Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাইপোর নাম নয়, মুকুলদের ছেলের কথা নেত্রীর মুখে

কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সময়ে সব চেয়ে বেশি সরব ছিলেন তিনি। এখন তাঁর বিরুদ্ধেই উঠছে পরিবারতন্ত্রকে মদত দেওয়ার অভিযোগ। ধূমকেতুর গতিতে দলে এতটাই উত্থান ঘটেছে তাঁর ভাইপো অভিষেকের যে, তাঁকে ‘যুবরাজ’ বা ‘তৃণমূলের রাহুল গাঁধী’ পর্যন্ত বলছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, দলের নেতা-নেত্রীদের ছেলেমেয়েরা যদি ‘ফুল-টাইম’ রাজনীতি করতে চান, তাতে কোনও ক্ষতি নেই।

মন্ত্রী তো কী হয়েছে! অতিথি হয়ে এসেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জন্য নিজেই চা নিয়ে হাজির উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে তৃণমূলের কর্মিসভায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

মন্ত্রী তো কী হয়েছে! অতিথি হয়ে এসেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জন্য নিজেই চা নিয়ে হাজির উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে তৃণমূলের কর্মিসভায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সময়ে সব চেয়ে বেশি সরব ছিলেন তিনি। এখন তাঁর বিরুদ্ধেই উঠছে পরিবারতন্ত্রকে মদত দেওয়ার অভিযোগ। ধূমকেতুর গতিতে দলে এতটাই উত্থান ঘটেছে তাঁর ভাইপো অভিষেকের যে, তাঁকে ‘যুবরাজ’ বা ‘তৃণমূলের রাহুল গাঁধী’ পর্যন্ত বলছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, দলের নেতা-নেত্রীদের ছেলেমেয়েরা যদি ‘ফুল-টাইম’ রাজনীতি করতে চান, তাতে কোনও ক্ষতি নেই।

কিন্তু গুঞ্জনটা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়।

বাঘা যতীন পার্কের দলীয় কর্মিসভায় এ দিন মুকুল রায়ের বিধায়ক-পুত্র থেকে শুরু করে সাংসদ সুব্রত বক্সীর ছেলের কথাও তুলেছেন মমতা। কিন্তু এক বারও উচ্চারণ করেননি নিজের ভাইপোর নাম! স্বভাবতই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, অভিষেকের আচমকা উত্থান ও ক্ষমতাবৃদ্ধিতে দলের অন্দরে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তা চাপা দিতেই কি অন্য নেতাদের উত্তরাধিকারীদেরও তুলে আনার কথা বললেন মমতা?

সারদা কাণ্ডের জেরে যাঁর ক্ষমতা খর্ব করে মমতা অভিষেকের গুরুত্ব বাড়িয়েছিলেন, নতুন প্রজন্মের কথা বলতে গিয়ে সেই মুকুল রায়ের পুত্র শুভ্রাংশুর কথাই এ দিন প্রথমে তুলেছেন নেত্রী। বলেছেন, “মুকুলের ছেলে যদি ফুল-টাইম রাজনীতি করে তা হলে ক্ষতি কী?” শুভ্রাংশু বীজপুরের বিধায়ক তথা যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি। আর দলীয় সূত্রে খবর, যুব তৃণমূলের বর্তমান সভাপতি অভিষেকের সঙ্গে নানা প্রশ্নে একাধিক বার বিরোধ হয়েছে তাঁর।

মুকুল-পুত্রের পরেই তৃণমূল রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ছেলের কথা বলেন মমতা। সুব্রতবাবুর ছেলে দিল্লিতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ছেন। মমতা বলেন, “বক্সীদার ছেলে তো অনেক পড়াশোনা করেছে। আমি বলেছি, ওঁকে রাজনীতিতে আসতে। আমাদের ভাল ছেলেমেয়েদের রাজনীতিতে দরকার।”

মমতার এই বক্তব্য প্রসঙ্গে অনেকে বলছেন, ভাল ছেলেমেয়েরা দলে এলে ভাল কথা ঠিকই। কিন্তু তাঁদেরও মাথায় রাখা উচিত, বর্ষীয়ানরা যেন তাঁদের কোনও আচরণে আঘাত না পান। উদাহরণ হিসেবে সোমবার শহিদ মিনার ময়দানে যুব তৃণমূলের সভার কথাই বলছেন অনেকে। ওই সভায় দলের বেশ কিছু প্রথম সারির নেতা উপস্থিত থাকলেও সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব পেয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক। শেষ বক্তৃতাও তিনিই দিয়েছেন। পিসির অনুপস্থিতিতে সেই সভায় আশানুরূপ ভিড় হয়নি। কিন্তু সেই সভাতেও দেখা গিয়েছে, বর্ষীয়ানদের কার্যত ‘কর্তব্য’ বুঝিয়ে দিচ্ছেন তরুণরা। এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বলছেন, ক্রিকেট হোক বা রাজনীতি নেতৃত্ব সব সময়েই অর্জন করতে হয়। অথচ সেটাই অনেক সময়ে ভুলে যায় তরুণ প্রজন্ম।

তবে সম্ভবত দলে এ নিয়ে অসন্তোষের আঁচ পেয়েই মমতা বলেছেন, “আমরা সিনিয়রদের মাথার ওপরে রেখে চলব। আমাদের দলে একটা নিয়ম আছে। দলের বয়স্কদের পরামর্শ নিয়ে এগোতে হবে।”

এ দিন কর্মিসভায় ছিলেন দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের প্রতিনিধিরা। সেখানে উপস্থিত জেলা স্তরের এক নেতা জানালেন, তৃণমূলের জনপ্রিয়তার অন্যতম দুটি হাতিয়ার ছিল দলনেত্রীর সততা ও পরিবারতন্ত্রকে প্রশ্রয় না দেওয়া। বলেই ওই নেতার আক্ষেপ, “প্রথমে সারদা-কাণ্ড ও পরে অভিষেক রাতারাতি দলের শীর্ষ পদে বসার পরে দু’টি হাতিয়ারই অকেজো হতে বসেছে।” এ দিনও অবশ্য সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে কংগ্রেসকে বিঁধেছেন মমতা। বলেছেন, “প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য হতে এখানকার প্রতিনিধিরা দিল্লিতে হোটেল ভাড়া করে বসে থাকেন। আমাদের দলে লবি নেই।”

মমতা এ কথা বললেও অবশ্য গুঞ্জনটা রয়েই যাচ্ছে। একটা নয়, দু’টো। এক দিকে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ খণ্ডন, অন্য দিকে প্রবীণদের ক্ষোভ প্রশমনের প্রয়াস।

কোন দিক সামাল দেবেন নেত্রী? দল বড় বালাই, না উত্তরাধিকার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE