মালদহে তৃণমূল কাউন্সিলর দুলাল সরকার ওরফে বাবলা খুনের নেপথ্যে দলের অন্দরের কোন্দলই, তা মোটামুটি স্পষ্ট। জেলার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বই যে তৃণমূল নেতার প্রাণ কেড়েছে, তা পুলিশি তদন্তেও উঠে এসেছে। সোমবার নিহত দুলারের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই দিকেই ইঙ্গিত করলেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘মালদহের রাজনীতিটা বুঝি না! রহস্যটা কী?’’
সোমবারই মুর্শিদাবাদ থেকে মালদহ সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলায় এসেই বিকেলে দুলালের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী চৈতালি ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। পরে বাইরে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তৃণমূল নেতাকে খুনের নেথপ্যে যে-ই হোন না কেন, কড়া পদক্ষেপ করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এই কেসে আমি এটুকুই বলতে পারি, যে যত বড়ই হোক না কেন, কড়া পদক্ষেপ করা হবে। কতগুলো কথা আমার কানে এসেছে। সেগুলো তদন্তের ব্যাপার। আমি ডিজির সঙ্গেও কথা বলেছি। এসপিকেও বলেছি। আইবি-র যাঁরা আছেন, তাঁদেরও বলেছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, দুলালের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ দিনের পরিচিতি। দুলাল দলেরও নিরলস কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘বাবলা আমার চিরকালের পরিচিত। ও যেমন আমাদের দলের নিরলস কর্মী ছিল। এলাকাতেও ভীষণ জনপ্রিয় ছিল ও। বাবলার অসম্পূর্ণ কাজ চৈতালি করবে।’’
এর পরেই মালদহের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, জেলার রাজনীতিতে কিছু একটা ‘রহস্য’ রয়েছে। এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সাংসদ-বিধায়ক আমরা পাই না। কিন্তু পুরভোটে আমাদের কেউ কেউ জিতে যায়। পুরসভা পাই আমরা। রহস্যটা কী? অনেক রকম খেলা চলে। এই রহস্যটা ভেদ করতে হবে।’’
গত ২ জানুয়ারি ইংরেজবাজারের মহানন্দাপল্লিতে দুষ্কৃতীদের ছোড়া একাধিক গুলিতে নিহত হন দুলাল। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে বিহারের বাসিন্দা মহম্মদ সামি আখতার, আব্দুল গনি এবং ইংরেজবাজারের টিঙ্কু ঘোষ, অভিজিৎ ঘোষ ও অমিত রজককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয় নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি এবং স্বপন শর্মাকে। নরেন্দ্রনাথ মালদহ শহরের তৃণমূল সভাপতি ছিলেন। নরেন্দ্রনাথ গ্রেফতার হতেই তৃণমূল তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে। নরেন্দ্রনাথ এবং স্বপনই তৃণমূল নেতা দুলালকে খুনের ‘মূল চক্রী’ বলে জানিয়েছে পুলিশ। জানা যায়, ৫০ লক্ষ টাকা সুপারি দিয়ে খুন করানো হয় দুলালকে। এর পর তৃণমূল নেতার খুনের তদন্তে সিট গঠন করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, দুলালকে খুনের জন্য মোট চার ‘শুটার’ গিয়েছিলেন অকুস্থলে। তাঁদের মধ্যে বিহারের বাসিন্দা ‘শুটার’ মহম্মদ আসরারকে রবিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখনও কয়েক জন পলাতক।
বস্তুত, স্বামীর হত্যা মামলায় পুলিশ আট জনকে গ্রেফতার করলেও চৈতালি তাতে খুশি নন। তাঁর দাবি, ‘বড় মাথা’ রয়েছে দুলাল-খুনের নেপথ্যে। আদালতে সওয়াল-জবাবের সময়েও চৈতালী দাবি করেছিলেন, দুলাল খুনের নেপথ্যে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে।