Advertisement
E-Paper

মুকুলদের হতাশ না করেও সঙ্ঘের দাপট প্রার্থীতালিকায়, রাজনৈতিক মুখেই বেশি আস্থা রাখল বিজেপি

রাজ্যে ৪২টির মধ্যে ২৮টি আসনে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করল বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ১৯:৩০
বিজেপি প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করলেন জে পি নাড্ডা। ছবি: পিটিআই।

বিজেপি প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করলেন জে পি নাড্ডা। ছবি: পিটিআই।

দাপট বহাল রইল সঙ্ঘঘনিষ্ঠদেরই। তবে বাংলার জন্য বৃহস্পতিবার যে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করল বিজেপি, তাতে পুরনো এবং নতুনের মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টাও স্পষ্ট। রাজ্য বিজেপির পুরনো তথা প্রথম সারির নেতানেত্রীদের মধ্যে অধিকাংশের নামই এই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। বেশ কয়েকটি আসনে চিকিৎসক, অধ্যাপকদের টিকিট দিয়েছে বিজেপি, যাঁরা রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত মুখ না হলেও দীর্ঘ দিনের সঙ্ঘঘনিষ্ঠ। তবে মুকুল রায়-কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের হাত ধরে তৃণমূল এবং বাম শিবির থেকে যে সব বড় বা পরিচিত নাম সম্প্রতি বিজেপিতে সামিল হয়েছেন, টিকিট দেওয়া হয়েছে তাঁদেরও। যে সব আসনে তাঁরা লড়তে চেয়েছিলেন, সেখানেই তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে। ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টাটা পরিষ্কার সেখানেই।

নির্বাচনের কাজ এবং ব্যবস্থাপনা দেখভালের জন্যই সময় দিতে হবে রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতা-নেত্রীদের, তাই তাঁদের অধিকাংশকেই টিকিট দেওয়া হবে না—এই রকম একটা তত্ত্ব কিছু দিন ধরে ভাসতে শুরু করেছিল মুরলীধর সেন লেনে। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ই এই তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন। কিন্তু এর পাল্টা তত্ত্বও উঠে এসেছিল। প্রথম সারির নেতানেত্রীদের বাদ দিলে রাজ্য বিজেপিতে পরিচিত বা ওজনদার মুখ কটা? এই প্রশ্ন তোলা হয়েছিল কৈলাসের তত্ত্বের বিপরীতে। বাংলার ২৮টি কেন্দ্রের জন্য বিজেপি প্রার্থীদের নাম ঘোষিত হতেই দেখা গেল, কৈলাসের তত্ত্ব ধোপে টেকেনি। মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষ, দমদমে শমীক ভট্টাচার্য, উত্তর কলকাতায় রাহুল সিংহ, বসিরহাটে সায়ন্তন বসু, রায়গঞ্জে দেবশ্রী চৌধুরী, হুগলিতে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে টিকিট দিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে, পরিচিত বা জনপ্রিয় মুখ যাঁরা, কোনও অজুহাতেই এত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনী লড়াই থেকে তাঁদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না। আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিদায়ী সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় যে ফের আসানসোলেই টিকিট পাচ্ছেন, তা নিয়ে কারও সংশয় ছিল না।

প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং রাজ্য বিজেপির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক মুকুল রায়ের মতামত খুবই কাছাকাছি ছিল বলে বিজেপি সূত্রের খবর। কিন্তু বৃহস্পতিবার বাংলার যে ২৮টি আসনের জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল বিজেপি, সেই ২৮টি আসনে সংখ্যার নিরিখে কৈলাস-মুকুলদের পাল্লা দিলীপ ঘোষ বা সঙ্ঘঘনিষ্ঠদের চেয়ে কিছুটা হাল্কা। এই ২৮ আসনের সিংহভাগেই টিকিট পেয়েছেন বিজেপির দীর্ঘ দিনের নেতা-কর্মীরা বা সঙ্ঘঘনিষ্ঠরা। মুকুল রায়ের হাত ধরে সম্প্রতি অন্যান্য দল বা শিবির থেকে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন প্রার্থীতালিকায় তাঁরা কিছুটা হলেও সংখ্যালঘু। তবে মুকুল শিবির একটুও হতাশ নয় বলেও বিজেপির একটি অংশের দাবি। যে সব আসনে টিকিট দেওয়া হয়েছে মুকুলের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেওয়া লোকজনকে, সেগুলির অধিকাংশই কৌশলগত ভাবে বিজেপির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন এবার।

আরও পড়ুন: সারা দেশে ১৮২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা বিজেপির, মোদী বারাণসীতেই, গাঁধীনগরে অমিত

কোচবিহারে প্রার্থী করা হয়েছে নিশীথ প্রামাণিককে। ওই জেলায় কিছু দিন আগে পর্যন্তও সব চেয়ে প্রভাবশালী যুব তৃণমূল নেতা ছিলেন নিশীথ। গোটা জেলা জুড়ে তরুণ তৃণমূল নেতাটির দাপট এবং জনসংযোগ ছিল অভাবনীয়। পরে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে নিশীথের দূরত্ব বাড়ে। নিশীথ কিছু দিনের জন্য চোখের আড়ালে চলে যান, বিজেপিতে যোগ দিয়ে ফের জনসমক্ষে ফেরেন। এ বার নিশীথের জন্য কোচবিহারের টিকিটটাও আদায় করে নিলেন মুকুল-কৈলাসরা। কোচবিহার আসনটি নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের আশার প্রদীপ কিন্তু অত্যন্ত উজ্জ্বল। সেই আসনে নিশীথ প্রামাণিকের মতো তরুণ এবং দলে আনকোরা এক জনের জন্য টিকিট আদায় করতে পারা কিন্তু কম কথা নয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ঠিক একই ভাবে উত্তর মালদহ, বিষ্ণুপুর, ঘাটাল এবং ব্যারাকপুরও বিজেপির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন এবার। সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিধায়ক খগেন মুর্মুকে উত্তর মালদহে, তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া ঝান্ডা ধরা বিধায়ক অর্জুন সিংহকে ব্যারাকপুরে, বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খানকে বিষ্ণুপুরে এবং এক কালের তৃণমূলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আইপিএস হিসেবে যাঁর পরিচিতি ছিল, সেই ভারতী ঘোষকে ঘাটালের টিকিট পাইয়ে দেওয়াটাও মুকুল-কৈলাসদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সে চ্যালেঞ্জে তাঁরা সসম্মানে উতরে গিয়েছেন। উপরি পাওনা হয়েছে যাদবপুর। ওই আসনে অনুপম হাজরা টিকিট পেতে পারেন, মুরলীধর সেন লেনের পুরনো কর্তাদের অনেকেই তা ভাবেননি।

শ্রীরামপুরে প্রার্থী করা হয়েছে রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি দেবজিৎ সরকারকে। দেবজিৎ নিজে রায়গঞ্জের ব্যাপারেই বেশি উৎসাহী ছিলেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। কিন্তু শ্রীরামপুর আসনটিও বিজেপির জন্য খারাপ নয় বলে নেতৃত্বের বিশ্বাস। রাজ্যের যে আসনগুলি নিয়ে বিজেপির আশা সব চেয়ে বেশি, তার মধ্যে অন্যতম কৃষ্ণনগর। প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবেকে সেই কৃষ্ণনগরে টিকিট দিয়েছে দল। কল্যাণ সঙ্ঘের বেশ পছন্দের লোক। গত বছর আরএসএসের যে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় নাগপুরে গিয়েছিলেন, সেই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন কল্যাণ। সঙ্ঘ তথা সর্বভারতীয় বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ পছন্দ করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্য চন্দ্রকুমার বসুকেও। তাই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব খুব একটা আগ্রহী না হওয়া সত্ত্বেও চন্দ্র বসু টিকিট পেয়ে গিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতা থেকে।

আরও পডু়ন: ‘বকেয়া বেতন মেটান’, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি জেটের পাইলটদের

বারাসতে যাঁকে টিকিট দেওয়া হয়েছে সেই মৃণালকান্তি দেবনাথ পেশায় চিকিৎসক, বিদেশে কাজ করেছেন। বালুরঘাটের প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার হলেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।সঙ্ঘের সঙ্গে এই মৃণাল এবং সুকান্তর যোগাযোগ দীর্ঘ দিনের। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেও এঁদের প্রার্থী করার ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে।

এই আসনগুলি ছাড়া আলিপুরদুয়ারে বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়বেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা জন বার্লা, জলপাইগুড়িতে জয়ন্ত রায়, মালদহ দক্ষিণে শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী, জয়নগরে অশোক কান্ডারি, মথুরাপুরে শ্যামাপ্রসাদ হালদার, বীরভূমে দুধকুমার মণ্ডল, তমলুকে সিদ্ধার্থ নস্কর, ঝাড়গ্রামে কুঁয়ার হেমব্রম, আরামবাগে তপন রায় এবং বর্ধমান পূর্বে পরেশ চন্দ্র দাস।

এখনও রাজ্যের ১৪টি আসনে নাম ঘোষণা করা বাকি বিজেপির। কিন্তু যে ২৮ আসনে বিজেপি প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করল, তাতে স্পষ্ট, কোনও ফিল্মি বা অন্যান্য চমক নয়, এই নির্বাচনে রাজনৈতিক মুখের উপরই ভরসা রাখতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব।

লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ BJP Congress Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy