Advertisement
E-Paper

দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ‘কেন্দ্রের পাশে’ মমতা, সেই নিরাপত্তা নিয়েই মোদীকে বিঁধছে তৃণমূল, সরকার ও দল কেন ভিন্নপথে?

পহেলগাঁওয়ের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রের ডাকা সর্বদল বৈঠকের পর লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কেন্দ্রের পাশে থাকবেন তাঁরা। মমতাও বারংবার সেই কথাই বলেছেন। কিন্তু তৃণমূলের একাধিক নেতানেত্রীই নিরাপত্তা নিয়ে বিঁধতে শুরু করে দিয়েছেন মোদী এবং শাহকে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৫ ২০:৩৪
Mamata Banerjee declares to stand by central government on security, but TMC targets PM Narendra Modi and HM Amit Shah

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে তাঁর দল কোনও রাজনীতি করবে না। সোমবার আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট করেই বলে দেন, ‘‘দেশে এখন যা চলছে, জাতীয় নিরাপত্তার যে ব্যাপার, আমরা বলেই দিয়েছি, তাতে আমাদের দল কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে থাকবে। কখনও ডিভাইড অ্যান্ড রুল করব না।’’ কিন্তু মমতার ওই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই মঙ্গলবার সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের তরফে প্রচার শুরু হয়েছে, ১৪ দিন কেটে গেল, কেন্দ্রীয় সরকার করছেটা কী? সেই প্রশ্ন তুলতে গিয়ে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ, রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষেরা সরাসরি নাম করে বিঁধছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং সরকারে আসীন তৃণমূল দল কেন এমন ভিন্ন অবস্থান নিয়ে চলছে?

সোমবার মুর্শিদাবাদ রওনা হওয়ার আগে মমতা বলেন, ‘‘দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও রাজনীতি নয়। তৃণমূল এ সব বিষয়ে ভারত সরকারের পাশেই আছে এবং থাকবে।’’ সোমবারই পহেলগাঁও নিয়ে সাগরিকা ছ’টি বিষয় উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন। এক, ১৪ দিন কেটে গেলেও এক জন জঙ্গিকেও ধরা যায়নি। দুই, ৫৬ ইঞ্চি ছাতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিহতদের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়াননি। তিন, গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং নিরাপত্তার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেননি অমিত শাহ। চার, সর্বদলীয় বৈঠকে পুলিশের অনুমতি প্রসঙ্গে শাহ যা বলেছিলেন, তা ছিল বিপথে চালিত করা। পাঁচ, প্রধানমন্ত্রী বলেন তিনি অ্যাকশনে বিশ্বাস করেন। কিন্তু এই পর্বে তাঁকে বন্দরের উদ্বোধন থেকে মনোরঞ্জনের অনুষ্ঠানে দেখা গেল, কিন্তু কোনও অ্যাকশন হল না। ছয়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (অজিত ডোভাল) নিরাপত্তার ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। যে কারণে এতগুলি জীবন চলে গেল। কুণালও প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘‘১৪ দিন ধরে হচ্ছেটা কী? কেন কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ হল না? শুধু মন কি বাত আর বিবৃতি। কৈফিয়ত দিতে হবে মোদী-শাহকে।’’

পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর কেন্দ্রের তরফে একটি সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তাতে যোগ দিয়েছিলেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের পরেও তিনি কেন্দ্রের পাশে থাকার কথা দিয়েছিলেন। মমতাও বারংবার সেই কথাই বলেছেন। যদিও পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার অব্যবহিত পরে মমতা ক্ষীণ ভাবে হলেও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘আমি ভেবে পাচ্ছি না, এত ক্ষণ ধরে বেছে বেছে মারল! যেগুলো আমরা শুনতে পাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছি...। ওখানে তো অনেক আর্মি (সেনা) ছিল। এমনিতে তো সীমান্ত এলাকা। স্পর্শকাতর এলাকা। যা-ই হোক, এ সব নিয়ে এখন কথা বলব না।’’ তার পর থেকে অবশ্য ধারাবাহিক ভাবে মমতা কেন্দ্রের সঙ্গে থাকার বার্তাই দিয়েছেন। যদিও ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় গত ২৭ এপ্রিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে দাবি তুলেছিলেন, পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধারের সময় এসেছে। তাঁর বক্তব্য ছিল, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা হুমকি নয়। পাকিস্তান যে ভাষা বোঝে, সেই ভাষাতেই জবাব দিতে হবে।

কেন রাজ্য সরকার এবং শাসকদল ভিন্ন পথে? প্রশ্ন শুনে ‘ভিন্ন পথ’ নিয়েই ভিন্ন মত পোষণ করলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল। তাঁর যুক্তি, ‘‘এর মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তার সঙ্গে দলের বক্তব্যের কোনও দ্বন্দ্ব নেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্র যা করবে তৃণমূল তাকে সমর্থন করবে। আমরা প্রশ্ন করছি, কেন কেন্দ্র এখনও করছে না। কিছু তো করুক। করলে তো সমর্থনই করব।’’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সাংবিধানিক পদে রয়েছেন। তাঁকে অনেক কথা বাঁচিয়ে বলতে হয়। কিন্তু দল হিসাবে তো তৃণমূল মৌলিক রাজনৈতিক প্রশ্নগুলো তুলবেই। বোঝাপড়া ছাড়া সবটা হচ্ছে, তেমনটা ভাবার কারণ নেই।’’ যদিও বিজেপি এ নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি। রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে তৃণমূল দায়িত্বজ্ঞানহীন। ওঁদের লোকসভার নেতা এক বলেন, তার পর অভিষেক আর এক বলেন। মুখ্যমন্ত্রী এক বলেন, দলের নেতারা ভিন্ন কথা বলেন। তবে দেশের মানুষের মন যে জায়গায় রয়েছে, তাতে তৃণমূলের কোনও কথাই সেখানে জায়গা পাবে না।’’

Pahalgam Terror Attack CM Mamata Banerjee PM Narendra Modi Amit Shah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy