Advertisement
E-Paper

পুনর্বাসন চেয়ে ইস্তাহারে সরব পাচার-কন্যেরা 

নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, এই মুহূর্তে দেশের মহিলা ভোটারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। রাজ্যে শাসক দলের মহিলা প্রার্থীর হার ৪১ শতাংশ।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০২:৫৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেশজোড়া ভোটের গণযজ্ঞে তাঁদের কথা বলছে না কেউ। তাই নিজেরাই নিজেদের দাবি জানিয়ে ইস্তাহার তৈরি করে পাঠালেন পাচারের পরে বেঁচে ফেরা মেয়েরা। ‘আমাদের কথা শুনুন’— এই মর্মে ভোটের আগে নিজেদের এক গুচ্ছ দাবি নিয়ে ইস্তাহার প্রকাশ করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বন্ধনমুক্তি দল।

ওই ইস্তাহারে পাচারের পরে উদ্ধারের সুযোগ পাওয়া মেয়েদের পুনর্বাসনের নীতি দ্রুত প্রণয়ন, পাচারকারীদের কঠোর শাস্তির মতো বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এই সব দাবি নিয়ে তাঁরা পৌঁছবেন রাজনৈতিক দলের কাছে। ই-মেলেও নেতাদের কাছে সেই ইস্তাহার পাঠাবেন তাঁরা।

নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, এই মুহূর্তে দেশের মহিলা ভোটারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। রাজ্যে শাসক দলের মহিলা প্রার্থীর হার ৪১ শতাংশ। অথচ মহিলাদেরই সুরক্ষা নিয়ে কোনও কথা নেই সেই রাজনৈতিক দলের ইস্তাহারে। তাঁদের কথা স্থান পাচ্ছে না ভোটের প্রচারেও। সেই জন্যই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পাচার-কন্যেদের এই ইস্তাহার।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে ফি-বছর অনেক মেয়েকে পাচার করে দেওয়া হয়। পরে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে ফিরে আসেন তাঁদের অনেকে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরে অনেকে ফের পাচার হয়ে যান। কেউ কেউ কোথায় যে হারিয়ে যান, কেউ জানতে পারে না। শম্পা মল্লিক (ছদ্মনাম) নামে বাসন্তীর এক নির্যাতিতা মাত্র ১১ বছর বয়সে পাচার হয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম বার কয়েক দিনের মধ্যে উদ্ধার করা হয় তাঁকে। কিন্তু বিয়ের আশ্বাস দিয়ে আবার তাঁকে পাচার করে দেয় এক পড়শি যুবক। মুম্বই, দিল্লি ঘুরে শম্পা দ্বিতীয় বার ফিরে আসেন গ্রামে। তখন থেকেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অধীনে এলাকায় মানব পাচার রোধ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে চলেছেন তিনি। শম্পার অনুযোগ, ‘‘রাজনৈতিক দল কিংবা নেতাদের আমাদের নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? ওঁরা ভাবেন না বলেই আমরা নিজেরা নিজেদের দাবি জানাচ্ছি।’’

১৫ বছর বয়সে বিয়ের নামে রাজিয়া খাতুন (নামবদল)-কে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল যৌনপল্লিতে। কয়েক মাস পরে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁকে উদ্ধার করে। এখন আইন নিয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন রাজিয়া। তিনি ভোট দেন পছন্দের প্রার্থীকেই। ‘‘নারী উন্নয়ন নিয়ে ভাবা খুব জরুরি। কিন্তু কেন সে-ভাবে ভাবা হয় না, জানি না। এটা দুর্ভাগ্যের,’’ বললেন রাজিয়া।

তৃণমূলের ইস্তাহারে নোটবন্দি, জিএসটি, রাফাল দুর্নীতির পাশে এক লাইনে নমো নমো করে সেরে দেওয়া হয়েছে কন্যাশ্রীর কথা। বামফ্রন্টের ইস্তাহারেও মহিলা এবং শিশু সুরক্ষা জায়গা পেয়েছে এক লাইনে। তার থেকে বেশি কথা খরচ করেনি বামফ্রন্টও। মেয়েদের কথা নেই কেন? কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা?

বারাসত কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদারের কথায়, ‘‘মহিলাদের সুরক্ষার সব কিছুই লুকিয়ে রয়েছে কন্যাশ্রীর মধ্যে। তাই আলাদা করে মহিলা সুরক্ষা নিয়ে কিছু বলার নেই আমাদের।’’ অন্য দিকে যাদবপুরের বাম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ইস্তাহারে শুধু বিষয়টাকে তুলে ধরাই আসল। ‘‘আমরা সংসদে বারবার মহিলা বিল পেশ করতে বলেছি। মহিলা ভোটার দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক। অথচ সংসদে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব হাতে গোনা। প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়ালেই মহিলাদের উন্নয়ন নিয়ে, সুরক্ষা নিয়ে কথা উঠবে,’’ বলছেন নন্দিনী। কংগ্রেসের দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী মিতা চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, কংগ্রেস শুধু ইস্তাহারে নয়, সাধারণ আলোচনাতেও মহিলাদের সুরক্ষা, মহিলাদের স্বশক্তিকরণ নিয়ে কথা বলছে। কংগ্রেস মহিলা-পুরুষ সমান নীতিতে বিশ্বাস করে।

Lok Sabha Election 2019 Woman Trafficking লোকসভা ভোট ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy