Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অসহিষ্ণুতা অসহনীয়: অমর্ত্য, ইতিহাস-বিকৃতি ক্ষমাহীন: মমতা

দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে মমতাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ নিতে হবে বলে অভিমত দেন রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমর্ত্য সেন। —ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমর্ত্য সেন। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ২৩:৪২
Share: Save:

মঞ্চ আলাদা। কিন্তু উদ্বেগ এক। দেশ জুড়ে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা এবং সৌজন্যহীনতার পরিবেশ নিয়ে ভিন্ন দুই অনুষ্ঠানে কার্যত সমমত প্রকাশ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে এল ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনৈতিক সৌজন্যের প্রসঙ্গও। যা সমর্থন করেছেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। অন্য দিকে, অমর্ত্যের নিশানাতেও ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও অসহিষ্ণুতার কথা। আর দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে মমতাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ নিতে হবে বলে অভিমত দেন রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী।

সোমবার এশিয়াটিক সোসাইটির এক অনুষ্ঠানে অমর্ত্য বলেন, ‘‘নীরব থাকা নয়, বরং কথা বলতে হবে। সামগ্রিক ভাবে অসহিষ্ণুতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি।’’ পাশাপাশি অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহকে যে ভাবে বাক্যবাণে বিদ্ধ করছে গেরুয়া শিবির, এ দিন তারও সমালোচনা করেন তিনি।

অন্য দিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দীক্ষান্ত ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ইতিহাসকে যেন রাজনৈতিক ভাবে পরিবর্তন করা না হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মাঝখানে ছোট ছোট দেওয়াল গুলি ভেঙে ফেলতে হবে। একতাই সম্প্রীতি। ইতিহাস, বিজ্ঞান নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু সৌজন্য যেন থাকে।’’

আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব বিল পাশে কেন্দ্র তৎপর, জোট ছাড়ল অগপ

এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা যুক্তিগ্রাহ্য এবং তথ্যভিত্তিক। আমি পূর্ণ সমর্থন করি। এই কেন্দ্রীয় সরকার লাগাতার ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় কিংবা কিছুদিন আগে পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল, সেখানে হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস তৈরি করতে গিয়ে তথ্যের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে।’’ হাবিবের আরও অভিযোগ, এই প্রথম নয়, প্রথম এনডিএ সরকারের আমলেও একই চেষ্টা করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, এর আগেও ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে সরাসরি আক্রমণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ইতিহাস কংগ্রেসে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘‘রাজনৈতিক নেতারা ইতিহাস লিখতে শুরু করলে তথ্যের বিকৃতি ঘটবেই। এবং সেটাই ঘটছে। ইতিহাসের কাজ সত্যকে সামনে নিয়ে আসা। আমি ভুল করলেও ইতিহাস সেই ভুল চিহ্নিত করে দেবে।’’ ইতিহাস কংগ্রেসে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘গাঁধীকে যে মেরেছিল, তাকেই এখন বরেণ্য বলে দেখানো হচ্ছে। এটাই ইতিহাসের বিকৃতি।’’ ওই একই সময়ে কলকাতার এক অনুষ্ঠানে হাবিবও মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘বিকৃত তথ্য ইতিহাস নয়, গল্প। এখন সেটাকেই ইতিহাস বলে চালানোর চেষ্টা চলছে।’’

এ দিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়ে বাক স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেন রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট প্রদান করে। গোপালকৃষ্ণ বলেন, ‘‘বাক স্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতা আমাদের দেশে এখন খুব দরকার।’’ দেশে মুক্ত গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরি করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি জানান।

অন্য দিকে, তাঁর বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক সৌজন্যের কথা মনে করিয়ে দেন। বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে কারও মতের বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু সৌজন্য থাকবে না কেন?’’ রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশেই এ কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ১ জানুয়ারি এক সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছিলেন, ‘‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উচিত, কর্মীদের সহবত শেখানো।’’ মোদীর এই বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছিল, তাঁর নিজের দলের রাজনৈতিক ‘সহবত’ নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যেও সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE