মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
‘জোড়া সংক্রান্তি’র মুখে দাঁড়িয়ে রাজ্যের বাৎসরিক পুণ্যার্জন আর তীর্থ ভাবনাতেও লেগে গেল রাজনীতির রং। পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যস্নানকে সামনে রেখে ‘ভোট-সংক্রান্তি’র মুখে গঙ্গাসাগরের উন্নয়নে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ চলে এল রাজ্যের প্রতি দিল্লির ‘বঞ্চনা’র বন্ধনীতে।
বঞ্চনার অভিযোগ নতুন নয়। তবে লোকসভা ভোটের মাস দুই আগে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে আলোড়নের মধ্যেই সামনে এল গঙ্গাসাগর নিয়ে চাপানউতোর। কিছুটা আক্ষেপের সুরে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জানি না, কেন কেন্দ্রীয় সরকার এখনও গঙ্গাসাগর মেলাকে স্বীকৃতি দিল না!’’ রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার লাগাতার অভিযোগের মধ্যেই এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কুম্ভমেলার থেকেও বড় এই মেলা। অথচ কুম্ভমেলার জন্য সব টাকা-পয়সা দিলেও গঙ্গাসাগর মেলার জন্য এক পয়সাও দেয় না কেন্দ্র।’’ কুম্ভ ও গঙ্গাসাগরের মধ্যে ‘বৈষম্য’ নিয়ে ফের সরব হলেও মমতা এ দিন অবশ্য রাম মন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে আড়ম্বরের প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যস্নান ও গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন রাজ্যে। ফলে, এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা তো বটেই, ভিন্ রাজ্য থেকে আসা এই তীর্থযাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো বরাবরই আলোচনায়। তা খতিয়ে দেখতে এ দিন সাগরে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কুম্ভমেলা নিঃন্দেহে বড়। কিন্তু সেখানে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। তীর্থযাত্রীরা ট্রেন, বাসে যাতায়াত করতে পারেন। কিন্তু গঙ্গাসাগরের একমাত্র জলপথই ভরসা।’’ এই বাধা দূর করতে প্রস্তাবিত সেতু তৈরি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ করে মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার একটা চিঠির উত্তরও দেয়নি। আমরাই করব। বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছি।’’
এটা ঠিক যে, গত ১০ বছরে গঙ্গাসাগরে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে তীর্থযাত্রীদের সুবিধা হয়েছে। তার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘২১টি জেটিতে ১০০ লঞ্চ ও ৩২ ভেসেলের ব্যবস্থা হয়েছে। আড়াই হাজার বাস চলাচল করছে।’’ মেলাকে ঘিরে সাগরদ্বীপে আলো, রাস্তা, পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাম আমলে এখানে কিছু ছিল না। যা হয়েছে, তা আমরা করেছি। তীর্থকর মুকুব করেছি। পাঁচ লক্ষ টাকা করে বিমা করে দিয়েছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বারবার কেন্দ্রকে লিখেছি। গঙ্গাসাগর মেলার ইউনেস্কো-স্বীকৃতির জন্যও লিখেছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কিছু করেনি।’’ এ বারেও সাগরে এসে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ ও কপিলমুনি মন্দিরে যান। উপস্থিত পুরোহিত, সাধুসন্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও উপহার বিনিময় করেন। তাঁরাও মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েই গঙ্গাসাগরের উন্নয়নে তৃণমূল সরকারের আন্তরিক উদ্যোগের কথা স্বীকার করে নেন। কপিলমুনি মন্দিরে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শেষ হতেই স্লোগান ওঠে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy