Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

গান্ধীজির আদলে দুর্গার অসুর নিয়ে প্রথম বার সরব মমতা, জানালেন পুজোয় কেন নীরব ছিল নবান্ন

ভবানীপুরে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে অসুর-বিতর্কে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনায় দুঃখ পেয়েছেন বলে জানান তিনি। সর্বধর্মসমন্বয়ের বার্তাও দেন তৃণমূলনেত্রী।

অসুর বিতর্কে মুখ খুললেন মমতা।

অসুর বিতর্কে মুখ খুললেন মমতা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৮:১৩
Share: Save:

দুর্গাপুজোর সময় মহাত্মা গান্ধীর আদলে অসুরের মূর্তি ঘিরে হইচই পড়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। এ বার সেই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ভবানীপুরে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী ছিল। সেখানে মমতা বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর নাম করে গান্ধীজিকে অসুর বানিয়েছেন! কী শাস্তি হওয়া উচিত? জনতাই শাস্তি দেবে। লজ্জার ব্যাপার।’’

দক্ষিণ কলকাতার রুবি পার্কের অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার দুর্গাপুজো ঘিরে বিতর্ক বাধে। পুজোর মধ্যেই সমাজমাধ্যমে ওই পুজোর প্রতিমার ছবি ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। দেখা যায়, অসুরের যে মূর্তিটি রয়েছে, সেটির সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর মুখের সাদৃশ্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, জাতির জনকের মতো চশমা ও ধুতিও পরানো হয়েছিল অসুরের মূর্তিটিতে। এই ছবি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ হতেই বিতর্ক বাধে। জানাজানি হতেই সপ্তমীর রাতে অসুরের মূর্তিটিতে চুল ও গোঁফ লাগিয়ে চেহারা বদলে দেয় পুলিশই।

সে প্রসঙ্গে বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে মমতা সকলের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘‘গান্ধীজিকে দেশের নেতা হিসাবে মানেন কি? না, মানেন না?’’ এর পরেই তিনি বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, ‘‘যাঁরা কথায় কথায় বলেন, মমতাজি দুর্গাপুজো করতে দেন না, সরস্বতী পুজো করতে দেন না, আপনারা তো দুর্গাপুজোর নাম করে গান্ধীজিকে অসুর বানিয়েছেন! কী শাস্তি হওয়া উচিত? আমরা শাস্তি দেব না। জনতা শাস্তি দেবে।’’

বস্তুত, মমতা বাংলার মাটিতে দুর্গাপুজো করতে দেন না বলে অতীতে বার বার অভিযোগে সরব হয়েছে বিজেপি। পদ্ম শিবিরের সেই অভিযোগের পাল্টা অসুর-বিতর্ক সামনে এনে মমতার এই মন্তব্য রাজনৈতিক ভাবে ইঙ্গিতপূর্ণ। বিতর্কের এত দিন পর কেন মুখ খুললেন, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুঃখ পেয়েছি খুব। কিন্তু কাউকে কিছু বলিনি। কারণ, চাইনি পুজোর সময় গোলমাল হোক। চেয়েছিলাম নির্বিঘ্নে পুজো কাটুক। লোকে জানলে প্রতিবাদ করত। শান্তিপূর্ণ ভাবে পুজো সম্পন্ন করতে চেয়েছিলাম।’’ তিনি বলেন, ‘‘গুরুদ্বারে গিয়ে গুরু নানককে নিয়ে কেউ কিছু বললে কেউ শুনবে? জৈনদের ধর্মগুরুদের নিয়ে কেউ কিছু বললে শুনবে? এ সব সহ্য করা যায়?’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘প্রথমে তো জানতেই পারিনি এ সব। ভিতরে ভিতরে কবে করেছিল। দেশের এক নম্বর নেতাকে অসুর বানালেন! লজ্জা হচ্ছে এটা বলতে। দুঃখ পেয়েছি।’’

ওই পুজোর মূল উদ্যোক্তা চন্দ্রচূড় গোস্বামী। তিনি নিজেকে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি বলে দাবি করেন। ২০২১ সালে ভোটেও লড়েছিলেন চন্দ্রচূড়। ওই বছর ভবানীপুরের উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে মাত্র ৮১টি ভোট পেয়েই সেই দৌড় থামাতে হয় তাঁকে। বিতর্ক প্রসঙ্গে চন্দ্রচূড় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, “নো অবজেকশন নিয়ে পুজো করা হচ্ছে। তবে গান্ধীকে অসুর রূপে দেখানো হয়নি। এই মিল নিতান্তই কাকতালীয়। এটাও আবার অস্বীকার করছি না যে, মোহনদাস কর্মচাঁদ গান্ধীকে যে জাতির জনক বা জাতির পিতা বলা হয় ঠিকই, কিন্তু আমরা তা মানি না। আমরা নেতাজিকে শ্রদ্ধা করি।” যদিও এই ঘটনায় চন্দ্রচূড়ের পাশে দাঁড়াননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি এই ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE