কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি ছেড়ে দিয়েছে। তার পরেও সারদা মামলায় অভিযুক্ত মদন মিত্রের জামিনের আবেদন শুনতে চাননি বেশ কয়েক জন বিচারপতি। বারবার শুনানি পিছিয়ে যেতে থাকায় বুধবার হাইকোর্ট থেকে সেই আবেদন প্রত্যাহার করে নিলেন রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবুর কৌঁসুলি।
এর পরে আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে জামিনের আবেদন করার জন্য তাঁরা তৈরি হচ্ছেন বলে ওই আইনজীবী এ দিন জানান। মদনবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবারেই আলিপুর আদালতে জামিনের আবেদন করা হতে পারে। এর আগে ওই আদালতে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়েছিল।
মন্ত্রীর জামিনের আবেদন নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই নিম্ন ও উচ্চতর আদালতে টানাপড়েন চলছে। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় ধৃত প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার, ব্যবসায়ী সৃঞ্জয় বসু, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তা দেবব্রত ওরফে নিতু সরকার-সহ অনেকেই ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কখনও চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্রের জটে, কখনও বিচারপতি মামলা শুনতে না-চাওয়ায় মদনবাবুর জামিনের বিষয়টি আটকেই থাকে।
সারদা রিয়েলটি মামলায় অভিযুক্ত মদনবাবুকে ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে সিবিআই। তাদের হেফাজতে কিছু দিন থাকার পরে মন্ত্রীর ঠাঁই হয় জেল-হাজতে। গ্রেফতারের পর থেকেই বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি। তার মধ্যেই হাইকোর্টে মদনবাবুর জামিনের আবেদন জানিয়ে মামলা করেন তাঁর আইনজীবীরা। কিন্তু গত দেড় মাসে চার বার তার শুনানি পিছিয়ে যায়।
একাধিক বিচারপতি ব্যক্তিগত কারণে মদনবাবুর জামিনের আবেদন সংক্রান্ত মামলাটি ছেড়ে দিয়েছেন। তার আগে কখনও মন্ত্রীর নিজের আইনজীবীদের হাতে, আবার কখনও সিবিআইয়ের তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি না-থাকায় জামিনের আবেদনের শুনানি শুরুই হচ্ছিল না। প্রথমে বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এবং তার পরে বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বে়ঞ্চ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মদনবাবুর জামিনের আর্জির মামলাটি ছেড়ে দেয়। ‘ব্যক্তিগত কারণটি’ কী, বিচারপতি রায় তার কোনও ব্যাখ্যা দেননি। তবে বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগত কারণ হিসেবে জানান, মদনবাবুর একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে তিনি নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন। নিমন্ত্রণের চিঠি নিলেও তিনি সেই অনুষ্ঠানে যাননি। তবে সেই আমন্ত্রণের সূত্রেই তিনি জামিনের আর্জির মামলাটি ছেড়ে দিচ্ছেন।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, দু’টি ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি ছেড়ে দেওয়ার পরে ওই আবেদন শুনতে রাজি হননি অনেক বিচারপতিই। তাঁরা যে মামলাটি নিতে চান না, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরকে তা জানিয়ে দেন। তার পরেই মামলাটি বিচারপতি মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চে পাঠান প্রধান বিচারপতি। বুধবার সেখানেই মন্ত্রীর জামিনের আবেদন শুনানি হবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু মদনবাবুর আইনজীবীরা এ দিন বিচারপতি মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চে জানান, তাঁরা ওই আদালত থেকে জামিনের আবেদন প্রত্যাহার করে নিতে চান। হাইকোর্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করে।
মন্ত্রীর আইনজীবী শেখর বসু ও মিলন মুখোপাধ্যায় তার পরেই হাইকোর্টে জানান, আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত জামিন মঞ্জুর না-করলে তাঁরা আলিপুর জেলা জজের আদালতের দ্বারস্থ হবেন। ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন জানানোর অনুমতি দিক। ডিভিশন বেঞ্চ সেই অনুমতি দেয়।
মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, হাইকোর্টে যখন জামিনের আবেদনের মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল, তখনও সিবিআই মদনবাবুর বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশ করেনি। চার্জশিট দাখিলের পরে নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন জানানোই প্রথা। সেখানে জামিন নামঞ্জুর হলে আবেদন জানাতে হয় জেলা জজের আদালতে। সেখানেও আর্জি নাকচ হলে আবেদন করতে হয় হাইকোর্টে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy