শঙ্কর নেত্রালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী। শৌভিক দে-র তোলা ছবি।
বুধবার যেখানে শেষ করেছিলেন, সোমবার যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন রাজারহাটে শঙ্কর নেত্রালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসপাতাল আর কসাইখানা এক নয়। ব্যবসা করতে এলেও সে কথাটা ভুললে চলবে না। হাসপাতালের সঙ্গে প্রোমোটিং-এর ব্যবসাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না!’’ মুখ্যমন্ত্রী এও জানালেন, ‘‘আমি চাই বেসরকারি হাসপাতালের রোগী শোষণের বিরুদ্ধে এ রাজ্যের সরকার যে ভাবে গর্জে উঠেছে, তা মডেল হয়ে উঠুক গোটা দেশে।’’
গত বুধবার হাসপাতাল ধরে ধরে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগের ফিরিস্তি দিয়েছিলেন। এ দিন অবশ্য একাধিক হাসপাতালের দায়িত্বহীনতার কথা বললেও অ্যাপোলো ছাড়া আর কোনও হাসপাতালের নাম করেননি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সবাই খারাপ নয়। আবার সবাই ভালও নয়। কিছু মানুষ আছে যারা মুখে গু়ডি-গুডি ব্যবহার করে। কিন্তু মানুষের জন্য এতটুকু ভাবে না। তাদের কাছে ব্যবসাটাই প্রধান। এটা আমরা সহ্য করব না। সাধারণ মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে তাঁরাও এটা সহ্য করবেন না।’’
বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে এ দিন গোড়াতেই তিনি বলেন, ‘‘আমি আপনাদের কারওর শত্রু নই। যদি আমার কথাগুলো রূঢ় লাগে, ক্ষমা করবেন। কিন্তু এ ছাড়া কোনও উপায় নেই!’’ বক্তব্যের শুরুতেই তিনি জানিয়ে দেন, যে হাসপাতালে অনুষ্ঠান, তার বিরুদ্ধে এখনও তাঁর কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি।
আরও পড়ুন: হেলমেটবিহীন বেপরোয়া গতি, দুর্ঘটনায় মৃত দুই
সরকার যে রাজ্যের সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে নয়, তা এ দিন একাধিক বার বোঝাতে চেয়েছেন মমতা। যে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমছে, তাদের প্রতি তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা হয়েছে তা হয়েছে। নতুন করে শুরু করুন। সাত-দশ দিন সময় নিয়ে ভাবুন। নিজেরা বৈঠক করুন। ভাবুন, সামান্য জ্বর হয়েছে, তাও মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরীক্ষা কেন করাতে হবে? আর যার চিকিৎসার বিল মেটানোর ক্ষমতা নেই, তাকে দয়া করে ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজ বা বাড়ির দলিল জমা রেখে যেতে বলবেন না।’’ তিনি পরামর্শ দেন, ‘‘হাসপাতালের রিসেপশনের কর্মীদের বলুন, কেউ কোনও অভিযোগ জমা দিতে এলে যেন সেটা মন দিয়ে শোনা হয়। এক জন নোডাল অফিসার রাখুন, যাতে তিনি সব অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারেন। ফেয়ার প্রাইস মেডিসিন শপ, ফেয়ার প্রাইস ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলুন।’’
কিন্তু ঝাঁ চকচকে হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণেরই যা খরচ, সেখানে চিকিৎসার খরচ কম হবে কী ভাবে? মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, ‘‘যেমন পাঁচ তারা, সাত তারা হোটেল থাকে, তেমন বাজেট হোটেলও থাকে। বেসরকারি হাসপাতালে যাঁদের ক্ষমতা আছে তাঁরা বড় ঘরে থাকুন। কিন্তু যাঁদের ক্ষমতা নেই, তাঁদের জন্য এক চিলতে ঘরের ব্যবস্থাও থাকুক। শুধু আশ্বাস দিতে হবে, দু’জায়গাতেই চিকিৎসার মান যেন এক হয়। বড়লোকের এক রকম চিকিৎসা, আর গরিবের অন্য রকম, এটা হতে দেওয়া যায় না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, কেন কিছু কিছু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রতি মাসে কতগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা, কতগুলো অস্ত্রোপচার হবে তার টার্গেট দিয়ে দেওয়া হবে? কেন হাসপাতালের যন্ত্রগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কি না সেটা নিয়মিত যাচাই করা হবে না? কোনও হাসপাতালের নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘ভেন্টিলেশনে রোগী মারা গেছেন। তাও তাঁর অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। এবং সেটা রাতে, যাতে চার্জ দ্বিগুণ হয়। এটা কি চলতে দেওয়া যায়?’’ তিনি জানান, বেসরকারি হাসপাতালগুলির ব্যবসায় সরকার হস্তক্ষেপ করতে চায় না। বরং সরকার সাহায্যের হাতই বাড়াতে চায়।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রবিবার রাতে তাঁর কাছে একটি মেয়ে এসেছিল। তার মা অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি। মেয়েটি তাঁকে জানায়, বিপুল টাকা বিল হয়েছে। তারা আর টানতে পারছে না। মাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হচ্ছে। তাতে খরচ আরও বাড়বে। অথচ সেই ক্ষমতাই নেই তাদের। তিনি বলেন, ‘‘আমি সঙ্গে সঙ্গে অরূপ বিশ্বাসকে বলে এসএসকেএমে একটি শয্যার ব্যবস্থা করি। ভোর পাঁচটায় ওর মাকে আনার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু তত ক্ষণে আর বিশেষ কিছু করার নেই।’’
জেলার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকেও এ দিন সতর্ক করে দিয়েছেন মমতা। জেলার ক্ষেত্রেও যে সরকার ঢিলেঢালা মনোভাব দেখাচ্ছে না, তা এ দিন স্পষ্ট হয় তাঁর কথায়। জানান, বর্ধমানের ওই নার্সিংহোমকে পিজি নার্সিংহোম নাম রাখার অনুমতি কী ভাবে দেওয়া হল, সেটাও তাঁরা দেখছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy