ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
তিনি ডাকাতদের ভয় পান না, বরং রুখে দাঁড়ান— এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কটাক্ষের জবাব এ ভাবেই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, ‘‘উনি বলছেন দিদি ভয় পেয়েছে। দিদি ডাকাতদের ভয় পায় না, রুখে দাঁড়ায়।’’
এ দিন ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডারের জনসভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘দিদির সারা শরীর মারে ক্ষতবিক্ষত। আপনাদের মতো ডাকাতদের দিদি ভয় পায় না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দিদি ডাকাতদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এত ‘আন্ডার এস্টিমেট’ করার কোনও কারণ নেই।’’
নিজের কথার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে মোদীকে পাল্টা আক্রমণ করেন মমতা। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘‘মোদী ভোটের সময় বসন্তের কোকিলের মতো আসেন। নাটক করেন।’’ আক্রমণ করেন বিজেপির প্রার্থীদের নিয়ে। আক্রমণ করেন গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেও। যে যে ক্ষেত্রে ভয়ের কথা বলছেন মোদী এবং বিজেপি নেতারা, তার সব ক’টি নিয়েই তিনি জবাব দেন তাঁর রবিবারের দু’টি জনসভা থেকে।
তোলাবাজি, অনুপ্রবেশকারীদের মদত প্রসঙ্গে মমতার পাল্টা জবাব, ‘‘বিজেপি কোচবিহারে এক জন আর্মস ডিলারকে (অস্ত্র বিক্রেতা) প্রার্থী করেছে। জঞ্জাল বলে তাকে আমরা দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তাকেই এখন বিজেপি কোলে তুলে নাচছে।’’ এর সঙ্গে মমতা যোগ করেন, ‘‘আসলে বিজেপির তো লোকই নেই। ওরা মানুষের জন্য কাজ করে না।’’ বিজেপির কোচবিহারের প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিককে নিয়ে দলের মধ্যেও দ্বন্দ্ব রয়েছে, বলছেন স্থানীয় লোকজনেরা। বিজেপির একটি অংশ, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দলটি করছেন, তাঁরাও সে কথা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন। নিশীথ প্রার্থী হওয়ার পরে কোচবিহারে বিজেপির পার্টি অফিসে গোলমালও হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে সেই সময়ে দলের জেলা সভানেত্রী মালতী রাভাকে বিবৃতিও দিতে হয়েছে। পরে অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দেয়, যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে, তাঁকে সামনে রেখেই প্রচারে নামতে হবে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
একই সঙ্গে মমতা এ দিন আলিপুরদুয়ারে বিজেপির প্রার্থী জন বার্লাকেও আক্রমণ করেন। ময়নাগুড়ি এবং ফালাকাটা, দু’টি সভা থেকেই তিনি বলেন, ‘‘তরাই-ডুয়ার্সে দাঙ্গা লাগিয়েছিলেন যে জন বার্লা, তিনিই এখন বিজেপির প্রার্থী।’’ আলিপুরদুয়ারের চা বাগান অঞ্চলে বার্লার প্রভাব ভাল। সে কথা মাথায় রেখেই তাকে প্রার্থী করা হয়েছে, বলছে বিজেপির স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। বার্লাকে নিয়েও দলের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে, দাবি ওই অংশের।
মমতা এ দিন মোদী সরকারের পাঁচ বছরের খতিয়ান তুলে ধরে তারও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে গদিতে থেকে মোদী কী করেছেন, তার কৈফিয়ত দিতে হবে।’’ সেই তালিকা তুলে ধরে মমতার বক্তব্য, ‘‘মোদীর আমলে দু’কোটি চাকরি গিয়েছে। ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। বাংলার কৃষক কিন্তু ভাল আছেন। এক কোটি কর্মসংস্থানও হয়েছে।’’ নোটবন্দির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘নোটবন্দির নামে জনগণের টাকা লুটে সেই টাকায় ক্যাডারদের রাস্তায় নামিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছেন!’’ মোদী থেকে অমিত শাহ, সকলেই বারবার পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি চালুর কথা বলছেন। জবাবে এ দিনও মমতা বলেন, ‘‘শুনে রাখুন, এখানে এনআরসি করতে দেব না।’’ মোদী যে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলেছেন, সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘জওয়ান মেরে জওয়ান প্রেম দেখাচ্ছে বিজেপি! সেনাবাহিনীর নামে মিথ্যে কথা বলছে।’’
সব শেষে মমতার মুখে এসেছে চৌকিদার প্রসঙ্গও। তিনি বলেছেন, ‘‘মোদী সাড়ে চার বছর বিদেশে ঘুরেছেন, ছ’মাস ধরে চৌকিদার সেজেছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভোটের পর চৌকিদারের চৌকি থাকবে, দার থাকবে না। কারণ, আমরা আসল চৌকিদার চাই। নকল চৌকিদার চাই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy