Advertisement
E-Paper

গনিখানের আবেগে ভাসছে মালদহ, মৌসমের পথের কাঁটা ‘ধোঁকাবাজ’

বুলবুলিচন্ডি বাস স্ট্যান্ডেও চর্চা ‘ধোঁকাবাজ’ নিয়ে — লোকসভা ভোটের মুখে এমনই কিছু বাছাই করা শব্দে সরগরম হয়ে উঠেছে দুই মালদা।

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:১১
মৌসম বেনজির নূর ও ঈশা খান চৌধুরি। নিজস্ব চিত্র।

মৌসম বেনজির নূর ও ঈশা খান চৌধুরি। নিজস্ব চিত্র।

ইংরেজবাজারে হোটেল খোঁজার আগে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দেওয়ার সময়েই ‘বেইমান’ শব্দটা প্রথম কানে ঠেকল। পরে হবিবপুরের দিক যখন গাড়ি ছুটছে তখনও একটি রাজনৈতিক দলের মিছিল থেকে স্লোগান উঠছে ‘বিশ্বাসঘাতক’-কে ভোট নয়। বুলবুলচণ্ডী বাসস্ট্যান্ডেও চর্চা ‘ধোঁকাবাজ’ নিয়ে। লোকসভা ভোটের মুখে এমনই কিছু বাছাই করা শব্দে সরগরম হয়ে উঠেছে দুই মালদহ। নদী ভাঙন, বন্যা, পানীয় জলের অভাব, আর্সেনিক, সীমান্ত অনুপ্রবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলি এর মাঝে যেন ঝিমিয়ে গিয়েছে।

কংগ্রেসের গড় মালদহে পঞ্চায়েত ভোটে কয়েকটি ব্লক বাদ দিলে বাকি গ্রাম পঞ্চায়েতে পায়ের তলার জমি কিছুটা শক্ত হয়েছে তৃণমূলের। লোকসভা নির্বাচনে জয়ের গন্ধ পেতেই এ বার বরকত গনিখান চৌধুরীর খাসতালুক, মালদহের সেই জমি ছিনিয়ে নিতে চাইছে তৃণমূল। এই রাজনৈতিক লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তাস’ কোতোয়ালি ভবনেরই বাসিন্দা মৌসম বেনজির নূর

ভোটের মুখে মৌসমের এই দলবদল কংগ্রেস কর্মীরা তো বটেই, মালদহের একাংশের মানুষও খুব একটা ভাল ভাবে নেয়নি, তা গ্রামে গ্রামে ঘুরলে টের পাওয়া যাবে। চাঁচলে সভা করতে এসে খোদ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী সুরটা বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন। গোটা মালদহ এখনও সে কথাই আওড়াচ্ছে। রাহুল বলেছিলেন, “আপনাদের ভোট নিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী অন্য দলে চলে গিয়ে ধোঁকা দিয়েছে। ধোঁকা দিয়ে কংগ্রেসকে শেষ করা যায় না।’’

সেই ধোঁকা থেকে ভোটবাজারে ‘বেইমান’, ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘ধোঁকাবাজ’ শব্দগুলোই যেন মৌসমের পথে ‘কাঁটা’ হয়ে উঠেছে! ভোটবাক্সে এর প্রভাব পড়বে কি না, তা ফল বেরোলেই বোঝা যাবে। কিন্তু এই শব্দগুলির মোকাবিলা করতে হচ্ছে মৌসমকে। বোঝাতে হচ্ছে, আমি কংগ্রেস ছাড়লেও, আপনাদের মৌসমই রয়েছি।

আরও পড়ুন: পণ্ডিতজি আর নেই, ম্যাডামের দুয়ারে বসে পুত্তনের চোখ ভিজে যায় আবেগপ্রবণ গাঁধী দুর্গে

কংগ্রসেকর্মীরা মৌসমের নামে স্লোগান তুললেও, ব্যক্তিগত আক্রমণে না গিয়ে মালদহ উত্তরের প্রার্থী ঈশা খান চৌধুরী নিজস্ব ভঙ্গিতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ভালই বোঝেন, একই পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে নামতে গেলে আরও সতর্ক হতে হয়। ঈশা সম্পর্কে মৌসমের দাদা। দু’জনেই আবার কোতোয়ালি ভবনের বাসিন্দা!

জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি দিনই অসংখ্য মানুষ তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে কোতোয়ালি ভবনে ভিড় করেন। এত দিন তাঁদের কাছে ছবিটা অন্য রকমই ছিল। গনিখানের উত্তরসূরি মৌসম চলে যাওয়াটা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না এখানকার মানুষ।

মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরীর (ডালু) সঙ্গে দেখা করতে এসে আমগাছের ছায়ায় ঠেস দিয়ে বসেছিলেন জামির মোল্লা। সেখানেও আলোচনা, “কারও উপর রেগে গেলে বরকত মিঞার মুখেও বেইমান শব্দটা শোনা যেত। রাহুল এসে যেন নতুন করে বরকত মিঞার কথাগুলো মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন...। আমরা মালদহে গনিখানের কংগ্রেস চাইছি। মৌসমের কী দরকার ছিল। কংগ্রেসই তো ওকে চিনিয়েছে?”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মালদহ জেলায় দু’টি লোকসভা কেন্দ্র হলেও, দক্ষিণ নিয়ে যেন কারও তাপউত্তাপ নেই। চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধুই মৌসম। সকাল ৭টার মধ্যে মৌসম এবং ঈশা ভোটপ্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন দলীয় কর্মীদের নিয়ে। সেখানে দক্ষিণ মালদহের প্রার্থী ডালুবাবুর যেন ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব। কোতোয়ালিতে পৌঁছে ভেবেছিলাম, সকাল সকাল দেখা হয়ে যাবে ডালুবাবুর সঙ্গে। কিন্তু কোথায় কী? সকাল ১১টা নাগাদ খুলল ডালুবাবুর দরজা। গা়ড়িতে উঠতেই ডালুবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম, এত দেরি কেন? জবাব এল: “৮০ সাল থেকে এটা আমাদেরই সিট। চিন্তা নেই, এ বারও আমারই থাকবে।”

সম্পর্কে ভাগ্নী মৌসমের চলে যাওয়ায় তিনি যে বিরক্ত, প্রশ্ন করার পর বুঝলাম। ডালুবাবুর ঝাঁঝালো জবাব: “কোনও দিনই মৌসম রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন না। ওঁর মা রুবি নূর রাজনীতির লোক ছিলেন। তাঁর হঠাৎ মৃত্যু হওয়ায় আমরাই মৌসমকে রাজনীতিতে আনি।”

মামা আক্রমণাত্মক হলেও, ডালুবাবুর ছেলে অর্থাৎ মৌসমের দাদা ঈশা এ সব বিতর্ক দূরে রেখে বললেন, “রাহুল গাঁধীর সভাই প্রমাণ করে দিয়েছে মানুষ কী চাইছে। একই পরিবারের মানুষ বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতেই পারেন। রাজনীতির মাঠে মৌসমকে এক ইঞ্চি ছাড়ব না।”

মৌসমকে এই প্রথম ভোটপ্রচারে নেমে বলতে হচ্ছে, তৃণমূলকে ভোট দিন। কেমন লাগছে তাঁর। মৌসমের কথায়: “পারিবারিক সম্পর্ক একই রয়েছে। আমি তো প্রথম জোটের জন্য দিল্লিতে দরবার করেছিলাম। তবে বাম-কংগ্রেস নয়, কংগ্রেস আর তৃণমূলের জোট চেয়েছিলাম। হল না। ভাল করে বুঝতে পেরেছিলাম উত্তর মালদহকে টার্গেট করেছে বিজেপি। আমি ধোঁকা দিইনি, বিজেপিকে আটকাতেই দিদির পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

মালদহ জেলা কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বললেন, “বিজেপি, বামের ভোট টানবে। কিন্তু যখন কংগ্রসের হাত চিহ্ন এবং বরকত গনিখান চৌধুরীর নাম ভোটপ্রচারে চলে আসে, তখন মালদহের মানুষের আবেগ জুড়ে যায়। তৃণমূল কি তা ভুল প্রমাণ করতে পারবে?”

Lok Sabha Election 2019 Malda Mausam Noor Congress মালদা কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ মৌসম বেনজির নূর ঈশা খান চৌধুরি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy