নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের মহাসমাবেশ ডেকেছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সমাবেশ শেষ হতে না-হতেই সন্ধ্যায় নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের আট জন তৃণমূল কাউন্সিলরকে নিয়ে বিশেষ বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে ফিরহাদ হাকিমও ছিলেন। ভবানীপুর কেন্দ্র নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে আরও শক্তিশালী হওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে, চলমান প্রকল্প এবং উন্নয়নমূলক কাজগুলি দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত দলীয় কর্মসূচিতে ভোটার তালিকা নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আগামী বিধানসভা ভোটে ২১৫টা আসন পেতেই হবে। অভিষেক ঠিকই বলেছে। আসন আরও বেশি পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ২১৫টা আসনের কম কোনও মতেই নয়। এ বার বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের জামানত জব্দ করার পালা।” এর পর, কর্মসূচির শেষে, সন্ধ্যায় নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কাউন্সিলরদের ডেকে পাঠান মমতা। বৈঠকে ছিলেন ভবানীপুর বিধানসভার অন্তর্গত ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এ ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন— তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ভাই সন্দীপ বক্সী (৭২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ), অসীম বসু (৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং মেয়র পারিষদ), দেবলীনা বিশ্বাস (৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং বোরো-৯-এর চেয়ারপার্সন), কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় (৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ)। এ ছাড়াও অন্য কাউন্সিলররা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ভবানীপুরের উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর নিয়ে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি যে সব প্রকল্প বা সরকারি নির্মাণ কাজ চলছে, তা দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুরে ৭৩,৭৭ এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ডেই কেবলমাত্র এগিয়েছিল তৃণমূল। বাকি পাঁচটিতে অর্থাৎ ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। সেই বিষয়ে দলের কাউন্সিলরদের বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে বলেছেন মমতা।
আরও পড়ুন:
গত লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কিছু অংশে বিজেপির অগ্রগতি তৃণমূলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিশেষ করে, ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছিল। মাত্র তিনটি ওয়ার্ড— ৭৩, ৭৭ এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে ছিল।
মমতা এই বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, কাউন্সিলরদের এলাকায় বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে যে সব ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে ছিল, সে সব ওয়ার্ডে তৃণমূলের সংগঠন আরও মজবুত করতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে হবে এবং তাঁদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, সাধারণ মানুষের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে। রাস্তা মেরামত, নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জল সরবরাহ এবং অন্যান্য নাগরিক পরিষেবায় কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।
এই বৈঠককে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রভাব ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটেও পড়তে পারে। ভবানীপুরে বিজেপি শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যা তৃণমূলের জন্য উদ্বেগের কারণ। সেই কারণে, ভবানীপুরের প্রতিটি ওয়ার্ডে তৃণমূলকে আরও সক্রিয় করতে, বিশেষ করে যে সব ওয়ার্ডে বিজেপি ভাল ফল করেছে, সে সব অঞ্চলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে মুখ্যমন্ত্রী কাউন্সিলরদের উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুত শেষ করার পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে বলেছেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের হারে ভবানীপুরে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ২০১৯ সালে খোদ মমতার ওয়ার্ডেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। তবে পুরসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে এর কোনও প্রতিফলন না পড়লেও বিষয়টি একে বারেই হালকা ভাবে নিচ্ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই এখন থেকেই ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে দলকে ‘জোরকদমে’ কাজে নামার বার্তা দিতে নিজের কেন্দ্রের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠক থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ভবানীপুর নিয়ে তৃণমূল কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় এবং মমতা নিজে সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই কেন্দ্রের পুনর্গঠনে।