Advertisement
E-Paper

পদ্ম ঘিরেই দিন ফেরার স্বপ্ন দেখেন এন্তাজ-নিয়ামতরা, বাতি জ্বালেন জামশেদ ভবনের

কথা বলতে বলতেই এন্তাজের পাশে বসা রথীন মিদ্দার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন নিয়ামত। কেশপুর-১ ব্লকের আমরাকুর্চির বাসিন্দা রথীন ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী সিপিএম নেতা।

সিজার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ১৯:১০
কেশপুরের সিপিএম কার্যালয় জামশেদআলি ভবন।

কেশপুরের সিপিএম কার্যালয় জামশেদআলি ভবন।

বাড়ির পাঁচিলের বাইরে রাস্তার উপর একগুচ্ছ লাল পতাকা না থাকলে বাড়িটাকে চেনাই দুস্কর। রং চটা দেওয়াল। গ্রিলের ফটক জং ধরে জায়গায় জায়গায় ভাঙা। সেই দরজা পেরিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখলাম সুনসান। চওড়া বারান্দার পাশে ঘরগুলো দেখলেই বোঝা যায় দীর্ঘ দিন ব্যবহার হয়নি। কিন্তু বারান্দার টেবিলের উপর পড়ে থাকা টাটকা গণশক্তি জানান দেয় বাড়িতে কেউ না কেউ আছেন।

বেশ খানিক ক্ষণ ডাকাডাকির পর অন্ধকার পোড়ো ঘর থেকে যিনি বেরিয়ে এলেন, তিনি আমাকে চিনতে না পারলেও তাঁকে আমার চিনতে ভুল হয়নি। কেবল কেশপুর নয়, এন্তাজ আলিকে এক ডাকে এখনও চেনে গোটা মেদিনীপুরের মানুষ। তাঁর পিছন পিছন যিনি এলেন সেই নিয়ামত আলিও এক সময়ে তৃণমূল-সহ বাম বিরোধীদের কাছে এন্তাজের মতোই ‘কুখ্যাত’ ছিলেন।

পরিচয় দিতেই ম্লান হেসে এন্তাজ বলেন, ‘‘অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছেন।’’ পাশ থেকে সঙ্গী নিয়ামত বলে ওঠেন, ‘‘গোটা বাংলায় কেশপুরের মানুষ সবচেয়ে বেশি তৃণমূলের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।’’ এন্তাজ-নিয়ামতের কাছেই জানতে পারলাম, ঘাটালের বাম (সিপিআই) প্রার্থী তপনকুমার গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে অনেক কষ্টে কেশপুর বাজারে কয়েকটি পথসভা করতে পেরেছিলেন তাঁরা। তবে কেশপুরের গ্রামে গ্রামে ঢুকে প্রচারের কথা স্বপ্নেও ভাবেন না তাঁরা। এন্তাজ বলেন, ‘‘গ্রামে ঢুকলে তৃণমূল গাড়ি ভাঙচুর করে মারধর করবে। আমাদের যেমন করবে, তেমন গ্রামের মানুষ যাঁরা প্রার্থীকে দেখতে আসবেন, তাঁদেরকেও মারবে।”


কেশপুরের জামেশদ আলি ভবনে সিপিএম নেতা নিয়ামত আলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুর সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য এন্তাজ আলি (ডানদিকে)

কথা বলতে বলতেই এন্তাজের পাশে বসা রথীন মিদ্দার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন নিয়ামত। কেশপুর-১ ব্লকের আমরাকুর্চির বাসিন্দা রথীন ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী সিপিএম নেতা। এখন এই পার্টি অফিসই তাঁর ঠিকানা। রথীন বললেন, ‘‘বাড়ি ফেরা দূরে থাক, অসুস্থ ভাইকে দেখতে গিয়েছিল আমার ছেলে। তার পরেই ভাইকে তৃণমূল ডেকে বলেছে ছেলে যেন আর গ্রামে না যায়। ভাইকেও গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।”

কথার মাঝেই বাইরে থেকে ঢুকলেন এক যুবক। এন্তাজের উদ্দেশে বললেন, ‘‘বাইরে কয়েকটা ঝান্ডা পড়ে গিয়েছিল। তুলে দিয়েছি।’’ জানলাম যুবকের নাম শুকুর আলি। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম করার জন্য গত চার বছর ধরে আমার চাষ বন্ধ। জরিমানা করেছে পঞ্চাশ হাজার টাকা!” নিয়ামত বলেন, ‘‘শুনলেন তো। এর পর গ্রামে গিয়ে প্রচার! সে কারণেই বললাম, গোটা রাজ্যে কেশপুরে মানুষ সবচেয়ে বেশি অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।”

আরও পড়ুন, দিদির অপমান? নৈব চ! তাই খোঁচা দিয়েও জামাইবাবুর মান বাঁচিয়ে ফিরছেন দুর্গাপুরের মেয়র পারিষদ

এত ক্ষণ চুপ করে থাকা এন্তাজ আলি হঠাৎই তাঁর পুরনো ঢঙে টেবিল চাপড়ে বলে উঠলেন, ‘‘তবে এটাও মনে রাখবেন, এখনও কেশপুরের মানুষের মনে রয়েছে সিপিএম। ২০১১ সালে ওই পরিবর্তনের হাওয়াতেও আমরাই জিতেছিলাম। এর পর থেকে তো মানুষ ভোটই দিতে পারেনি। ফল বুঝবেন কী করে? এখনও জোর গলায় বলছি, কেশপুরে আজকে যদি মানুষ ভোট দিতে পারে, তা হলে তৃণমূল সাফ হয়ে যাবে গোটা ঘাটাল থেকে।”


কেশপুরের সিপিএম কার্যালয় জামশেদআলি ভবনের বাইরে প্রচুর পতাকা।

এন্তাজ-নিয়ামতের কথা শুনে মনে হল, রাজ্যে ২০১১ সালে পরিবর্তন এসেছে, শাসক-বিরোধীর অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু কোনও পরিবর্তনই ছুঁতে পারেনি কেশপুরকে। তাই ওঠার সময় নিয়ামত বলেন, ‘‘এটা স্বীকার করতে লজ্জা নেই যে, আমরা আমাদের কর্মী সমর্থকদের রক্ষা করতে পারিনি। তাই আদর্শ পরে। আগে তো মানুষকে বাঁচতে হবে। তাই তৃণমূলকে সরাতে যদি আমাদের সমর্থকরা অন্য কোনও দল এমনকি বিজেপিকেও ভোট দেয়, তাতে আমি বারণ করতে পারি না।” জামশেদ ভবনে, জামশেদ আলির আবক্ষ মূর্তির সামনে যেখানে এন্তাজ-নিয়ামত বসেছিলেন, সেখানে জ্যোতি বসু থেকে সরোজ মুখোপাধ্যায়, অনিল বিশ্বাসরা একটা সময়ে বসে গিয়েছেন।

আরও পড়ুন, মরে গেলেও বিজেপির স্লোগান আমার মুখ দিয়ে বেরোবে না, রানিবাঁধে বললেন মমতা

কেশপুরের মানুষ ভোট দিতে পারবে কি না, তা জানা যাবে আগামী ১২ মে। কিন্তু ফের এক বার প্রমাণ হয়ে গেল, কেশপুর আজও অপরিবর্তিত। প্রায় বিশ বছর আগে এন্তাজ-নিয়ামতরাই অভিযোগ করতেন, বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সন্ত্রাস চালানোর চেষ্টা করেছে তৃণমূল। সেই বিজেপি এখনও প্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক ভাবে বিতর্কিত মেদিনীপুরের এই ছোট্ট ভূখণ্ডে।

এন্তাজ-নিয়ামতদের কেশপুরের পাট চুকে গিয়েছে অনেক দিন আগেই। জামশেদ ভবনের সেই পুরনো জৌলুস ফেরার স্বপ্ন নিয়ে এখনও রোজ সকালে মেদিনীপুরের ভাড়া বাড়ি থেকে জামশেদ ভবনে ‘বাতি দিতে’ আসেন তাঁরা। অপেক্ষা করেন সুদিন ফেরার।

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Mamata Banerjee CPM TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy