সকলেই জানতেন, তিনি আসবেন বিকেল পার করে। মাইকে বারবার সে-কথা ঘোষণাও করা হচ্ছিল। কিন্তু সেই দুপুর থেকে গোটা পাড়া ঠায় দাঁড়িয়ে রাস্তায়। অপেক্ষায় ছিলেন নিমতার পাটনা-ঠাকুরতলার কুণ্ডুবাড়ির লোকজনও। সেই বাড়ির বড় ছেলে নির্মল কুণ্ডু দু’দিন আগে নিজের বাড়ির সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়ে গিয়েছেন।
উত্তর দমদম ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি নির্মলের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ। কথা বললেন পরিবারের সকলের সঙ্গে। সান্ত্বনা দিলেন। সেই সঙ্গে আশ্বাস দিলেন, নির্মলের দুই মেয়ের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
এই খুন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ, তার প্রমাণ মিলল কুণ্ডুবাড়ি থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়। মমতা বললেন, “নির্মলের পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা এবং পাড়া-প্রতিবেশীরা সকলেই খুব উত্তেজিত। সকলেই খুনিদের ফাঁসি চাইছে। আমরা সবাই চাই, প্রয়োজনীয় শাস্তি হোক। খুনিদের কোনও ভাবেই ক্ষমা নয়।” এর পরেই মমতা নিশানা করেন বিজেপি-কে। বললেন, “টাকা দিয়ে কাউকে খুন করিয়ে দিলাম। আমার কাছে এটা ইসু নয়। কিন্তু এটা কেন হবে? এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়।”
মমতা এ দিন নির্মলের স্ত্রী বর্ণালী, দুই মেয়ে রিমা ও রাইমা এবং কুণ্ডু পরিবারের অন্য সকলকে বলেন, “আপনাদের যা ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। তবে দোষীরা যাতে শাস্তি পায়, তা সরকার দেখবে।” এর পরে ওই পরিবার সম্বন্ধে খোঁজ নেন তিনি। তারা কী চায়, তা-ও জানতে চান। বর্ণালী জানান, তাঁর স্বামীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। তাঁর সংসারের কী হবে? মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর দুই মেয়ের যাতে চাকরির ব্যবস্থা হয়, সেটা তাঁরা দেখবেন। বর্ণালী জানান, তাঁদের পুরো পরিবার মমতার সঙ্গেই আছে, থাকবেও।
বর্ণালী এ দিন মমতাকে জানান, প্রধানমন্ত্রী-পদে নরেন্দ্র মোদীর শপথ নেওয়ার দিন বিজেপির লোকেরা তাঁদের বাড়ির সামনে বড় পর্দা টাঙিয়ে সরাসরি সম্প্রচার দেখানোর ব্যবস্থা করেছিল। নির্মল তাঁর বাড়ি থেকে তাদের কিছুটা সরে যেতে বলেন। তখন বিজেপির লোকেরা নির্মলকে হুমকি দিয়েছিল, সাত দিনের মধ্যে তাঁর ‘লাশ ফেলে দেওয়া হবে’। বর্ণালী বললেন, “ওরা তা-ই করল। বাড়ির সামনেই তো মেরে দিল ওকে! প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি সন্ত্রাস-বদলার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। সেটা উনি করে দেখান। এখানে বিজেপির কোনও ঠাঁই নেই।”
নির্মল-হত্যার ঘটনায় ধৃত সুমন কুণ্ডু ও সুজয় ঘোষকে বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁদের সাত দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী এই খুনের তদন্তভার সিআইডি-কে দিয়েছেন। ফলে সিআইডি আজ, শুক্রবার ধৃতদের হেফাজতে নেবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।