E-Paper

অন্যত্র পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি, বঙ্গেই কম

পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সচিব মহিপকুমার সিংহ জানাচ্ছেন, গত বছর পাঁচ লক্ষের কিছু বেশি পড়ুয়া তাঁদের দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় বসেছিল।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:২৪
Picture of students.

করোনায় অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার ফলেই এ ভাবে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। ফাইল চিত্র।

অতিমারি কোনও রাজ্যকে রেহাই দিয়েছে, এমন খবর নেই। সে-ক্ষেত্রে করোনার প্রকোপের দরুন বাংলায় মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গিয়েছে, এই যুক্তি দেখানো যায় কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, একই ভাবে অতিমারিতে বিপর্যস্ত অন্যান্য রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় গত বারের তুলনায় খুব বেশি হেরফের ঘটেনি। বরং কথা বলে জানা গেল, কোথাও কোথাও তা বেড়েছে।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী এ বার বঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় চার লক্ষ কম। মাধ্যমিকে বসার জন্য যত জন নাম রেজিস্ট্রেশন বা নথিভুক্ত করিয়েছিল, ফর্ম পূরণের সময় সেই সংখ্যাও কমেছে দু’লক্ষের মতো। কর্তাদের যুক্তি, করোনায় অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার ফলেই এ ভাবে সংখ্যা কমেছে। প্রায় সারা বিশ্বের সঙ্গে গোটা দেশই তো করোনার কবলে পড়েছিল। তা হলে অন্য রাজ্যগুলিতেও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে কি না, যাচাই করতে গিয়েই উঠে আসে উল্টো চিত্র।

পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সচিব মহিপকুমার সিংহ জানাচ্ছেন, গত বছর পাঁচ লক্ষের কিছু বেশি পড়ুয়া তাঁদের দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় বসেছিল। এ বার সেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০ হাজারের মতো বেড়েছে। ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে নেটওয়ার্ক কার্যত থাকেই না, সেখানে করোনাকালে কী ভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়েছিল?

মহিপ বলেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলে নেটওয়ার্কের সমস্যা আমরা অন্য ভাবে সামলানোর করার চেষ্টা করেছি। ২০২৩ সালে যাদের মাধ্যমিকে বসার কথা, তাদের উপরে স্কুলের শিক্ষকেরা বিশেষ ভাবে নজর রেখেছিলেন।’’ এই সব কারণেই ঝাড়খণ্ডে ‘ড্রপ-আউট’ বা স্কুলছুটের সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই কমেছে বলে মহিপের দাবি।

কেরলে দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হবে ৯ মার্চ। কেরল পরীক্ষা ভবনের এক আধিকারিক জানান, গত বার কমবেশি ৪,২৬,০০০ পড়ুয়া দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা দিয়েছিল। এ বার ৩০ হাজারের মতো পরীক্ষার্থী বেড়েছে।

তবে দশম শ্রেণিতে বোর্ড পরীক্ষার জন্য নাম নথিভুক্ত করা পরীক্ষার্থীর তুলনায় ফর্ম পূরণ করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম। দেখা যাচ্ছে, কেরলের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। সেটা করোনাকালে শ্রেণিকক্ষের পাঠ বন্ধ থাকার কারণে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিহার স্কুল এডুকেশন বোর্ডের এক আধিকারিকের কথায়, এ বার দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা দিচ্ছে ১৫ লক্ষের কিছু বেশি পড়ুয়া। গত বারের পরীক্ষার্থীর তুলনায় কিছু বেশি। বিহার স্কুল এডুকেশন বোর্ডের অফিসারেরা জানান, মূলত পটনার পড়ুয়ারাই দিল্লি বোর্ডের স্কুলে পড়ে। বাকি পুরো রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরাই বিহার স্কুল এডুকেশন বোর্ডের উপরে নির্ভরশীল। ফলে বিহার বোর্ডের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ লক্ষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। বিহার বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও পড়ুয়ারা যে অনেকটাই টিউশন-নির্ভর হয়ে পড়েছে, তা স্বীকার করছেন কর্তারা। ফলে করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকলেও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়েছে পড়ুয়ারা।

ওড়িশাতেও দশমে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সংখ্যাটা প্রায় ছ’লক্ষ।

বঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাসের যুক্তি দেখাতে গিয়ে পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, মূলত ২০১৭ সালে বয়সের বিধিনিষেধের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অনেক কম পড়ুয়া ভর্তি হয়েছিল। তারাই এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে। অন্য রাজ্যে এমনটা হয়নি। এ বার দশম শ্রেণির টেস্টে কড়াকড়িতে অনেকে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। সেটাও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে যুক্তি দেখিয়েছেন রামানুজ। স্কুলছুটের তত্ত্ব মানতে রাজি নন তিনি। যদিও শিক্ষক শিবিরের একটি বড় অংশের বিশ্বাস, যথাযথ নজরদারির অভাবে স্কুলছুট হয়ে গিয়েছে অনেক ছেলেমেয়ে। তাই মাধ্যমিকে এ বার পরীক্ষার্থী কম।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Madhyamik Examination 2023 West Bengal Students

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy