E-Paper

রথ-বিতর্কে মমতার দাবি: ‘শাস্ত্র নয়, মানুষ বুঝি’

পুরীর আদলেই দিঘার জগন্নাথ মন্দির। তিনটি রথও হুবহু পুরীর মতো। মন্দিরের নির্মাণপর্ব থেকে সূচনাকালে পুরীর প্রতিনিধিরা ছিলেন।

শান্তনু ঘোষ, কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫ ০৮:৩৪
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

দিঘার মন্দিরের ‘জগন্নাথ ধাম’ নামকরণ, প্রসাদ বিতরণ, পূজাপাঠের শাস্ত্রীয় রীতি নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। বিরোধীদের পাশাপাশি, পুরীর মহারাজা গজপতি দিব্যজ্যোতি সিংহ দেবও তাতে ঘি ঢেলেছেন। দিঘায় রথযাত্রার আগে পাল্টা জবাব দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘‘শাস্ত্র এত বুঝি না। আমি মানুষ বুঝি। শাস্ত্র মানুষ তৈরি করে।’’

পুরীর আদলেই দিঘার জগন্নাথ মন্দির। তিনটি রথও হুবহু পুরীর মতো। মন্দিরের নির্মাণপর্ব থেকে সূচনাকালে পুরীর প্রতিনিধিরা ছিলেন। তবে রথে শ্রীক্ষেত্রের কেউ থাকছেন না। পুরোটাই সামলাচ্ছে মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইসকন। পুরীর মহারাজা গজপতি দিব্যজ্যোতি সিংহ দেব এ দিন বলেন, ‘‘দিঘায় সুবৃহৎ মন্দির হয়েছে, সেটা খুবই ভাল। কিন্তু যে কাজ দিঘায় হয়েছে তা শাস্ত্র ও পরম্পরা বিরুদ্ধ।’’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিনও বলেছেন, “পুরী হল তীর্থ, আর উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যেটা করেছেন, সেটা পর্যটন কেন্দ্র।’’ মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেন, ‘‘ধর্ম মানে মানবিকতা। যাঁরা এখানে পুজো করছেন, সকলেই শাস্ত্রের লোক। পুজোর প্রথম দিনে রাজেশ দয়িতাপতি এসেছিলেন।’’

ইসকনের কলকাতা শাখার সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস জানান, পুরীর মহারাজা তাঁদের কাছে নানা আপত্তি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা বিতর্কসভার আয়োজন করলে, শাস্ত্রসম্মত উত্তর দিতে আমরা প্রস্তুত। আমরা চিঠি দিয়েছি। উত্তর আসেনি।’’ তবে মমতা বলেন, ‘‘যে কেউ নিজের কথা বলতেই পারে। আমার নামেও এফআইআর করেছে। আমি পাল্টা করিনি।

এটাই মহত্ব।’’

বিতর্কের মধ্যেই আজ দিঘায় গড়াবে রথ। মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। দুপুর আড়াইটে থেকে কী ভাবে তিনটি রথ মাসির বাড়ির পথে এগোবে, সে নকশাও এঁকে দেন। ১৫ দিন পরে, বৃহস্পতিবার সকালে খুলেছে মন্দিরের দ্বার। দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মন্দিরে আসেন। কালীঘাটের বাড়ি থেকে আনা আম, পেয়ারা ও জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বস্ত্র তিনি তুলে দেন রাধারমণের হাতে। পরে রথযাত্রা সংক্রান্ত প্রশাসনিক বৈঠক সারেন।

বিগত বছরগুলিতে মমতা কলকাতার ইসকনের রথযাত্রায় উপস্থিত থেকে রথে উঠতেন। সূত্রের খবর, এ দিন বৈঠকে দিঘার রথেও তাঁকে ওঠার অনুরোধ করেন রাধারমণ। তবে রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক কর্তাদের পরিকল্পনা ছিল, তিনটি রথ পর পর নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানান, সামান্য এগিয়ে একটি মানুষের যাতায়াতের মতো রাস্তা রেখে থাকবে বলরাম ও সুভদ্রার রথ। আর দুটি রথের মাঝে সামান্য পিছনে থাকবে জগন্নাথের রথ। পরে তাঁর কথা মতো কয়েক জন আধিকারিক মন্দিরের সামনের রাস্তার মাপজোক করেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব মতো গতিপথ স্থির হয়।

বৃহস্পতিবার রাতে তিনটি রথ মন্দিরের মূল গেটের বাইরে রাস্তায় রাখা হয়েছে। আজ, শুক্রবার সকাল ৯টায় হবে ‘পাহান্ডি বিজয়’। অর্থাৎ, নাচ-গান করে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বিগ্রহ সেবায়তেরা কোলে করে রথে বসাবেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মন্দিরের পাথরের বিগ্রহগুলি আনা হবে না। রথে নিমকাঠের মূর্তিগুলি বসানো হবে। রথের জন্য মন্দির দর্শন বন্ধ থাকবে না।

আজ দুপুর ২টোয় মন্দিরে এসে মুখ্যমন্ত্রী রথের সামনে আরতি করবেন। প্রথা মতো সোনার ঝাড়ু দিয়ে তিনি রাস্তা ঝাঁট দেওয়ার পরে রথের রশিতে টান পড়বে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ইসকনের আট-দশ জন, সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের তিন জন, মাসির বাড়ির তিন প্রতিনিধি রথ টানবেন। দর্শনার্থীরা থাকবেন রাস্তার দু’ধারের ব্যারিকেডের ভিতরে। তাঁরা যাতে রথের রশি ছুঁতে পারেন, সে বন্দোবস্ত হয়েছে। পৌনে এক কিলোমিটার যাত্রাপথে মাঝে দাঁড়াবে রথ। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ রথ পৌঁছবে মাসির বাড়িতে (দিঘার পুরনো জগন্নাথ মন্দির)। এ দিন সেখানেও প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী।

দিঘার রথে লক্ষাধিক ভিড়ের আশা করা হচ্ছে। রাধারমণ বলেন, ‘‘পুরীর মন্দিরে বিদেশিদের প্রবেশাধিকার নেই। কিন্তু দিঘায় ইতিমধ্যেই এক হাজার বিদেশি ভক্ত এসেছেন। রথেও জাপান, ইউক্রেন, রাশিয়ার প্রায় ৫০ জন থাকবেন।’’ আগামীতে ইসকনের ভক্ত ফোর্ড মোটর সংস্থার কর্তা আলফ্রেড ফোর্ডেরও দিঘায় আসার কথা আছে। শুভেন্দু বলেন, “রথের রশি টানা ও পুজোয় সনাতনদের বাইরে কারও প্রবেশাধিকার নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করলেও, একে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত করতে দেব না।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

digha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy