Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বড়মার মহোৎসব যেন ভোটপ্রস্তুতির মঞ্চ

বীণাপাণি ঠাকুরের স্মরণে আয়োজিত মহোৎসবকে ঘিরেও চলল রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি।

প্রচার: মহোৎসবেই প্রচার শুরু মমতা ঠাকুরের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

প্রচার: মহোৎসবেই প্রচার শুরু মমতা ঠাকুরের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৮:০০
Share: Save:

জীবদ্দশায় তাঁকে কাছে টানতে রাজনৈতিক দলগুলি কম চেষ্টা করেনি। মতুয়াদের বড়মা, বীণাপাণি ঠাকুরের মৃত্যুর পর এ বার তাঁর স্মরণে আয়োজিত মহোৎসবকে ঘিরেও চলল রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি।

বৃহস্পতিবার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে দু’টি আলাদা মহোৎসবের আয়োজন করা হয়ছিল। একটি আয়োজন করেছিল বড়মার ছোট ছেলে, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের পরিবার। অন্যটির আয়োজক ছিল বড়মার বড় বৌমা, বনগাঁর সাংসদ মমতা ঠাকুর। এ দিন সকাল থেকেই ঠাকুরবাড়িতে মতুয়া ভক্তদের পাশাপাশি ছিল তৃণমূল ও বিজেপির নেতা-নেত্রী, কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, লোকসভা ভোটের আগে মতুয়াদের মধ্যে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর লড়াইয়ে এ আসলে তৃণমূল ও বিজেপির প্রতিযোগিতা।

ঠাকুরবাড়ি এবং সন্নিহিত এলাকায় বড়মা ও মুখ্যমন্ত্রীর কাট-আউট। তাতে বড়মার প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধাঞ্জলির ছবি। লেখা রয়েছে, ‘‘শ্রদ্ধেয়া বড়মার প্রয়াণে আমরা শোকাহত। আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি।’’ বড়মার ঘরের সামনেও দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর ওই শোকজ্ঞাপন বার্তা। তা ছাড়া ঘরে ও বারান্দায় রয়েছে বড়মার পরপর বেশ কিছু ছবি। মতুয়া ভক্তরা এসে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সেই সব ছবিতে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সকালেই হাজির ছিলেন। ছিলেন জেলার কয়েকজন বিধায়ক, পুরপ্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি বীণা মণ্ডল। মহোৎসবে খাওয়াদাওয়ার তদারকি করছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের তরফে এ দিন গোটা রাজ্য থেকে ২৫ হাজার মতুয়া ভক্তকে নিমন্ত্রণ করেছি।’’ মমতা সরেজমিন খেয়াল রাখছেন ভক্তরা ঠিকমতো খাচ্ছেন কিনা। সেই সময়ে কেউ খাবার টেবিল থেকেই মমতাকে ভরসা দিচ্ছেন, ‘‘কোনও সমস্যা হবে না, এ বারও আপনিই জিতছেন। আমরা সঙ্গে রয়েছি।’’ কারও প্রশ্ন, ‘‘আমাদের এলাকায় কবে প্রচার শুরু করবেন?’’ যা দেখে তৃণমূল নেতা বলেই ফেললেন, ‘‘আজ থেকেই সাংসদের প্রচার শুরু হয়ে গেল। একসঙ্গে অনেক মানুষকে হাতের কাছে পেয়েও গেলেন তিনি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ঠাকুরবাড়ির অন্য পাশে মঞ্জুলরাও আলাদা ভাবে মহোৎসবের আয়োজন করেছিলেন। ছিল খাওয়ার ব্যবস্থা। মঞ্চ বেঁধে চলছিল হরিসঙ্কীর্তন। বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ সেখানে আসেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। সঙ্গে জেলা বিজেপি সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সহ-সভাপতি বিপ্লব হালদার। বাইকে চেপেও অনেক বিজেপি কর্মী আসেন। বড়মার মৃত্যুর প্রসঙ্গে তুলে কৈলাস বলেন, ‘‘বড়মার চলে যাওয়াটা মতুয়াদের কাছে বড় ক্ষতি।’’ কয়েক মিনিটের ভাষণের পর তিনি গানও শোনান সমবেত ভক্ত-সমর্থকদের। কৈলাসের কণ্ঠে গান শুনে খুশি হন মতুয়া ভক্তরা। কৈলাস এ দিন কোনও রাজনৈতিক কথা বলতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘বড়মাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আজ কোনও রাজনৈতিক কথা বলব না।’’ঠাকুরবাড়িতে এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ বড়মাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন বাগদার বিধায়ক দুলাল বরও। সম্প্রতি তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। অভিযোগ, দুলাল বড়মাকে শ্রদ্ধা জানানোর পরপরই অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন তাঁর দিকে ধেয়ে এসে তাঁর উদ্দেশ্যে কটূক্তি করতে থাকে। ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও দেওয়া হয়। দুলাল দ্রুত ঠাকুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তখনও দুলালের পিছন পিছন কয়েকজনকে ধাওয়া করতে দেখা যায়। যদিও পরে দুলাল বলেন, ‘‘সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের আমন্ত্রণে এ দিন ঠাকুরবাড়ি গিয়েছিলাম। বড়মা ও মঞ্জুলকে শ্রদ্ধা জানানোর পরে কয়েকজন অপরিচিত যুবক কটূক্তি করেছিল।’’ ঘটনার পিছনে কি কোনও রাজনৈতিক দলের মদত রয়েছে? দুলাল জানিয়েছেন, ‘‘আমি ওদের চিনি না। ফলে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারছি না।’’ গোটা ঘটনায় ঠাকুরবাড়িতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বড়মার মহোৎসবে বিজেপির নেতাদের আসা নিয়ে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘রাজনৈতিক স্বার্থে ওরা ঠাকুরবাড়িতে এসেছেন। ভোটের ফল প্রকাশের পরে আর ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE