Advertisement
E-Paper

মূর্তি ভাঙা নিয়ে জোর তরজা, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রশ্নবাণে বিদ্ধ বিজেপি-তৃণমূল-পুলিশ

স্পেশাল ব্রাঞ্চের পক্ষ থেকে কলকাতা পুলিশকে নির্দিষ্ট করে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, অমিত শাহের রোড শোয়ের পথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্ষোভ দেখানো হতে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ২১:২১
অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ

অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ

সাহিত্যের সঙ্গে এখন সমাজের দর্পণ হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। ছোট ছোট ঘটনাও জনসমক্ষে চলে আসছে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের কল্যাণে। আর বড় ঘটনা হলে তো কথাই নেই— দিনভর চর্চা, আলোচনা-সমালোচনা। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত, পাল্টা অভিমত। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়েও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কারা মূর্তি ভাঙল, তা নিয়ে রাজনীতির কারবারিরা চাপানউতোর করে গিয়েছেন। সমান্তরাল ভাবে চলেছে ওয়েব-দুনিয়ার যুদ্ধ।

সোশ্যাল মিডিয়াতেও অবশ্য বিজেপি-তৃণমূলের উপস্থিতি রয়েছে। দোষ ঢেকে নিজেদের ঢাক পেটানোতে কেউই কম যান না। কিন্তু কী বলছে আম নেটিজেন। তাঁরা কিন্তু কাউকেই ছেড়ে কথা বলছেন না। কারা বেশি তাণ্ডব চালাল, কোন দলের সমর্থকরা বেশি মারমুখী ছিল, সে সব যেমন ছিল, তেমনই তুলে ধরেছেন একাধিক প্রশ্ন। আর সেই ‘সোশ্যাল জাস্টিস’-এর দিকে নজর রাখলে কোনও পক্ষকেই ধোয়া তুলসিপাতা বলা যাচ্ছে না। সেই সব প্রশ্নে যাওর আগে মঙ্গলবারের ঘটনায় সংক্ষেপে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

অমিত শাহের রোড শো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের সামনে আসতেই শুরু হয় তুমুল বিশৃঙ্খলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে গো ব্যাক মোদী স্লোগান তুলে কালো পতাকা দেখানো হয়। ইট-বোতল উড়ে আসতে থাকে মিছিল লক্ষ্য করে। পাল্টা বিজেপি সমর্থকরাও মিছিল থেকে ইট-পাটকেল ছোড়েন বলে অভিযোগ। এর পর বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গোটা চত্বর। ভাঙা হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তি। একটি বাইক এবং একটি সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা নিয়েই প্রচুর প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা।

আরও পড়ুন: নজিরবিহীন পদক্ষেপ কমিশনের, রাজ্যে কালই শেষ ভোটপ্রচার, অপসারিত স্বরাষ্ট্রসচিব

আরও পড়ুন: কে ভাঙল মূর্তি, বাইকে আগুন ধরাল কারা? ভিডিয়ো-সহ কমিশনে নালিশ ঠুকল তৃণমূল

যে কোনও বড় রাজনৈতিক কর্মসূচির আগে পুলিশ ও গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও জোগাড় হয়েছিল। তাতে স্পেশাল ব্রাঞ্চের পক্ষ থেকে কলকাতা পুলিশকে নির্দিষ্ট করে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, অমিত শাহের রোড শোয়ের পথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্ষোভ দেখানো হতে পারে। বিজেপিও পাল্টা প্রতিরোধ করতে পারে বলে রিপোর্টও দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরও পুলিশ সেই গন্ডগোল ঠেকাতে ব্যর্থ হল কেন? প্রশ্ন তুলেছে সোশ্যাল মিডিয়া।

হেভিওয়েট, ভিভিআইপিদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের রোড শোয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশকর্মী ছিল না বলেই মত সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদ মাধ্যমের। ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়াও সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে ওয়ালে।

ভোটেরভরা মরসুম। রাজনৈতিক বাতাবরণ এমনিতেই উত্তপ্ত। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি-তৃণমূল যুযুধান দুপক্ষের মধ্যে থেকেই উস্কানি, প্ররোচনা আসাতে পারে এটা আঁচ করার জন্য রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু বিজেপি বা তৃণমূল কোনও পক্ষ থেকেই সেই বিষয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সাবধান করা হয়নি। রাখা হয়নি নিয়ন্ত্রণের কোনও বন্দোবস্ত। সেই কারণেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কালো পতাকা দেখানো গণতান্ত্রিক আন্দোলন হলেও সেখান থেকে জলের বোতল, জুতো কেন মিছিলের দিকে উড়ে আসবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা।

উল্টো দিকে বিজেপি ছিল মিছিলের উদ্যোক্তা। তাদের আরও বেশি সাবধানী হওয়া উচিত ছিল। তৃণমূল যদি উস্কানি দিয়েও থাকে তাহলে আয়োজক হিসেবে বিজেপি কর্মীদের আরও সংযত থাকা উচিত ছিল। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বেরও উচিত ছিল রোড শোয়ে হাঁটা বিজেপি কর্মীদের সংযত করা। সেটা কেন করা হল না, বিজেপির দিকে এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।

কলেজ স্ট্রিটে অমিত শাহের রোড শো পৌঁছয় প্রায় সন্ধের দিকে। ওই সময় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পডু়য়ার সংখ্যা খুব কম থাকা উচিত। কিন্তু দেখা গিয়েছে প্রচুর ছাত্রছাত্রী ক্যাম্পাসে ছিলেন এবং কালো পতাকা দেখানো এবং গো ব্যাক স্লোগান তুলতে। তা ছাড়া ওই কর্মসূচির পুলিশি অনুমতি ছিল কিনা, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে ফেসবুক-টুইটারে। পুলিশ কেন আগাম সতর্কতা হিসেবে ক্যাম্পাস ফাঁকা করা বা ওই বিক্ষোভকারীদের গতিবিধি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখতে পারল না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

বিদ্যাসাগরের মূর্তি যেটি ভাঙা হয়েছে, সেটি ছিল কলেজের বেশ খানিকটা ভিতরে ঢুকে একটি ঘরে। বিক্ষোভকারীরা এত ভিতরে ঢুকে কী ভাবে তাণ্ডব চালাল, এবং পুলিশ কোথায় ছিল, তাঁদের আটকাতে পারল না কেন— এসব প্রশ্ন টুইটার-ফেসবুকের দেওয়ালে দেওয়ালে।

যে কোনও ঘটনার ক্ষেত্রে অন্যতম সাক্ষী থাকে সিসিটিভির ফুটেজ। শহর কলকাতার প্রায় অলি-গলি পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার আওতায় চলে এসেছে। আবার বিদ্যাসাগরে মূর্তিটি যে ঘরে ছিল, সেটিতেও কলেজ কর্তৃপক্ষের সিসিটিভি বসানো ছিল। প্রমাণ বলতে শুধু সংবাদমাধ্যমের এবং অল্প দু’-চারটি অপেশাদার মোবাইল ক্যামেরার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করছে। এখনও পর্যন্ত ঘটনার কোনও সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আসেনি। এখানেই সোশ্যাল মিডিয়া জানতে চাইছে, সিসিটিভির ফুটেজ কোথায় গেল? আদৌ কি কোনও ফুটেজ ধরা পড়েছে? পড়লে সেগুলি প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না কেন?

দু’পক্ষের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুললেও মূর্তি ভাঙার নিন্দায় একজোট সোশ্যাল মিডিয়া। বাংলার সংস্কৃতির অপমান, বাংলার ঐতিহ্যকে ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছে, এই অপরাধের ক্ষমা নেই— এ রকম বহু মন্তব্য-মতবাদ উঠে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একই সঙ্গে দোষীদের শাস্তির দাবিতেও সরব ওয়েব দুনিয়া।

Lok Sabha Election 2019 Vidyasagar College Vandalization Amit Shah BJP Mamata Banerjee TMC Social Media
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy