Advertisement
১৮ মে ২০২৪

টক্করে টানা সভা, মিছিল শুভেন্দুর

বিজেপির ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই তৃণমূল এমন কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

পটাশপুরে জনসভায় শুভেন্দু। —নিজস্ব চিত্র।

পটাশপুরে জনসভায় শুভেন্দু। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবদন
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৯ ০০:৫৫
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জেলায় ভোটপ্রচারে পা রাখবেন ৫ মে। ৬ মে আসছেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি অমিত শা। মোদীর জনসভা হলদিয়ায় এবং অমিত শা’র সভা করার কথা পাঁশকুড়ার হাউরে। তার আগেই নিজের জেলায় ভোটের মায়দানে বিজেপিকে যে তিনি এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বেন না তা জানিয়ে জেলায় মোদী, অমিতের আগেই পর পর তিনদিন কর্মসূচির ডাক দিলেন রাজ্যের পরিবহণ ও পরিবেশ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সেই সূচি মেনেই মঙ্গলবার ভগবানপুর, পটাশপুর, হলদিয়া ও চিরঞ্জীবপুরে ভোটের প্রচার শুরু করলেন তিনি।

বিজেপির ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই তৃণমূল এমন কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এ দিন হলদিয়া ও চিরঞ্জীবপুরে শুভেন্দু সভা ঘিরে অভিযোগ ওঠে, বিজেপির একাধিক বুথ সভাপতিকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে। সোমবার রাত থেকে এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ বিজেপির জেলা ও হলদিয়া শহর নেতৃত্ব। জেলা বিজেপির তরফে সভাপতি প্রদীপ কুমার দাসের অভিযোগ, ‘‘চৈতন্যপুরের রামচন্দ্রপুর, হলদিয়ার গিরিশ মোড়, হাজরা মোড় এবং ক্ষুদিরাম নগর সহ একাধিক এলাকায় বিজেপির কার্যকর্তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় অনেক দলীয় কার্যকর্তা লুকিয়ে রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ৫ মে হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানে মোদীর জনসভার জমির জন্য সম্মতি দিয়েছেন হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে ওই জনসভার সম্মতি চেয়ে জেলা প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল হেলিপ্যাড ময়দান পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি নিয়ে মিটিংও করেন জেলা নেতৃত্ব।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বন্দর ও শিল্পশহর হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভা ঘিরে যখন তৎপরতা শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরে, তখন শাসকদলের হেভিওয়েট নেতা শুভেন্দুর পরপর তিন দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বুধবার মে দিবসে হলদিয়ার দুর্গাচকে বিশাল মিছিল করবেন শুভেন্দু। ২ মে হলদিয়ার বাড়সুন্দরা গ্রামে সভা করার কথা তাঁর। পরপর তিন দিনে শুভেন্দুর এমন কর্মসূচিতে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব। ভারতীয় মজদুর সংঘের হলদিয়া শাখার সম্পাদক প্রবীর কুমার বিজলির অভিযোগ, ‘‘বিজেপির স্থানীয় কার্যকর্তাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য। যাতে প্রধানমন্ত্রীর সভা বানচাল হয়ে যায় তার জন্যই এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে।’’ যদিও বিজেপির অভিযোগ খারিজ করেছে শাসক দল।

হলদিয়ায় তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত মধুরিমা মণ্ডলের দাবি, ‘‘বিরোধীরা যে কেউ এখানে এসে প্রচার করতে পারেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর সভার আগে যে সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা উস্কানি ছাড়া কিছু নয়। ৫ তারিখের সভার কোনও প্রভাব পড়বে না আমাদের জেলায়।’’

প্রভাব যে পড়বে না, সেই সুর এ দিন শোনা গিয়েছে পটাশপুরের টেপরপাড়ায় শুভেন্দুর জনসভাতেও। কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারীর সমর্থনে সভায় কেন্দ্রে অবিজেপি সরকার গঠনে মানুষকে পাশে দাঁড়ানোর ডাক দেন শুভেন্দু। ধর্ম নিয়ে বিজেপিকে এ দিন কড়া ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘ভোট এলেই বিজেপি রঘুপতি রামচন্দ্রকে তাদের পোলিং এজেন্ট বানিয়ে ফেলে। ভোট মিটলে সব হাওয়া। রাম মন্দির তৈরি নিয়ে বিজেপি হিন্দুদের ভাঁওতা দিচ্ছে। পাঁচ বছরে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। ফের মানুষকে বোকা বানিয়ে রাম মন্দির তৈরির জিগির তুলে ভোট চাইছে।’’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘উনি (নরেন্দ্র মোদী) হিন্দুত্ব দেখাচ্ছেন আর পাকিস্তানে গিয়ে নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে তাঁর বাড়িতে পায়েস খাচ্ছেন। আর দিল্লিতে মানুষ দেখে ফেলার ভয়ে মসজিদে উঠছেন না। এটাই এঁদের নীতি। আমরা উন্নয়ন করেছি তাই ভোট পাওয়া আমাদের অধিকার। যারা দাঙ্গা করে তাদের একটাও ভোট নয়।’’ এদিনই সভার শেষে শুভেন্দু জানান, আগামী ৮ মে হলদিয়া হেলিপ্যাড ময়দানেই মোদীর পাল্টা সবা করা হবে। সেখানে হাজির থাকবেন চন্দ্রবাবু নাইড়ু।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ৬ মে হাউর লেভেল ক্রসিং সংলগ্ন মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন অমিত শা। তার জন্য ইতিমধ্যেই ৫৫ বিঘা জমির ওপর সভা করতে চেয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে লিখিত স্বীকৃতি আদায় করা গিয়েছে বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের।

দলের ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের সহ আহ্বায়ক সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘অমিতজির সভার জন্য প্রশাসনিক স্তরে সমস্ত অনুমতি নেওয়া হয়ে গিয়েছে। আমরা কুড়ি হাজার মানুষ বসার মতো আয়োজন করেছি। তবে ওই দিন জন সমাগম কুড়ি হাজার ছাড়িয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Narendra Modi Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE