Advertisement
E-Paper

‘দল চাইলে ২০২১-এর লড়াইয়ে আমি থাকব’

সরাসরি রাজনীতি তাঁদের জগৎ নয়। তবু এক সময়ে লড়েছিলেন ভোটের ময়দানে। সেখান থেকে আজ তাঁরা অনেকটাই দূরে। এ বারের ভোট নিয়ে কী বলছেন?সরাসরি রাজনীতি তাঁদের জগৎ নয়। তবু এক সময়ে লড়েছিলেন ভোটের ময়দানে। সেখান থেকে আজ তাঁরা অনেকটাই দূরে। এ বারের ভোট নিয়ে কী বলছেন?

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫০
মঙ্গলবার হুগলির পাণ্ডুয়ায় তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে দেওয়াল লিখনে তিনি।  —নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলবার হুগলির পাণ্ডুয়ায় তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে দেওয়াল লিখনে তিনি। —নিজস্ব চিত্র।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর। ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড়দের কোলে চড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ডার্বির মাঠ ছাড়ছেন তিনি। মোহনবাগানের ওকোলি ওডাফা লাল কার্ড দেখার পরে সমর্থকদের ছোড়া ইটের ঘায়ে তিনি মাঠেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। সে দিন কোনওমতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে আর মাঠে নামেনি তাঁর দল মোহনবাগান। তবে হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে রহিম নবির প্রথম কথা ছিল, ‘‘স্কোর কী হল?’’

সেই সময়ে মোহনবাগানের দল না নামানোর সিদ্ধান্তে প্রবল বিতর্ক হয়েছিল। আই লিগের নিয়ম লঙ্ঘন করার জন্য এআইএফএফ-এর শাস্তির মুখেও পড়তে হয় শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবকে। অসুস্থ অবস্থায় দলের হয়ে খোলা চিঠি লিখে নবি বলেন, ‘শাস্তির কথা শুনে মর্মাহত। দর্শক এবং খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই মোহনবাগান দ্বিতীয়ার্ধে দল নামায়নি। আমি সে দিন মারাও যেতে পারতাম। আমার মৃত্যুই হয়তো দল এবং আমার সতীর্থদের এই শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারত’। পরে জরিমানা হলেও দু’বছর আই লিগ না খেলার নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় মোহনবাগানের উপর থেকে।

৯ ডিসেম্বর দিনটিকে অনেকেই ভারতীয় ফুটবলের খারাপ দিন বলে থাকেন। মঙ্গলবার সকালে পান্ডুয়ায় হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগের হয়ে প্রচারের মধ্যেই সেই ডার্বির প্রসঙ্গ উঠল। সে দিনের সেই আহত ফুটবলার বললেন, ‘‘হারুক-জিতুক, সৈয়দ রহিম নবি দল ছাড়ে না। ফুটবলার হয়ে দলের পাশে থেকে চিঠি দিয়েছি। এখন ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে যাওয়ার পরেও দলের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। পান্ডুয়ার মানুষ এখন ভাবছেন, নবিকে জেতালেই ভাল হত।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ময়দানে তাঁর নাম ‘ইউটিলিটি প্লেয়ার’। স্ট্রাইকার থেকে মাঝমাঠ— খেলতে পারেন যে কোনও ‘পজিশন’-এ। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে সেই নবিকেই পান্ডুয়া থেকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সিপিএম প্রার্থীর কাছে হেরে যান নবি। বললেন, ‘‘মাত্র ১,৩৯২ ভোটে হেরেছি। অনেককে দেখি, হারলেই জায়গা ছেড়ে চলে যান। আমি তা করিনি। করবই বা কী করে? আমি তো পান্ডুয়ায় উড়ে আসিনি। পান্ডুয়া আমার জন্মভূমি। আমি পান্ডুয়ার ছেলে।’’ তবু হার কেন? নবির স্পষ্ট জবাব, ‘‘অনেকেই চাননি, আমি টিকিট পাই। আমার দলের লোকেরাই আমায় হারিয়ে দিয়েছেন। তবে হার-জিত নিয়েই একটা খেলোয়াড়ের জীবন। হার মেনে নিয়েই খেলোয়াড়কে পরের ম্যাচের জন্য তৈরি হতে হয়। তবে ভোটের সময়ে আমার জন্য যাঁরা খেটেছিলেন, তাঁদের কথা ভেবে খারাপ লাগে।’’

তৃণমূল সূত্রের দাবি, চলতি লোকসভা ভোটেও পান্ডুয়ায় দলীয় কোন্দল তাঁদের চিন্তায় রেখেছে।

২০১৬-র বিধানসভা ভোটের প্রার্থী নবির বিরুদ্ধে থানাতেও অভিযোগ দায়ের করেছেন সেখানকার তৃণমূলের একাংশ। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই নবি বললেন, ‘‘এখানকার পুরনো তৃণমূল নেতাদের মানুষ আর নিতে পারছেন না। ওঁরা অনেক অত্যাচার করেছেন। তা ছাড়া রাজনীতি খুব জটিল বিষয়। দু’দিন আগে এক নেতার সঙ্গে তৃণমূল ভবনে বসেছিলাম, আজ তিনি বিজেপিতে! রোজ দলবদল হচ্ছে।’’

তিনিও কি এই ভোটের মরসুমে দলবদলের ডাক পেয়েছেন?

নবি বললেন, ‘‘বিজেপি ফোন করেছিল। কথা বলেছে। কিন্তু, আমি টাকার জন্য দল করতে আসিনি। ফলে টাকার জন্য দল ছাড়তেও পারব না। লক্ষ লক্ষ টাকা দিলেও যাব না। আমি এসেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে।’’ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘এই ভোটে যেখানে যে দাঁড়াক, দিদিই জিতবেন।’’ তবে অন্যের হয়ে প্রচারে নামলেও ভোটের ময়দান থেকে নবি নিজে এখন অনেকটা দূরে।

অনেকে এ-ও বলেন, ভারতীয় দল, তিন প্রধানের তাঁবুতে চুটিয়ে ফুটবল খেলা নবি বড্ড তাড়াহুড়ো করে ফেললেন। রাজনীতির সিঁড়ি চড়তে গিয়ে ফুটবলের মূল স্রোত থেকে হারিয়ে গেলেন...! প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়েই রোদচশমা খুলে ফেলে নবি বলেন, ‘‘কে বলে আমি হারিয়ে গিয়েছি? চাকরি এবং রাজনীতির পাশাপাশি এখনও রোজ প্র্যাক্টিস চালিয়ে যাচ্ছি। গত বছরই পিয়ারলেসের হয়ে কলকাতা লিগে খেলেছি। মহমেডান এস সি ক্লাবের সঙ্গেও আমি যুক্ত। তা ছাড়া রাজনীতি আমায় আমার গ্রামকে চিনিয়েছে। পান্ডুয়ার ২০৭টা গ্রাম চষে ফেলেছি আমি। সেখানে খেলোয়াড় নয়, মানুষ রহিম নবি অনেক জনপ্রিয়।’’

তবে কি ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ‘ইউটিলিটি প্লেয়ার’কে ব্যবহার করা উচিত ছিল? যেন প্রবল আপত্তিকর কিছু শুনে ফেলেছেন, এমন ভাবে বলে উঠলেন, ‘‘দিদি ভাল বুঝেছেন বলেই মিমি, নুসরত, প্রসূনদাদের দাঁড় করিয়েছেন। দল যে পজিশনে খেলতে বলেছে, বরাবর সেখানে খেলেছি। কখনও পারব না বলিনি। দল চাইলে ২০২১-এর লড়াইয়ে আমি থাকব...!’’

Lok Sabha Election 2019 Syed Rahim Nabi লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ সৈয়দ রহিম নবি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy