নিয়ন্ত্রণ: সোনাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে ভিড় সামলাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
আগের তুলনায় উত্তর দিনাজপুরে সরকারি হাসপাতালে প্রসবের হার বেড়েছে। শিক্ষার হারও বেড়েছে। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং কেন এই জেলায় এখনও সরকারি হাসপাতালে প্রসবের হার ১০০ শতাংশ হয়নি, কিংবা জেলায় কেন পর্যাপ্ত মেয়েদের স্কুল, হাইস্কুল নেই সেই প্রশ্নে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার বিকেলে চোপড়ার সোনাপুর এলাকায় জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। শুরুতেই স্বাস্থ্য নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন তিনি এবং তা করেন কড়া সুরে। রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা মাইক হাতে উঠে দাঁড়ান। তাঁর দিকে ধেয়ে আসতে থাকে একের পর এক প্রশ্ন। প্রশ্ন ওঠে, ‘‘রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে প্রায়ই গোলমাল হচ্ছে কেন? ডাক্তাররা থাকেন না কেন?’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘ফাঁকিবাজি চলছে। আপনাকে আরও সময় দিতে হবে।’’ ‘হ্যাঁ ম্যাডাম’ বলে বসে যান স্বাস্থ্য আধিকারিক। তারপরে জেলার বিধায়ক এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে সেই এলাকার হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে জানতে চান।
দু’বছর আগেও জেলায় প্রতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ছিল ৫৮ শতাংশ। পরিকাঠামোর অভাবে গ্রামে এমনকী শহরেও প্রসবের সময়ে মায়েদের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সরকারি রিপোর্ট বলছে, পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হলেও এখনও প্রতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৭৮ শতাংশে আটকে রয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে আরও বেশি সময় দিয়ে ঘোরাঘুরির নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
কী পেল জেলা
•
রায়গঞ্জে ৫০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ
•
৪টি মডেল স্কুল
•
কালিয়াগঞ্জে শিশু উদ্যান, কার্পেট শিল্পের হাব, বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের উদ্বোধন
•
ইসলামপুর মহকুমায় কৃষি ভবন
•
গোয়ালপোখর, ইটাহারে নতুন থানা
•
ইসলামপুর বাইপাসের জট কাটাতে নির্দেশ
•
গোয়ালপোখর, ইটাহার ও করণদিঘিতে ভোল্টেজের সমস্যা মেটাতে নির্দেশ
•
রায়গঞ্জ-বারসই রাস্তা নিয়ে বিহার সরকারের সঙ্গে আলোচনা
জেলার শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে যে তিনি ওয়াকিবহাল, তা-ও বৈঠকে জানিয়ে দেন। চলতি বছরে মাধ্যমিকের ফলের নিরিখেও রাজ্যের অন্য জেলাগুলির তুলনায় ঢের পিছনে ছিল উত্তর দিনাজপুর। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা এই দুই মৌলিক অধিকার নিয়ে জেলায় বারবার অভিযোগ ওঠায় শাসক দলকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। তার মোকাবিলা করতে প্রশাসনিক বৈঠকে রাশ ধরতে হল খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেই।
স্কুলে মিড ডে মিলে কী রান্না হচ্ছে থেকে কোন এলাকায় স্কুল নেই—সব জানতে চান। প্রশাসনিক এক কর্তার দাবি, নিয়মিত মিড ডে মিল না হলে অথবা খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ থাকলে পড়ুয়ারা স্কুল বিমুখ হয়ে যাবে। কোনও এলাকা থেকে স্কুলের দূরত্ব বেশি হলেও স্কুলছুটের প্রবণতা বাড়বে। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রী নতুন স্কুলের প্রস্তাব চেয়েছেন বলে দাবি ওই কর্তার। শুধু বিধায়ক নন, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য থেকে কাউন্সিলর সর্ব স্তরের জনপ্রতিনিধিদের নাম করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোথায় নতুন স্কুল তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। আপনারা সেই প্রস্তাব পাঠান।’’
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি ও অঙ্কের অধ্যাপক অশোক দাস ও বাংলার অধ্যাপক দীপক বর্মন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়াদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী উপাচার্যের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় কেমন চলছে, তা জানতে চান। উপাচার্য অনিলবাবু আরও একটা কলেজ তৈরির প্রস্তাব দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল, ক্লাসরুম সহ সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়ন করার ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন পড়ুয়ারা। মুখ্যমন্ত্রী জানান রাজ্য সরকার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। সেই টাকায় কাজ শেষ হলে সমস্ত সমস্যা মিটে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy