ক্ষুব্ধ: স্বামীর স্মৃতি আঁকড়ে গুলবাহার। নিজস্ব চিত্র
কেটে গিয়েছে এক বছর চার মাস। শোক বদলে গিয়েছে ক্ষোভে। সেই ক্ষোভও আর শুধু একটি পরিবারের মধ্যে চাপা নেই। ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে। জেলার অনেক জায়গাতেও।
দু’বেলার অন্ন জোগাড়ের জন্য পাড়া উজার করে বহু লোক পাড়ি দেন ভিন্ রাজ্যে। তাদের বাড়ির লোক উদ্বেগে থাকেন, কখন কী হয়! মালদহের কালিয়াচকের সৈয়দপুর গ্রামের আফরাজুল খান ও তাঁর পরিবারও ছিল তেমনই। আফরাজুলের স্ত্রী ২০১৮ সালের এক শীতের বিকেলে খবর পান, রাজস্থানের কাকরোলি গ্রামে তাঁর স্বামীকে কুপিয়ে, গায়ে তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে খুন করা হয়েছে। মঙ্গলবার নিজের এক চিলতে ঘরে বসে গুলবাহার বলেন, ‘‘তার পরে রাজস্থানে সরকার বদলেছে। বিজেপির জায়গায় কংগ্রেস এসেছে। কিন্তু আমরা বিচার পেলাম কই? এক চিলতে সাহায্যও তো নতুন সরকার করেনি।’’
সৈয়দপুর গ্রামের মানুষেরও বক্তব্য একই। তাঁরা জানাচ্ছেন, আফরাজুলের পরিবারের পাশে যদি ওই রাজ্যের নতুন সরকার দাঁড়াত, তা হলে পুরো গ্রামই ভরসা পেত। আফরাজুলদের প্রতিবেশী সহিদুল ইসলামের কথায়, ‘‘গুলবাহাররা সাহায্য পেলে বুঝতাম, আমাদের ভাল-মন্দ কিছু হলেও সরকার পরিবারের পাশে দাঁড়াবে।’’ এই পুরো এলাকায় সাক্ষরতার হার কম। এলাকায় কর্ম সংস্থানের সুযোগও বিশেয নেই বলে দাবি।
দিলওয়ার শেখ বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে তো যেতেই হবে। না হলে খাব কী? কিন্তু সরকার যদি বিপদে পাশে থাকে, তা হলে পরিবার নিয়ে ভয় কমে।’’ তবে
আফরাজুল-কাণ্ডের পরে সৈয়দপুরের রাস্তা মেরামতি হয়েছে। ভিন্ রাজ্যে যাওয়া কমাতে একশো দিনের কাজে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় জালুয়াবাথাল গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের সাকিল আহমেদ।
কিন্তু এইটুকু যথেষ্ট নয় বলেই সৈয়দপুরের দাবি। তাঁদের এখন আফরাজুলের প্রতি সহানুভূতির কথা শুনলে তাই চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। রুম খান বলেন, ‘‘প্রথম প্রথম কত লোক। কত প্রতিশ্রুতি! এখন কোথায় সে সব? সবাই ভুলে গিয়েছে।’’ গুলবাহার বলেন, ‘‘অনেক দলই এসেছিল। তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী আমার বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। মেজ মেয়েকে একটা অস্থায়ী সরকারি চাকরি দিয়েছেন। তাই সংসার কোনওরকমে চলে যাচ্ছে।”
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাজস্থানে মামলাটির কী অবস্থা তা-ও তাঁরা জানেন না। শুধু মামলার চার্জশিটের কপি ডাকযোগে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। বিজেপি সরকার যখন ছিল, তখন
একবার ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে এসেছিলেন এক আধিকারিক। তারপর থেকে ওই রাজ্যের সরকারের সঙ্গে এক রকম কোনও যোগাযোগই নেই গুলবাহারদের। তিনি বলেন, ‘‘কেউ ভোট চাইতে এলে এই সব কথাই বলব।’’ প্রতিবেশী রুম খানের কথায়, ‘‘আর বলব, প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy