Advertisement
E-Paper

অনেক সুযোগ দিয়েছিলেন মমতা, কিন্তু শোধরাননি শোভন

বৈশাখী-নির্ভরতা বাড়ার পাশাপাশি নিজেকে দিন-দিন গুটিয়ে নেওয়া, কাজ-পালানো মানসিকতা, সব কিছু মিলিয়ে শোভন এমন এক অবস্থান নিয়ে ফেলেছিলেন, যেখানে তিনি কেন আছেন, সেই প্রশ্ন উঠছিল বারবার। এমনকি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোভনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করছেন কেন, গুঞ্জন ছিল তা নিয়েও। 

দেবাশিস ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৯
বিচ্ছেদ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বিচ্ছেদ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

একটি পুরনো বাংলা গানের কলি মনে পড়ছে— ‘কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস। আমি বলি আমার সর্বনাশ!’

আপাত ভাবে বলতেই হবে, শোভন ‘প্রেমের বলি’ হলেন। অনেকেরই বিশ্বাস, বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাঁর এই পরিণতির জন্য প্রধানত দায়ী। সত্যি বললে, বিষয়টিকে বিশ্বাসের স্তরে উন্নীত করেছেন শোভন স্বয়ং। বৈশাখী-নির্ভরতা বাড়ার পাশাপাশি নিজেকে দিন-দিন গুটিয়ে নেওয়া, কাজ-পালানো মানসিকতা, সব কিছু মিলিয়ে শোভন এমন এক অবস্থান নিয়ে ফেলেছিলেন, যেখানে তিনি কেন আছেন, সেই প্রশ্ন উঠছিল বারবার। এমনকি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোভনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করছেন কেন, গুঞ্জন ছিল তা নিয়েও।

এটা ঘটনা যে, ব্যক্তিগত জীবনযাপনকে বাজারের খোরাক করে তুলে শোভন তৃণমূলকে বিড়ম্বনায় ফেলেছিলেন। তবু ব্যবস্থা নেওয়ার আগে মমতা তাঁকে সংশোধনের প্রচুর সুযোগও দিয়েছেন। দলে প্রভাবশালী কোনও কোনও নেতা-সাংসদের ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও তাঁকে পুরোপুরি ক্ষমতাচ্যুত করেননি। শোভনের দফতর ছেঁটে, দলীয় দায়িত্ব কমিয়ে, নিরাপত্তা কাটছাঁট করেও তাঁকে মন্ত্রী-মেয়র দুই পদেই রেখে দিয়েছিলেন মমতা। বারবার নিজে বুঝিয়েছেন। শুভার্থীদের দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। ভর্ৎসনা করেছেন, এমনকি মঙ্গলবারেও। কিছুতেই কাজ হয়নি। শোভন তাঁর ‘প্রিয়’ বান্ধবী বৈশাখীকে ‘প্রাধান্য’ দিয়েছেন সবার উপরে।

আরও পড়ুন: নিজেই নিজেকে শেষ করলেন: রত্না

তথাপি তাঁর বিরুদ্ধে অকস্মাৎ এমন কঠিন পদক্ষেপ করার অভিপ্রায় এ দিনও মমতার ছিল না। হয়তো তিনি আরও অপেক্ষা করতেন। হয়তো স্নেহের প্রশ্রয়ে আরও কিছু দিন তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী ‘কানন’কে কোনও না কোনও পদে রেখে দিতেন। কিন্তু শোভনের পদত্যাগের ভঙ্গি এবং চিঠির ভাষা মমতার কাছে অত্যন্ত অশোভন ঠেকেছে। তিনি কার্যত অপমানিত বোধ করেছেন। সেটাই কাল হল।

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়

মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটি সরকারি বৈঠক করার পরে সাংবাদিক বৈঠকেও শোভনের থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি যাননি। উল্টে পদত্যাগপত্র দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি গৌতম সান্যালের কাছে। একটি ছোট্ট খাম। ভিতরে চিঠিতে লেখা, ‘আন্ডার কম্পালশন’ (বাধ্য হয়ে) তিনি মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিচ্ছেন। এ ভাবে চিঠি দিয়ে চলে যাওয়া এবং ‘কম্পালশন’ শব্দটি মমতার কাছে অসম্মানজনক মনে হয়। তিনি তৎক্ষণাৎ সম্মতি দিয়ে নোট দেন, ‘ইয়েস প্লিজ’। এবং মুখ্যসচিবকে লেখেন, অবিলম্বে রাজ্যপালের কাছে ফাইলটি পাঠিয়ে দিন।

শোভনের মন্ত্রিত্ব এ ভাবেই শেষ হয়। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে কলকাতা নতুন মেয়রও পেয়ে যাবে।
শোভন যে ইদানীং মমতাকে এড়িয়ে চলতে চাইতেন, সেটা কারও দৃষ্টি এড়াত না। যেমন, এ বার মমতার বাড়ির কালীপুজোয় এবং ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে শোভনের তাৎপর্যপূর্ণ অনুপস্থিতি। তবু অপার স্নেহে নেত্রী কিছু দিন আগেও ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, ‘‘কাননের কাজে মন নেই। তবু একটা পদে ওকে রাখব। তাতে ওর একটু মর্যাদা থাকবে। ও আমার বহু সুখ-দুঃখের সঙ্গী। সব সময় পাশে থেকেছে।’’ এটা নিশ্চিত জানি, মঙ্গলবার চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে তাই মমতাও স্বস্তিতে নেই।

আরও পড়ুন: বৈশাখী বিতর্কে শেষ পর্যন্ত সরতেই হল শোভনকে

আর শোভন? তিনি ধরা ছোঁয়ায় আসেননি। যদিও হাওয়ায় প্রশ্ন ঘুরছে, সারদা-নারদে ‘বিদ্ধ’ শোভনের রাজনৈতিক জীবন কি এ বার অন্য কোনও বাঁক নেবে? রাজনীতিতে শেষ কথা কিছু নেই। তবু শোভনকে যাঁরা জানেন, তাঁরা আপাতত এই সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে চান। শোভন নিজেও বহু বার বলেছেন, মমতাকে ছেড়ে দিতে হলে তিনি রাজনীতিই করবেন না। এবং অবশেষে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভালবেসে রাজা হতে না-পারলেও ‘ফকির’ হতে তাঁর আপত্তি নেই!

Sovan Chatterjee Mamata Banerjee Baishakhi Banerjee TMC Nabanna West Bengal Govt মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy