Advertisement
E-Paper

‘এর পরে কী ভাবে পড়ব’

দু’জনের সংসারেই নুন আনতে পান্তা ফুরানোর হাল। অথচ দু’জনেই করে ফেলেছে স্কুলের সেরা রেজাল্ট। দু’জনেরই বড়ো স্বপ্ন। কিন্তু কি করে ছেলেমেয়েদের সেই স্বপ্ন সফল হবে তা নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে দুই পরিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০৩:৪০
সংসারের হাল ধরতে বাবার দোকানে ক্ষুর ধরতে হয় সূর্যকান্তকে।

সংসারের হাল ধরতে বাবার দোকানে ক্ষুর ধরতে হয় সূর্যকান্তকে।

দু’জনের সংসারেই নুন আনতে পান্তা ফুরানোর হাল। অথচ দু’জনেই করে ফেলেছে স্কুলের সেরা রেজাল্ট। দু’জনেরই বড়ো স্বপ্ন। কিন্তু কি করে ছেলেমেয়েদের সেই স্বপ্ন সফল হবে তা নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে দুই পরিবার।

লাভপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা মৃন্ময়ী মণ্ডল এবার স্থানীয় সত্যনারায়ণ শিক্ষানিকেতন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ৬৬৪ নম্বর নিয়ে পাশ করে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। তার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়র হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। মৃন্ময়ীর বাবা মৃণালবাবু যৎসামান্য বেতনে স্থানীয় একটি ইট ভাঁটায় খাতা লেখার কাজ করেন। তার আয়েই চলে মৃন্ময়ীর লেখা পড়ার খরচ সহ ৬ সদস্যের সংসার। তাই তুলনামূলক খারাপ রেজাল্ট করেও পড়শির ছেলেমেয়েরা যখন নানা রকম পরিকল্পনা করছে তখন একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে ভাল করে তাকাতেও পারছেন না মৃণালবাবু।

তিনি বলেন, ‘‘অক্ষমতার জ্বালা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আমার এমনই কপাল মেয়েটা এত ভাল রেজাল্ট করল কোথায় তাকে উৎসাহ দেব, তার বদলে মুখ লুকিয়ে বেড়াচ্ছি।’’ মৃন্ময়ী বলছে, ‘‘বাবা-মা’কে চাপে ফেলে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই না! যতদূর পারি পড়ব, তারপর যা হয় হবে!’’

মায়ের সঙ্গে লাভপুরের কৃতী ছাত্রী মৃন্ময়ী।—নিজস্ব চিত্র

ছবিটা একই ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশার বাসিন্দা সূর্যকান্ত প্রামাণিকের ঘরেও। সে এবারে ষাটপলশা হাইস্কুল থেকে সর্বোচ্চ ৫৪৪ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কারণ সবার সেরা রেজাল্ট করা দূরের কথা, এতদিন পড়াশোনা চালানোটাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বলে মত স্কুল কর্তৃপক্ষের।

প্রধান শিক্ষক কালীসাধন মণ্ডল বলেন, ‘‘যে প্রতিকূলতার সঙ্গে ওকে লড়াই করতে হয়েছে সেটা না হলে ওর রেজাল্ট আরও ভাল হত।’’

ষাটপলশা হাটেই সূর্যকান্তের বাবা বৈদ্যনাথবাবুর ছোট্ট সেলুন। চুল দাড়ি কেটে সবদিন ১০০ টাকাও আয় হয় না। ওই টাকাতেই ৪ জনের খাওয়াদাওয়া-সহ সূর্যকান্ত এবং তাঁর দাদা শুভমের বিএ পড়ার খরচ চালাতে হয়। তাই কখনও একজনের বই কেনা হলে অন্যজনের টিউশানের টাকা জোটে না। পরিস্থিতির সামাল দিতে তাই পড়া কামাই করে বাবার সঙ্গে ক্ষুর-কাঁচি চালাতে হয় দুই ভাইকেও। এতদিন কোনওরকমে ওইভাবে জোড়াতালি দিয়ে চললেও এরপর কি হবে তা নিয়েই চিন্তায় গোটা পরিবার। স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু সাধ্য কোথায়। সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘ভাল পড়ার সুযোগ পেলে ঠিক জয়েন্টেও ডাক্তারিতে সুযোগ করে নিতে পারব। কিন্তু আমাদের তো সামর্থ্য নেই। তাই কি করব ভেবে উঠতে পারছি না!’’

বৈদ্যনাথবাবু বলেন, ‘‘সঞ্চয় বলতে কানাকড়িও নেই। বছর দু’য়েক আগে মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে ঘটিবাটিটুকু পর্যন্ত বিকিয়ে গিয়েছে। না হলে ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে কোন বাবা না চায়!’’

Madhyamik result poverty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy