অভিযোগও ছিল, কোনও কোনও নেতার সম্পদের পরিমাণ গত পাঁচ বছরে ৩০০ থেকে ১ হাজার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই রকমের অভিযোগ রয়েছে অন্যান্য দলের বিরুদ্ধেও। তাদের কোনও কোনও নেতা-নেত্রীর বিদেশে টাকা গচ্ছিত রাখা আছে বলেও অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনের নতুন নিয়মের আতসকাচে এ বার সে তথ্যও যাচাই হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
কমিশন সূত্রে খবর, নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেলে এত দিন বিদেশে থাকা সম্পত্তির কোনও হিসাব দিতে হত না। এক বছরের আয়করের রিটার্ন জমা দিলেই হত। প্রার্থীর পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী অথবা স্বামী এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও এক বছরের আয়কর রিটার্নজমা দেওয়ার নিয়ম ছিল এত দিন। এ বার তাঁদেরকেও পাঁচ বছরের আয়করের হিসাব জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা রয়েছে কিনা, জানাতে হবে তা-ও।
আরও পড়ুন: প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকেই চুরি গিয়েছে রাফালের নথি! সুপ্রিম কোর্টে জানাল কেন্দ্র
আরও পড়ুন: ফলকে নাম নেই কেন? উত্তরপ্রদেশে দলের বিধায়ককে বৈঠকের মধ্যেই জুতোপেটা বিজেপি সাংসদের
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রকে একটি নোট পাঠানো হয় বলে কমিশন সূত্রে খবর। এর পরেই সংশোধন এনে মনোনয়নপত্রে নতুন নিয়ম জোড়া হয়। সংশোধিত সেই ফর্মে বিদেশে থাকা সম্পত্তির হিসাব দেখানোর জায়গা রাখা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ওই হলফনামায় কোনও প্রার্থী যদি এই বিষয়গুলোর কোনও একটি গোপন করেন এবং পরে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তা হলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের এই নয়া নিয়মকে স্বাগত জানিয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য,‘‘যাঁরা বেআইনি ভাবে বিদেশে সম্পত্তি করে রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যাতে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায়, তার পক্ষেই আমাদের লড়াই। অন্য দিকে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু কিছুটা সন্দিহান হলেও এই নয়া নিয়মে মোটের উপর আশাবাদী। তাঁর মন্তব্য,‘‘ নিয়ম করলেই হবে না। ক’জন নেতা তাঁদের বিদেশে গচ্ছিত সম্পত্তির হিসেব আদৌ জমা দেবেন সেটাও দেখতে হবে, কারণ অনেকেরই বিদেশে বেনামি সম্পত্তি রয়েছে। যদিও এই নিয়ম লাগু হওয়ায় আমরা আশাবাদী।’’
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy