সভার পথে। নিজস্ব চিত্র
পথ নিরাপত্তা এবং সেই সঙ্গে সার্বিক নিরাপত্তার প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকার কথা জুড়ে রইল নদিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক জনসভার অনেকখানি। বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এই জেলায় যার তাৎপর্য যথেষ্ট। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের রুটি-রুজির কথাও ভাবা হবে বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
এ দিন দুপুরে কৃষ্ণনগরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে চান, ‘পথবন্ধু’ প্রকল্পের কথা নদিয়ার পুলিশ কি আদৌ জানে? পুলিশকর্তারা চুপ। নাকাশিপাড়ার ওসি, কালীগঞ্জের ওসি-কে দাঁড় করিয়ে একই প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চে উপস্থিত কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপারকেও একই প্রশ্ন করেন। সকলেই জানান, তাঁরা জানেন না। বিরক্ত হয়ে মঞ্চে প্রথম সারিতে বসা রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রর কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, তিনি কেন জানাননি? অপ্রস্তুতে পড়ে ডিজি বলেন, “ম্যাডাম, এটা ভুল হয়েছিল। দ্রুত জানিয়ে দেব।”
এর পরেই মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ জানান, গোটা রাজ্যে ৩৬০টির মতো চিহ্নিত দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্থানীয় ৫-১০ জনকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হচ্ছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পাঠ দেবে। স্বাস্থ্য দফতরের ‘কল সেন্টার’ থেকে পথবন্ধুদের সংবাদ পাঠানো হবে যে তাঁর এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি হাসপাতাল ও অ্যাম্বুল্যান্সকে সতর্ক করবেন এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক চিকিৎসা করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম’-এর মতো এঁদেরও বিশেষ পোশাক দেওয়া হবে। যে-যে জেলায় এখনও প্রকল্পটি চালু হয়নি, তাদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করে এটি দ্রুত চালু করার নির্দেশ দেন তিনি।
তবে পথ দুর্ঘটনা শুধু নয়, অন্য বিপদের কথাও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, অ্যাম্বুল্যান্স, ‘প্রেস’ লেখা গাড়ি বা সরকারি গাড়ির নাম করে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার করা হচ্ছে। দু’দিন আগে কলকাতায় এক মহিলা আইবি-র গাড়ি বলে লালবাতি জ্বালিয়ে যাচ্ছিল। তাকে ধরে দেখা যায় যে সে গাঁজা ও আগ্নেয়াস্ত্র পাচার করছে। মঙ্গলবারও চার জন বিজেপি নেতা বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নাকা চেকিংয়ে ধরা পড়েছে বলে দাবি করে প্রতিটি থানা এলাকায় নিয়মিত নাকা চেকিং করার নির্দেশ দেন মমতা। সংসদে হামলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “ওরা সরকারি গাড়ি নিয়েই ঢুকেছিল। যারা অপরাধ করে, তারা এই সবই ব্যবহার করে।”
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চওড়া করার জন্য উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আবেদন করেছিলেন নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের প্রতিনিধিরা। প্রায় দু’হাজার ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা রানাঘাট, ফুলিয়া, দিগনগর ও বড়জাগুলিয়ায় হাব গড়ে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেন। জেলাশাসক বিভু গোয়েলকে সমস্ত তথ্য পাঠাতে বলেন মুখ্যসচিব। মুখ্যমন্ত্রী জানান, জনসাধারণের রাস্তার প্রয়োজন আছে। কিন্তু মানবিক কারণেই উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকার কথা ভাবতে হবে। খুব ভাল কিছু করা না গেলেও সাধারণ রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy