Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
TMC

লক্ষ্য রেকর্ড জমায়েত, আজই থাকা-খাওয়া পরিদর্শনে অভিষেক

জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী ঐক্যের প্রয়াসে যে সব দল পরস্পরের কাছাকাছি এসেছে, তাদের প্রায় প্রত্যেককেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ব্রিগেড সমাবেশে।

ব্রিগেড ২০১১: মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

ব্রিগেড ২০১১: মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:৩১
Share: Save:

মাঝে আর তিনটে দিন। দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহরটার বৃহত্তম ময়দান আগামী শনিবার শুষে নেবে জাতীয় রাজনীতির প্রায় সবটা আলো। ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ঘিরে তৎপরতা আর সাজ সাজ রব এখন তাই কতটা, ব্রিগেডে হাজির না হলে তা বোঝা বেশ কঠিন। পাঁচ-পাঁচটা মঞ্চ তৈরি হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সমাবেশটার জন্য। কিন্তু এই বিরাট প্রস্তুতি যজ্ঞটা আসলে শুধু সমাবেশের জন্য নয়। প্রস্তুতি এখন চলছে সব রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য, প্রস্তুতি চলছে ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে ইতিহাস গড়ে দেওয়ার জন্য।

লাখ পাঁচ-ছয় লোক জমানো গেলেই ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডকে বেশ ভরাট দেখায়। ব্রিগেডে এত দিন হওয়া অধিকাংশ সমাবেশেই অবশ্য তার চেয়ে বেশি জমায়েত হয়েছে। ১৯৭৫-এর ৩ মার্চ ব্রিগেডে ইন্দিরা গাঁধীর সমাবেশে বাঁধভাঙা জমায়েত নিয়ে আজও গর্ব করেন কংগ্রেস নেতারা। ২০০৬ সালে এক সুবিশাল সমাবেশের পরে রাজ্যের তৎকালীন শাসক বামফ্রন্ট দাবি করেছিল, ব্রিগেড জমায়েতের সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে। ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূলও ইতিমধ্যে দাবি করেছে যে, ব্রিগেডের ইতিহাসে বৃহত্তম জমায়েত তারাই করেছে। কিন্তু ১৯ জানুয়ারি যে সমাবেশ ব্রিগেডে হবে, তার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশই থাকবে না কারও সামনে— প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকা তৃণমূল নেতারা এমনই বলছেন।

জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী ঐক্যের প্রয়াসে যে সব দল পরস্পরের কাছাকাছি এসেছে, তাদের প্রায় প্রত্যেককেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ব্রিগেড সমাবেশে। লক্ষ্য মূলত দুটো। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিশাল সমাবেশকে সাক্ষী রেখে বিরোধী ঐক্যকে এমন ভাবে তুলে ধরা যাতে বিজেপি চ্যালেঞ্জ অনুভব করে। এবং, গোটা দেশের রাজনৈতিক শিবিরকে এমন এক অভূতপূর্ব বিজেপি বিরোধী জমায়েত উপহার দেওয়া, যা বিরোধী জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করে তুলবে।

সাংস্কৃতিক ভাবেও ব্রিগেডের এই সমাবেশকে একটা সর্বভারতীয় চেহারা দিতে চাইছে তৃণমূল। নিজস্ব চিত্র।

ব্রিগেডে এ বার পাঁচটা মঞ্চ তৈরি করছে তৃণমূল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের দিকে মাঠের যে প্রান্ত, অন্যান্য বছরের মতো এ বারও সে দিকেই মঞ্চ বাঁধা হচ্ছে। পাঁচ মঞ্চই পাশাপাশি। মাঝেরটা সবচেয়ে বড় এবং সেটাই মূল মঞ্চ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের অন্য শীর্ষনেতারা ওই মঞ্চেই থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা বিভিন্ন দলের নেতারা। মূল মঞ্চের দু’পাশে থাকা দু’টো মঞ্চে থাকবেন তৃণমূলের সাংসদ এবং বিধায়কদের বড় অংশ। রাজ্য স্তরের অন্য কিছু নেতাও ওই দুই মঞ্চে থাকবেন। আর একেবারে দুই প্রান্তে থাকা দু’টি মঞ্চ হবে সাংস্কৃতিক। বাংলার সংস্কৃতি তো বটেই, দেশের অন্য রাজ্যগুলির শিল্প-সংস্কৃতিও শিল্পীরা তুলে ধরবেন ওই দুই মঞ্চ থেকে। অর্থাৎ শুধু রাজনৈতিক ভাবে না, সাংস্কৃতিক ভাবেও ব্রিগেডের এই সমাবেশকে একটা সর্বভারতীয় চেহারা দিতে চাইছে তৃণমূল।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী মঙ্গলবার প্রায় দিনভর বসেছিলেন নির্মীয়মান মঞ্চগুলোর পিছনে। নিজেই তদারকি করছেন প্রস্তুতির। সব ক’টা মঞ্চেরই মূল কাঠামো লোহার। উপরে থাকছে কাঠের পাটাতন। আকার-আয়তনে এবং নকশায় এ বারের ব্রিগেড মঞ্চ যে চোখধাঁধানো চেহারা নিতে চলেছে, তা প্রস্তুতি পর্বেই স্পষ্ট। অতিথি-অভ্যাগতদের সুবিধার খেয়াল রাখতে, মূল মঞ্চের ঠিক পিছনেই তৈরি হচ্ছে বড়সড় টয়লেট। সাধারণ পোর্টেবল বায়ো-টয়লেট নয়, এই শৌচাগার একটু অন্য ভাবেই তৈরি হচ্ছে। কারণ শৌচাগারের ভিত ইট-কংক্রিটেই তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রার্থী বাছাইয়ে ‘নমো’ অ্যাপের সমীক্ষা, দুশ্চিন্তা বাড়ছে বিজেপি নেতাদের

পাঁচটি মঞ্চ এবং তার পিছনের বিশ্রান্তি এলাকাকে টিনের উঁচু দেওয়ালে ঘিরে ফেলা হয়েছে ইতিমধ্যেই। ব্রিগেডের অনেকটা অংশকেই বাঁশের ব্যারিকেডের মাধ্যমে আলাদা আলাদা অংশ হিসেবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সাউন্ড সিস্টেম এবং মাইক লাগানোর কাজও বুধবারের মধ্যেই সেরে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।

সব ক’টা মঞ্চেরই মূল কাঠামো লোহার। উপরে থাকছে কাঠের পাটাতন।— নিজস্ব চিত্র।

ব্রিগেডে এই হাই-প্রোফাইল সমাবেশকে ঘিরে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, পুলিশি বন্দোবস্ত কী রকম থাকা দরকার, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা কী ভাবে সামলানো হবে— সে সব নিয়ে মঙ্গলবার নবান্নে বৈঠক হয়েছে। ব্রিগেড ঘিরে বেশ কিছু ওয়াচ টাওয়ার তৈরি থাকছে নজরদারির জন্য।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টেও ধাক্কা বিজেপির, মিলল না রথযাত্রার অনুমতি

দূরবর্তী জেলাগুলি থেকে তৃণমূলের যে সব কর্মী-সমর্থক ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিতে আসবেন, তাঁদের থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার উত্তীর্ণ প্রেক্ষাগৃহে, রাজডাঙার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে, নেতাজি ইন্ডোর লাগোয়া ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে এবং বড়বাজার এলাকার বিভিন্ন ধর্মশালায়। তাঁদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত কী রকম হচ্ছে, নিরাপত্তার ব্যবস্থাই বা কেমন হচ্ছে, সে সব খতিয়ে দেখবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবারই তিনি পরিদর্শনে যেতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

জমায়েত কেমন হবে? তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না। কিন্তু প্রতিটি জেলা কমিটিকেই যে সংখ্যক লোক আনার ‘টার্গেট’ বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর, তার অর্ধেক লোক এলেও ব্রিগেডে জায়গা দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

সমাবেশ ওই রকম বেনজির চেহারা নেয় কি না, সে প্রশ্নের জবাব ১৯ জানুয়ারি-ই পাওয়া যাবে। কিন্তু সমাবেশের প্রস্তুতি তথা আয়োজন যে অভূতপূর্ব চেহারা নিয়েছে, তা নিয়ে সংশয় কমই।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE