Advertisement
E-Paper

৩ গুণ বেড়েছে চাষির আয়! ব্যাখ্যায় বিভ্রান্তি

আগামী চার বছরের মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৯
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে।

আগামী চার বছরের মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যেই চাষির আয় তিন গুণ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

নীতি আয়োগের সদস্য রমেশ চন্দ রাজ্যের কৃষিসচিবকে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছিলেন, চাষিদের রোজগার তিন গুণ হওয়ার মাপকাঠি কি? সরকার কী ভাবে এই হিসাব করেছে? ২০১৭-১৮ সালের রাজ্যের আর্থিক সমীক্ষায় এ নিয়ে বিশদে কিছু নেই কেন? কী ভাবে সরকার এই সাফল্য পেল?

নবান্নের খবর, মাস দেড়েকের টানাপড়েন এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকের পরে একটি খসড়া জবাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কৃষি উপদেষ্টার তৈরি করা খসড়ায় ‘গ্রহণযোগ্য’ জবাব নেই বলেই মনে করেছেন নবান্নের শীর্ষ আমলারা। তাই শেষ পর্যন্ত নীতি আয়োগে কোনও জবাব পাঠানো হয়নি।

কৃষি দফতরের দাবি, ২০১০-১১ সালে এ রাজ্যে চাষির যা আয় ছিল, তার তুলনায় ২০১৬-১৭ সালে আয় ২.৬ গুণ বেড়েছে। ২০১৭-১৮ সালে তা বেড়ে ৩.২ গুণ হতে পারে। ২০১০-১১ সালে এক জন চাষির পারিবারিক রোজগার ছিল ৯১ হাজার ১১ টাকা। ২০১৬-১৭ সালে তা হয়েছে ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ১২৩ টাকা। এবং ২০১৭-১৮ সালে এই রোজগার ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় পৌঁছবে। এই হিসাব কষা হয়েছে ২০১১-১২ সালের ‘কারেন্ট প্রাইসের’ সাপেক্ষে। কিন্তু কৃষি কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, চাষির প্রকৃত আয় অর্থনীতির সাধারণ নিয়মে নির্দিষ্ট কোনও সময়ের ‘কনস্টান্ট প্রাইসের’ সাপেক্ষেই নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। চলতি বাজার দরের সাপেক্ষে (কারেন্ট প্রাইস) তার হিসাব গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, ২০১০ সালে ১০০ টাকার যা দাম, ২০১৮ সালে ১০০ টাকার দাম তা নয়। মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেকটাই কম। ফলে নবান্নের হিসেবে টাকার অঙ্কে চাষির রোজগার তিন গুণ বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে প্রকৃত বৃদ্ধি আদৌ ততটা নয়।

চাষির আয় দ্বিগুণ করতে চেয়ে মাস দু’য়েক আগে প্রধানমন্ত্রী চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় সরকার চাষির আয় বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গে আগেই হয়ে গিয়েছে। গত সাত বছরে রাজ্যে চাষির আয় বেড়েছে তিন গুণ। প্রধানমন্ত্রী দফতর এর পর সেই চিঠি নীতি আয়োগে পাঠিয়ে খোঁজখবর করতে বলে। কেন্দ্রের মতে, স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও দেশে যখন চাষির আয় নির্দিষ্ট সময়ে বেড়ে দ্বিগুণ হয়নি, তখন গত সাত বছরে পশ্চিমবঙ্গে কোন জাদুতে তা করা সম্ভব হল।

রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার অবশ্য বলেছেন, ‘‘নীতি আয়োগের সংশয়ের কোনও প্রশ্নই নেই। ওরা আর্থিক সমীক্ষায় কেন এই হিসেব পেশ করা হয়নি সে কথা জানতে চেয়েছিল, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

কী সেই হিসাব-পদ্ধতি?

প্রদীপবাবু জানান, রাজ্যে কী পরিমাণ জমিতে চাষ হচ্ছে তার হিসাব দেয় ভূমি দফতর। ফলন কেমন হল তার হিসাব দেয় পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান দফতর। সেখান থেকে বের করা হয়েছে জমির উৎপাদনশীলতা। ফসল ওঠার ঠিক পরের ছ’সপ্তাহের মধ্যে বাজারে যা দাম থাকে, সেখান থেকে বের হয়েছে মোট আয়। তা থেকে চাষের খরচ বাদ দিয়ে চাষির গড় আয় বের করা হয়েছে। তা হলে এ নিয়ে কেন্দ্রের এত সংশয় কেন? কৃষি অধিকর্তার জবাব, ‘‘জবাব পাওয়ার পর তা আর থাকবে বলে মনে হয় না।’’ যদিও নবান্নের খবর, কৃষি উপদেষ্টার তৈরি করে দেওয়া খসড়া জবাব চূড়ান্ত করে দিল্লিতে পাঠাতে রাজিই হননি কৃষিসচিব।

Mamata Banerjee Confusion Income Farmer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy