E-Paper

হেরে গেলেও তো সরকার থাকবে: মমতা

দলের একটি অংশের মতে, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পরে সরকারের ভাবমূর্তি শোধরাতে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চালু করেছিল তৃণমূল। এ বারে মমতা ভোটের আগেই সেই জায়গাটিতে ফিরে যেতে চাইলেন।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩ ০৭:৫৮
Mamata Banerjee

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

যদি সব হেরে যান! সোমবার কোচবিহার থেকে পঞ্চায়েত ভোট-প্রচারের ইনিংসের শুরুতেই তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে এমন ‘বেসুর’।

সোমবারের কোচবিহারের চান্দামারির প্রাণনাথ হাইস্কুল মাঠের সেই প্রচারসভায় মমতা বলেন, ‘‘নির্বাচনে সব হেরে গেলেও সরকার বিদায় নেবে না। আমাদের সরকারই থাকবে, তাই মনে রাখবেন চিন্তা করার, ভয় করার কোনও প্রয়োজন নেই।” তাঁর এই বক্তব্য ধন্দে ফেলেছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশকে। তাঁদের মনে হচ্ছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি, আদালতের নজর, রাজ্যপালের সঙ্গে মতবিরোধ— এমন নানা কারণে হয়তো কিছুটা চাপে তৃণমূলের শীর্ষ নেত্রী।

যদিও আর একটি অংশের মত, পঞ্চায়েত স্তরেও দুর্নীতি, কাটমানি এবং স্বচ্ছতার অভাবের যে অভিযোগ উঠেছে, যে সমস্যায় বার বার বিদ্ধ হতে হচ্ছে বলে দাবি করছেন সাধারণ মানুষ, সেই জায়গাটিকেই এ দিন স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের একটি অংশের মতে, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পরে সরকারের ভাবমূর্তি শোধরাতে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চালু করেছিল তৃণমূল। এ বারে মমতা পঞ্চায়েত ভোটের আগেই সেই জায়গাটিতে ফিরে যেতে চাইলেন। তাই এ দিন তিনি জানিয়ে দিলেন, “পঞ্চায়েত এ বার থেকে নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করব, যাতে কেউ চুরি করতে না পারে। যদি কেউ টাকা চায়, তার ছবি তুলে আমাকে পাঠিয়ে দেবেন। তার পরে দেখব, কার কত বড় ক্ষমতা।” তাঁর সংযোজন, “যদি আমাদের কেউ আপনাদের দুঃখ দিয়ে থাকে, আমি তাদের হয়ে আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ভুল বুঝবেন না। যদি কেউ দুষ্টুমি করে, দু’টো চড় মারবেন। এই অধিকার দিয়ে গেলাম।”

দুর্নীতি ও কাটমানির যে অভিযোগ গ্রামগঞ্জে উঠেছে, তাকেও মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের কোর্টেই ঠেলতে চেয়েছেন। কারণ, বিরোধীদের দাবি, প্রচারে গিয়ে একশো দিনের কাজ বা আবাস প্রকল্পের ঘর নিয়ে প্রশ্ন ও বিক্ষোভের মুখে পড়ার সম্ভাবনা শাসক দলেরই বেশি। তাই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দাবি করেন, ‘‘গ্রামের রাস্তার টাকা কেন্দ্র আটকে দিয়েছে। আমরা আদায় করে ছাড়ব। আমরা পঞ্চায়েতে জিতে টাকা আদায় করব।’’ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রতি তাঁর তোপ, ‘‘সাত হাজার কোটি টাকা পেমেন্ট করেনি। রাজনৈতিক ভাবে পঞ্চায়েতে ও লোকসভায় পরাজিত করব। আগামীতে লোকসভায় জিতে কেন্দ্রে নতুন সরকার আসবে। আমরা টাকা নিয়ে আসব।’’

বিরোধীদের অবশ্য ব্যাখ্যা, ২০১৮ সালের তুলনায় এ বারে বিরোধী-প্রতিরোধ অনেক বেশি। পঞ্চায়েতের তিনটি স্তর মিলিয়ে বেশিরভাগ আসনেই বিরোধীরা প্রার্থী দিয়েছে। জেলা পরিষদেও দু-চারটি বাদে সব ক্ষেত্রেই লড়াই হচ্ছে। আদালতের রায়ে প্রত্যেকটি জেলায় এ বারে প্রায় বুথে-বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা। সে সব দেখেই মমতার গলায় ‘অন্য সুর’।

সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন হলে তৃণমূল পরাজিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে হারলে রাজ্যের সরকার বিদায় নেবে না। কিন্তু দু’বছর পরে, এই সরকার বিদায় নেবে। সে আতঙ্ক কাজ করছে তাঁর মধ্যে।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায়ের দাবি, “দুর্নীতি, কাটমানির কারণে মানুষ তৃণমূলের পাশ থেকে সরে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন। তাই হারের কথা বলছেন।’’

যদিও শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র, তৃণমূলের গৌতম দেব বলেন, ‘‘নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে চিন্তিত নয় তৃণমূল। মানুষের সঙ্গে দলের বন্ধন অটুট রয়েছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee WB Panchayat Election 2023 TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy