উত্তর ২৪ পরগনায় লাঠিচার্জ কেন্দ্রীয় বহিনীর। নিজস্ব চিত্র।
বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী সাধারণ মানুষকে পদ্মফুল চিহ্নে ভোট দিতে বলছে— এই অভিযোগেই আজ উত্তপ্ত হয়ে উঠল শাসন এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা। তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা জনে জনে গিয়ে বলছেন, ‘কমল পর ভোট ডালো, নেহি তো ঠোক দেঙ্গে।’ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য এই ঘটনা বিপজ্জনক, তৃণমূলের তরফে বিবৃতি দিয়ে এ কথাজানিয়েছেন দলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।
সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটে রাজ্যের ৯টি কেন্দ্রে এ দিন ছিল ভোটগ্রহণ। দিনভর কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তা, বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশ করে ভোট করানোর অভিযোগ তোলে তৃণমূল।রবিবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতায় ভোট দেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট দিয়ে বেরিয়ে তিনিও অভিযোগ করেন, বিজেপির লোকজন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে সকাল থকে প্রভূত অত্যাচার করেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেপ্রতিবাদে নিউটাউন থানায় বেশ কিছুক্ষণের জন্য ধরনাতে বসেন বারাসত কেন্দ্রের তৃণমূলপ্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার।
সকাল সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১২টা— উত্তেজনা দেখায় দেয় কামারহাটি পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। অভিযোগ, উদয়পল্লি বেসিক প্রাইমারি স্কুলের সামনে ভেঙে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস। অহেতুক তাড়া করার পাশাপাশি ফেলে দেওয়া হয়েছে খাবার। এর পরই ঘটনাস্থলে আসেন কামারহাটি পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল সাহা। ঘটনাস্থলে এসে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী তৃণমূলের নিরীহ ছেলেমেয়েদের তাড়া করছে। অহেতুক অতিসক্রিয়তা দেখাচ্ছে নিরাপত্তারক্ষীরা।’’এর পর ঘটনাস্থলে আসেন বেলঘরিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ অভিষেক গুপ্ত। তাঁকে ঘিরে ধরেও বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
দিনভর উত্তেজনা ছিল বারাসত লোকসভা কেন্দ্রেও। রাজারহাট-নিউটাউনের যাত্রাগাছি নন্দননগর এলাকাতেও অভিযোগ ওঠে, জমায়েত হঠানোর নাম করে কেন্দ্রীয় বাহিনী তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করেছে।নিউটাউনের কদমপুকুর এলাকায় অভিযোগ ওঠে, সেখানে বুথ থেকে অনেক দূরে একটি জায়গায় কর্মী সমর্থকদের জন্য রান্না বান্না হচ্ছিল। সেখানে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী সমস্ত রান্নার সরঞ্জাম ফেলে দেয়। ক্যাম্প অফিস ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি ভেঙে দেওয়া হয় অফিস ঘরের চেয়ার-টেবিল-দরজা। বহিরাগতদের এলাকা থেকে হঠাতেই অভিযান চালানো হয় বলে পাল্টা দাবি করে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে বচসা বাধে তৃণমূলপ্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদারের। ঘটনায় প্রতিবাদে তিনি ধরনাতেও বসেন নিউটাউন থানায়।
অন্য দিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শাসন ও উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা। দেগঙ্গার চকআমিনপুরে নুরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথেও কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপিকে ভোট দিতে বলছে, এই অভিযোগ করে তৃণমূল। প্রতিবাদ করলে প্রতিবন্ধী যুবককেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মারধর করে, অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ভবানীপুরে ভোট দিতে গিয়ে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যোগসাজশের অভিযোগ তোলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘কারচুপির কোনও ঘটনা এখনও শুনিনি। তবে, যে ভাবে বিজেপির লোকজন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে অত্যাচার চালিয়েছে দিনভর, তা আগে কখনও দেখিনি।’’
তৃণমূলের তোলা এই অভিযোগের প্রসঙ্গে বসিরহাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী এবং রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারন সম্পাদক সায়ন্তন বসুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘শাসনে যতটা রিগিং করবে বলে তৃণমূল পরিকল্পনা করেছিল, ততটা করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনী রুখে দিয়েছে। সেই জন্য বাহিনীর উপরে এত রাগ। শাসনে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে রিগিং করতে চেয়েছিল। শাসন থানার আইসি নিজে সেই পরিকল্পনার শরিক ছিলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে তিনি অসহযোগিতা করেছেন। তাঁর নামে দিল্লিতে অভিযোগ জমা পড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy