Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলে ঢুকে সমস্যা শুনলেন, দিলেন মেটানোর আশ্বাস

হাঁটতে বেরিয়ে জল সমস্যার কথা শুনেছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল সোমবারও। এ দিন সকালে হাঁটতে বেরিয়ে রাস্তার পাশে স্কুলে হঠাৎই ঢুকে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও শুনলেন সমস্যার কথা। স্কুলে দাঁড়িয়েই সঙ্গে সঙ্গে ফোনে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রীকে। নির্দেশ দিলেন জুনিয়র হাইস্কুল থেকে হাইস্কুলে উন্নীত করার। সব দেখেশুনে কার্যত অভিভূত পঞ্চকোট পাহাড়ের নিচে অবস্থিত শিউলিবাড়ি জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষকেরা।

আশীর্বাদের হাত। গড়পঞ্চকোটের কাছে রাঙাডহর শিউলিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। — নিজস্ব চিত্র।

আশীর্বাদের হাত। গড়পঞ্চকোটের কাছে রাঙাডহর শিউলিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

হাঁটতে বেরিয়ে জল সমস্যার কথা শুনেছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল সোমবারও। এ দিন সকালে হাঁটতে বেরিয়ে রাস্তার পাশে স্কুলে হঠাৎই ঢুকে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও শুনলেন সমস্যার কথা। স্কুলে দাঁড়িয়েই সঙ্গে সঙ্গে ফোনে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রীকে। নির্দেশ দিলেন জুনিয়র হাইস্কুল থেকে হাইস্কুলে উন্নীত করার। সব দেখেশুনে কার্যত অভিভূত পঞ্চকোট পাহাড়ের নিচে অবস্থিত শিউলিবাড়ি জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষকেরা।

শিক্ষিকা সূপর্ণা মালের কথায়, ‘‘শুনেছিলাম মুখ্যমন্ত্রী পাশেই বনবাংলোয় আছেন। কিন্তু তিনি স্কুলে এসে আমাদের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের কথা বলবেন, সমস্যার কথা শুনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেবেন ভাবতেই পারিনি।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে খাতায় তাঁর অটোগ্রাফ নিয়েছেন সূপর্ণাদেবী। এ দিন শরীর খারাপ থাকায় একটু তাড়াতাড়িই স্কুল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন টিচার ইনচার্জ আশিস পাল। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগটা হারালাম।’’

রবিবার দুপুরে আসানসোলের প্রশাসনিক জনসভা সেরে পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার গড়পঞ্চকোট পাহাড়ের বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি ভ্রমণকেন্দ্রে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলে পাঞ্চেৎ বাঁধে হাঁটতে গিয়ে স্থানীয় মহেশনদী গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে জলের সমস্যা শুনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন সঙ্গে থাকা পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীকে। সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ বনবাংলো থেকে বেরিয়ে পঞ্চকোটের পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়-সহ পুলিশের পদস্থ কর্তারা। বনবাংলো থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রাস্তার পাশেই একই চত্বরের মধ্যে রাঙাডহর শিউলবাড়ি প্রাথমিক স্কুল এবং শিউলিবাড়ি জুনিয়র হাইস্কুল। হঠাৎই স্কুলের মধ্যে ঢুকে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। স্কুলে তখন ছুটির মেজাজ। খানিক আগেই মিড-ডে মিল খেয়ে বাড়ি ফেরার জন্য ব্যাগপত্র গোছাচ্ছে পড়ুয়ারা। মুখ্যমন্ত্রীকে স্কুলে ঢুকতে দেখে একপ্রকার দৌড়েই বেরিয়ে আসেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক গণেশ বাউরি, জুনিয়র হাইস্কুলের সুপর্ণা মালরা। তাঁদের সঙ্গে একটু কথা বলেই মুখ্যমন্ত্রী পড়েন পড়ুয়াদের নিয়ে। প্রতিদিন মিড-ডে মিল হয় কি না, খাবারে ডিম থাকে কি না, সরকার থেকে দেওয়া বই তারা পায় কি না, শিক্ষকেরা ঠিকভাবে পড়ান কি না— এই জানতে চান ক্ষুদে পড়ুয়াদর কাছে। সন্তোষজনক উত্তর পেয়ে পড়ুয়াদের কাছ থেকে ছড়া শুনতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্র বিষ্ণু বাউরি ও উজ্জ্বল বাউরি দু’টি ছড়া শোনায়। গণেশবাবু জানান, ‘বাচ্চাদের কাছে ছড়া শোনার পরে মুখ্যমন্ত্রী ক্লাসরুম ঘুরে দেখেন। সর্বশিক্ষা মিশনের দেওয়া ‘লার্নিং মেটিরিয়্যাল’ দেখে পছন্দ হওয়ায় নিজের ফোনে ছবিও তুলে নেন তিনি।

এর পরে একই চত্বরের মধ্যে জুনিয়র হাইস্কুলটি দেখে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ওই স্কুলের ছাত্রসংখ্যা কত। উত্তর এল মাত্র ৪৪ জন। শুনে জানতে চান কেন ছাত্র সংখ্যা কম? উত্তরটা অবশ্য নিজেই দেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষকদের বলেন, ‘‘জুনিয়র হাইস্কুল হওয়াতে ছাত্র কম হচ্ছে। হাইস্কুলে উন্নীত করে দেওয়া হলে ছাত্র সংখ্যা বাড়বে।’’

শিক্ষকদের কাছে জানতে চান, হাইস্কুল করার জন্য কোনও প্রস্তাব তাঁরা আগে দিয়েছেন কি না। ছাত্র অনেক কম হওয়ায় সেই প্রস্তাব দেওয়া হয়নি বলে জানান শিক্ষকেরা। সব শুনে সরাসরি ফোনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে স্কুলটিকে হাইস্কুলে উন্নীত করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। গণেশবাবু বলেন, ‘‘ফোনে মুখ্যমন্ত্রী স্কুলটিকে হাইস্কুল করে দেওয়ার জন্য কাউকে বলছিলেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পরেই ফোনটি ধরিয়ে দেন আমাকে। যাঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন, তিনি স্কুলের বিষয়ে বিশদে জিজ্ঞাসা করেন। আমি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছি।’’

মিনিট ১০-১৫ স্কুলে কাটিয়ে ফের প্রকৃতি ভ্রমণকেন্দ্রে ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। শিউলিবাড়ি স্কুলের টিচার ইনচার্জ আশিসবাবু বলেন, ‘‘জুনিয়র হাইস্কুল হওয়াতে অষ্টম শ্রেণির পরে ফের অন্য স্কুলে যেতে হবে বলেই মাত্র এক-দু’টি গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়তে আসে। হাইস্কুলে উন্নীত হলে আমাদের ছাত্রসংখ্যা অবশ্যই আরও অনেক বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE